গেরুয়াধারীদের হিজাব যুদ্ধ

 

 

 By নিজাম দস্তগীর[1]

19 February 2020

“মনে হবে যেন এই মুহূর্তে মেয়েদের মাথার এক টুকরো কাপড়ই ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা !”

কার্ল মার্ক্স নাকি বলেছিলেন স্টুপিডিটি মানব জাতির ইতিহাস পরিবর্তনে একটি বড় নিয়ামক ছিল l হিজাবের বিরুদ্ধে ভারতের বীর পুঙ্গবদের যুদ্ধ দেখে তাই সত্যি বলে মনে হয় l

ভাইরাল হওয়া ভিডিও গুলোতে দেখা যাচ্ছে – একটি মুসলিম ছাত্রী স্কুলে ঢুকছে আর তার চার পাশে অন্তত একশজন বীর পুরুষ গেরুয়া হাতে হম্বি তম্বি করে নর্তন কুর্তন করছে, স্কুলের  শিক্ষকরা জোর করে ছাত্রীদের, এমনকি শিক্ষিকাদের হিজাব খুলে দিচ্ছে – কারন নাকি এটি ধর্মীয় সিম্বল l

মনে হবে যেন এই মুহূর্তে মেয়েদের মাথার এক টুকরো কাপড়ই ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা !

হিজাবের বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিকদের যুদ্ধ নতুন কিছু নয় l আলজেরিয়ায় উপনিবেশিক ফ্রেন্স জেনারেলরা রীতিমত এটাকে ভয় করত, বলত- The one who sees without being seen (যিনি দেখেন কিন্তু নিজেকে দেখতে দেন না) !

অথচ এটা কোন ধর্মীয় সিম্বল নয় l গেরুয়া কাপড় পরাটা একটি ধর্মীয় সিম্বল হতে পারে; তেমনি মাথায় পাগড়ি পরা বা টুপি দেয়া, টিকি রাখা বা হাতে শাঁখা, চুড়ি পড়া এবং মাথায় সিঁদূর দেয়া – এগুলি ধর্মীয় সিম্বল l কেননা এগুলি কোন প্রাক্টিকাল প্রয়োজনে নয়, শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতির জন্য ব্যবহার করা হয় l

সেই তুলনায় মাথায় কাপড় দেয়াটা অনেকের জন্য একটা প্রয়োজন l যেমন প্রয়োজন লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় পরা – কেউ স্বল্প বসন পরে, আর কেউ অনেক বেশী লম্বা কাপড় পরে থাকে l যে স্বল্পবসনা তার কি অধিকার আছে অন্যকে বাধ্য করে সল্পবসনা করার ? তেমনি যে মাথায় কাপড় দেয় না, সে অন্যকে বলতে পারে না, কেন সে মাথা আবৃত করে রাখে ?

ইসলামে পুরুষ এবং মহিলাদের শরীর ঢেকে রাখার আলাদা অনুশাসন আছে । তারই একটি অংশ মেয়েদের মাথা আবৃত করা l  কোন মহিলা নিজেকে মুসলমান হিসেবে দেখাবার জন্য মাথায় কাপড় দেয় না l এটা তাঁর শালীনতার অংশ মাত্র, ধর্মীয় সিম্বল নয় l স্কুলের ইউনিফর্মের নাম দিয়ে এটা বন্ধ করার অধিকার কারো নেই l

মডেস্টি বা শালীনতার জন্য মুসলমান ছাড়াও অনেকেই মাথা আবৃত করে রাখে l ইউরোপের মানুষের পুরুনো ছবি দেখলেই দেখা যাবে অনেক মহিলাই, বিশেষত খ্রিস্টান এবং ইহুদি মহিলারা মাথায় কাপড় দিত; এখনও অনেকেই দিয়ে থাকে l

.

একত্ববাদ বিশেষত ইসলামিক একত্ববাদের একটি অন্তর্নিহিত অসাধারন শক্তি আছে l তার জোরেই তুর্কি আর মোঙ্গলদের উত্তরসূরীরা ইউরোএশিয়া থেকে এসে ভারতবর্ষ দখল করে কয়েকশ বছর শাসন করেছিল l যদিও তাঁরা বাস করতে এসেছিলেন, ইংরেজদের মত উপনিবেশ  তৈরী করে শোষণ করতে আসেন নি l

তাঁদের নেতৃত্বে ভারতের সব ধর্মের মানুষ তৈরি করেছিলেন সমৃদ্ধশালী ভারতবৰ্ষ যা সমসাময়িক বিশ্বে ছিল শ্রেষ্ট l

আরএসএস আর বিজেপির  চেলারা মুসলমান মেয়েদের মাথার কাপড়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যদি মনে করে তারা ইসলামকে বিলোপ করতে পারবে – তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে l

মাত্র গত শতাব্দীতেই সোভিয়েত সাম্রাজ্যে ৭০ বছরের নির্যাতন নিস্পেষনেও ইসলামী বিশ্বাসের মৃত্যু হয় নি। যখন গোটা বিশ্বে মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ ধর্মহীন বিপ্লবের সুনামী তৈরী করেছিল, তখনো ইসলামী বিশ্বে যথেষ্ট দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও সর্বহারার ধর্মহীন হাতুড়ি-কাস্তের পতাকা মুসলিম মানসকে দখল করতে পারে নি l কারণ শ্লোগান আর সিম্বলে নয়, ইসলামী একত্ববাদের শক্তির উৎস আরো অনেক উঁচুতে l

সংখ্যালঘুদের অনবরত অত্যাচার নির্যাতন করলে কী পরিণতি হয় তার প্রমাণ খুঁজতে বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই l ঘরের পাশের দেশ মিয়ানমার এসব করে এখন আত্মঘাতি গৃহযুদ্ধের অতল গহ্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে l

আমার এক ভারতীয় সহকর্মী ডাক্তার বলেছিলেন তাঁদের দেশের ২৫% জায়গা মাওবাদীদের দখলে যারা সরকারের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত l

ঘরে বাইরে ভারত আর কত শত্রু তৈরি করবে ?

ভারতের উচিত তাদের সংখ্যালঘু নাগরিকদের সাথে নিয়ে ভবিষ্যতের অমিত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া l দেশের বিশ শতাংশ জনসংখ্যার সাথে অন্তর্কলহে যুক্ত হয়ে তাদের উচিত নয় দেশটাকে মিয়ানমার করে তোলা, যে মিয়ানমার এখন হয়ে উঠেছে ‘a nation at war with itself’ (যে জাতি নিজের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত) l

অস্ট্রেলিয়া

১৯/০২/২০২২

Published in Advance Bangladesh, a restricted Facebook Group

[1] Dr. Nizam Dastagir is a practising physician, based in Brisbane Australia