কিছুদিন আগেই জঘন্য পারফরম্যান্সের মাশুল দিয়ে আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে ঘানা। ভাঙা হৃদয় নিয়ে ঘানার কোনো সমর্থক যদি গত রাতে ম্যানচেস্টার সিটি বনাম সাউদাম্পটনের ম্যাচ দেখে থাকেন, বেদনা আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে নিশ্চিত। নিজেদের মাঠে সিটিকে ১-১ গোলে আটকে দিয়েছে সাউদাম্পটন। আর সেটা যে এক ঘানাইয়ানের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
ডি ব্রুইনা, গ্রিলিশ, স্টার্লিং, ফোডেনরা থাকা সত্ত্বেও সিটি যে একটার বেশি গোল পেল না, তার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মোহাম্মদ সালিসুর। ভদ্রলোক ঘানার ডিফেন্ডার।
ফেডারেশনের সঙ্গে মনোমালিন্য থাকার কারণে এবার আফ্রিকান নেশনস কাপে খেলতে যাননি। সেই সালিসুর ওপর যেন গত রাতে ভর করলেন খোদ ভার্জিল ফন ডাইক। বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডার হয়ে গেলেন যেন এই ঘানাইয়ান। ডি ব্রুইনা-গ্রিলিশদের একের পর এক আক্রমণ সাউদাম্পটনের ডি-বক্সে আছড়ে পড়লেও যোগ্য নাবিকের মতো সে ঝড় সামলেছেন সালিসু। আর তাতেই প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে মহামূল্যবান এক পয়েন্ট পকেটে পুরেছে সাউদাম্পটন।
আগে খেলতেন রিয়াল ভায়াদোলিদে। সেখান থেকেই প্রতিভার ছটায় নজরে আসেন লাইপজিগের মতো ক্লাবগুলোর। শেষমেশ পাড়ি জমান সাউদাম্পটনে। সাউদাম্পটনের জার্মান কোচ রালফ হাসনহাটল কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন, প্রতিভার বিচারে সাউদাম্পটনেরই সাবেক ডিফেন্ডার ফন ডাইককে ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব নয় সালিসুর পক্ষে। সালিসু নিজেও ফন ডাইকের মতো হতে চান বলে এর আগে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
তবে শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ করার একটা ব্যাপার থাকে। সেটা প্রমাণ করার জন্য ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচটাকেই যেন বেছে নিলেন সালিসু। ম্যাচের সাত মিনিটের মাথায় ইংলিশ রাইটব্যাক কাইল ওয়াকার-পিটার্সের গোলে এগিয়ে যায় সাউদাম্পটন। মাঠের ডান দিক থেকে উইঙ্গার নাথান রেডমন্ডের বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে ডি–বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এদেরসনকে পরাস্ত করেন ওয়াকার-পিটার্স।
এরপরই শুরু হয় সালিসু-কাব্য। গোটা ম্যাচের ৭৬ শতাংশ সময় নিজেদের পায়ে বল রেখেছেন ফোডেন-গ্রিলিশরা, গোল বরাবর শট মেরেছেন ২০টি। কর্নার নিয়েছেন ১১ বার। কিন্তু একবারের বেশি সাউদাম্পটনের গোলমুখ খুলতে পারেননি। সে একবার গোলমুখ খুলেছেও এক ডিফেন্ডারের বদৌলতে। ৬৫ মিনিটে ডি ব্রুইনার ফ্রি কিকে মাথা ঠেকিয়ে দলকে সমতায় ফেরান ফরাসি ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত।
ব্যস, ওই একবারই। এর চেয়ে বেশিবার বল নিজেদের জালে ঢুকতে দেননি সালিসুরা। সালিসু নিজে ১৪ বার বল ক্লিয়ার করেছেন বিপজ্জনক জায়গা থেকে, তিনবার গোলমুখী শট আটকে দিয়েছেন, চারবার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন। সাতবার ট্যাকল করেছেন। কেউ বল নিয়ে ড্রিবল করে সালিসুকে পার হয়ে যেতে পারেননি গোটা ম্যাচে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এত কিছু করার পথে একবারও সিটির কাউকে ফাউল করেননি সালিসু।
ড্র করলেও প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থান হারায়নি সিটি। ২৩ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরেই আছে তারা। দুই ম্যাচ কম খেলে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে লিভারপুল। আজ ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে নামবে লিভারপুল।