চলতি অর্থবছর সাত মাসে আমদানি কমেছে ১৮.৩০%

সরকারের কড়াকড়ি নীতির কারণে গত অর্থবছর অক্টোবরে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এরপর থেকে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৬ মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি চলছে আমদানিতে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে আমদানি কমেছে ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি এ সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর প্রথম সাত মাসে মোট আমদানি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৮৬১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৭ দশমিক ৫৬৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সাত মাসে আমদানি কমেছে আট দশমিক ৭০৬ বিলিয়ন ডলার তথা ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে সাত মাসের মধ্যে কোনো মাসেই আমদানির পরিমাণ ছয় বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ঋণাত্মক ছিল আগস্টে। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৪৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগস্টে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। পরের মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৭৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ১৯২ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে গত নভেম্বরে দেশে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ৮৯১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৫৯২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি কমেছে এক দশমিক ৭০১ বিলিয়ন ডলার বা ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছর অপর মাসগুলোর মধ্যে জুলাইয়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ, ডিসেম্বরে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ ও জানুয়ারিতে সাত দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর জানুয়ারি মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম ঋণাত্মক ছিল।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাত মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে ৩৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে চাল আমদানি কমেছে ৯৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মূলত ধান উৎপাদনে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চাল আমদানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সামান্য কিছু সুগন্ধি চাল আমদানি হয়েছে সাত মাসে। এ সময়ে গম আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছর ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। তবে চিনি আমদানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর আমদানি বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। সাত মাসে এর আমদানি বেড়েছে আট দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে তুলা আমদানি কমেছে ৩৪ শতাংশ, সুতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ।

এর বাইরে চলতি অর্থবছর মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। মূলধনি পণ্যের মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ এবং অন্যান্য মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশ। উল্লিখিত খাতগুলোর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি কমেছে চার শতাংশ।

SHARE BIZ