- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩৮
ফুটবল পাড়ায় প্রচলিত আছে, লোকে বলে ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যেন রিয়াল মাদ্রিদের বাপ-দাদার সম্পত্তি!’ অবশ্য অস্বীকার করারও উপায় নেই, এমন ঘটনার পর অস্বীকার করা বাড়াবাড়িই হবে বটে। লিভারপুলের মতো দলের বিপক্ষে প্রথম ১৪ মিনিটেই দুই গোল হজম, সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫-২ গোলের জয়! মানতে না চাইলেও যেন তাই মানতে হয়।
যখন মনে হচ্ছিল হয়তো খেলা শুরুর আগেই শেষ হতে যাচ্ছে খেলা, রিয়াল মাদ্রিদকে চোখ রাঙাচ্ছে পরাজয়; তখনই গল্পের মাঝে পরিবর্তনের ছোঁয়া, ইতিহাস গড়ে ঘুরে দাঁড়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড ১৬ বারের শিরোপাজয়ীরা। ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা লিভারপুলকে তাদেরই মাঠেই শেষ পর্যন্ত ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত করেছে কার্লো আনচেলেত্তির দল।
মাঠে নেমে আড়মোড়া ভেঙে উঠার আগেই প্রথম গোল হজম করে বসে রিয়াল মাদ্রিদ, ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোল করেন নুনেজ। মোহাম্মদ সালাহর রক্ষণ চেড়া পাস থেকে ১-০ গোলে দলকে এগিয়ে দেন নুনেজ। সেই গোলের ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসার আগেই দ্বিতীয় গোলও হজম খেয়ে বসে আনচেলেত্তির দল, এবার গোল করেন মোহাম্মদ সালাহ।
১৪তম মিনিটে দানি কারবাহলের ব্যাক পাস পেয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবু কোর্তোয়া। তবে পাস করতে গিয়ে বলে ভুলবশত হাঁটুর গুঁতো লেগে যায় তার, তবে সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা সুযোগ সন্ধানী সালাহ ভুল করেননি বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়ান। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।
তবে ধাক্কা খেয়েই সম্বিত ফিরে পায় রিয়াল ফুটবলাররা, অন্যরা যেখানে ভেঙে পড়ার কথা, তারা সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা৷ ফলাফল আসতেও দেরি হয়নি, ২১তম মিনিটেই দলকে প্রথম গোল এনে দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। বেনজেমার পা থেকে বল নিয়ে তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বাঁকানো এক শটে চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন তিনি।
স্বল্প সময়ের মাঝেই সমতায় ফিরতে রিয়ালের সামনে সুযোগ এসেছিলো আরো বেশ কয়েকটি, তবে তা কাজে লাগেনি। তবে সেই সুযোগ করে দেন লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন বেকার৷ অনেকটা যেন কোর্তুয়াকেই অনুসরণ করলেন তিনি, ব্যাক পাসের বল ছুড়ে দিলেন ভিনিসিয়ুসের গায়ে; তবে সেখান থেকে গোল আদায়ে ভুল করেননি এই ব্রাজিলিয়ান। ভিনিসিয়ুসের জোড়া গোলে সমতায় ফিরে রিয়াল মাদ্রিদ, ২-২ গোলেই বিরতিতে যায় উভয় দল।
বিরতি থেকে ফিরে আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে রিয়ালের আক্রমণভাগ। ফলাফলও চলে আসে হাতেনাতে, মিলিতাও এগিয়ে দেন দলকে। ৪৭তম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে হেডে গোল করেন তিনি। সেই গোলের উৎসব মুছে যাবার আগেই দৃশ্যপটে উঠে আসেন করিম বেনজেমা, রিয়াল মাদ্রিদের ৫ গোলের শেষ দুটোই করেছেন তিনি।
৫৫ মিনিটের মাথায় বেনজেমার শট লিভারপুল ডিফেন্ডার গোমেজের পা ছুঁয়ে খুঁজে নেয় জাল, কিছুই করার ছিল না এলিসনের। ৬৭তম মিনিটে আরো একটি পরিকল্পিত আক্রমণের সুফল পায় রিয়াল, মাঝ মাঠ থেকে লুকা মদ্রিচ বল বাড়ান ভিনিসিউসের দিকে, ভিনিসিউস খুঁজে নেন বেনজেমাকে, আর বেনজেমা খুঁজে নেন লিভারপুলের জাল। ফলে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে যায় ৫-২ গোলে, শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই জয় পায়।
অথচ ম্যাচের আগের রাতে সফরকারী রিয়াল মাদ্রিদের হোটেলের সামনে রাতভর আতশবাজি ফাঁটায় লিভারপুল সমর্থকেরা। যেন রিয়াল ফুটবলারদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে আর খেলায় ক্লান্তি আসে! শেষ পর্যন্ত অবস্থা নাজুক দেখে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আগামী ১৬ মার্চ ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে উভয় দল।