চার বছরের ব্যবধানে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৯২ শতাংশ

বাজেট ঘাটতি মেটাতে নিয়মিতই ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। রাজস্ব আয়ে ঘাটতির জন্য সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহে নানা উৎস থেকে ঋণ নেয়া হয়। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতি বছর ঋণ নিচ্ছে সরকার। এতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে। এর মধ্যে চার বছরের ব্যবধানে সরকারের ঋণের স্থিতি প্রায় ৯২ শতাংশ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারের মোট ঋণ ছিল আট লাখ ৭৩ হাজার ২৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ঋণ স্থিতি বেড়েছে আট লাখ এক হাজার ২৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

সরকারের ঋণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারের মোট ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাতের ছিল এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল বাবদ ঋণ ছিল ৪৪ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও ট্রেজারি বন্ডে এক লাখ ৫৫ হাজার ২৮৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ ছিল দুই লাখ ৮৯ হাজার ২৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৮৪ হাজার ৬০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

পরের অর্থবছর সরকারের মোট ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ২১ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের ছিল দুই লাখ ৭৯ হাজার ৬০১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ খাতের মধ্যে ট্রেজারি বিল বাবদ ঋণ ছিল ৬২ হাজার ৭৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ও ট্রেজারি বন্ডে দুই লাখ ১৬ হাজার ৮১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ তিন হাজার ৬৯৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণ চার লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর সরকারের ঋণ স্থিতি বেড়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৪১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ১৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছর সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়ে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ওই অর্থবছর সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছিল ১১ লাখ ৭৬ হাজার ২০৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

মোট ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাতের ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল বাবদ ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ২৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ও ট্রেজারি বন্ডে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া সুকুক থেকে ওই অর্থবছর সরকার প্রথম আট হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণ পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৬৬ কোটি ০৯ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছর সরকারের মোট ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখ ২৬ হাজার ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় রেকর্ড দুই লাখ ৪৯ হাজার ৯৪১ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। মোট ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাতের ছিল তিন লাখ ৮৯ হাজার ২৯৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল বাবদ ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ২৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ও ট্রেজারি বন্ডে তিন লাখ ১২ হাজার ২৭৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এর বাইরে সুকুক থেকে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয় ওই অর্থবছর। এতে সুকুক থেকে নেয়া ঋণ স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর ওই অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়ায় তিন লাখ ৬৫ হাজার ৫৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণ ছয় লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

এদিকে গত অর্থবছর সরকারের ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় দুই লাখ ৪৮ হাজার ১১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। মোট ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাতেরই ছিল চার লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল বাবদ ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ২৩ হাজার ৬৮০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও ট্রেজারি বন্ডে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছর সুকুক ইস্যু করে কোনো ঋণ নেয়া হয়নি।

এর বাইরে ২০২২-২৩ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৬২ হাজার ৪৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তবে বিদেশি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় আট লাখ চার হাজার ১৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।

হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, চার বছরের ব্যবধানে সরকারের ট্রেজারি বন্ডে ঋণ বেড়েছে ৭৯ হাজার ৬০৪ কোটি ছয় লাখ টাকা বা ১৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ। এই সময় ট্রেজারি বিলে ঋণ ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ১০ লাখ ৭৯৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা ১৩৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি ঋণ বেড়েছে চার লাখ ১৯ হাজার ৪১৩ কোটি আট লাখ টাকা বা ১০৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে কম বেড়েছে সঞ্চয়পত্রে ঋণ, যার পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ২১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।

sharebiz