সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এরশাদ পতন আন্দোলনের সময় গোলাগুলি হয়নি। এখন গোলাগুলি হচ্ছে। সুতরাং আমরাও ভিন্ন প্রক্রিয়া নেব।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা গুলি খাওয়া শিখে গেছে। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নাই। প্রয়োজনে বুক পেতে দেব। গুলি খাব। কিন্তু রাজপথ ছেড়ে যাব না। এই সরকারের পতন পর্যন্ত রাজপথে থাকব।’
বিএনপিকে সমাবেশ করতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এমন একটা অবস্থা করব ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে মিছিল–মিটিং হবে। আপনাদের ঠেকানোর ক্ষমতা থাকবে না। আমরা দেখব আপনাদের পুলিশ কয়জন আছে, আর আমাদের কর্মী কতজন আছে।’
এ প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘প্রতিটি গলিতে মিছিল–মিটিং হবে। যদি গুলি করতে উদ্যত হয়, যদি কেউ গুলি করতে চায়, তাকে আমরা ছাড় দিয়ে কথা বলব না। শাওন, রহিম ও নূরে আলম আত্মাহুতি দিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে বহু মানুষের স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। আমরাও দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত।’
সামনে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বয়স তো হয়েছে অনেক। আর কদিন বাঁচব। না বাঁচলেও অসুবিধা নাই। কিন্তু আমাদের সন্তানদের জন্য একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ তৈরি করে যেতে চাই। কোনো পরিস্থিতিতেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই হায়েনার হাতে রেখে দেওয়া যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারত বুঝে গেছে এই প্রধানমন্ত্রীর কোনো দাম বাংলাদেশে নাই। এই সরকারকে বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করে না।’ সরকার মনে মনে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সাপ তখনই ছোবল দেয়, যখন সে ভয় পায়। ভয় না দেখালে সাপ ছোবল দেবে না। একই অবস্থা আওয়ামী লীগের, সাপের মতো। তারা ভয় পেয়েছে। তাই ছোবল দিচ্ছে।
বিএনপির মিছিল আর বন্ধ হবে না বলেও জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এই যে শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগপর্যন্ত এই মিছিল আর বন্ধ হবে না। এই যে মামলা–মোকদ্দমা–গোলাগুলি এত সহজে আমরা ছেড়ে দেব না।’ রাজপথ দখল করার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা কোনো গোলযোগ চাই না। কিন্তু আওয়ামী লীগ পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়।’ আওয়ামী লীগ পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করলেও পুলিশ সদস্যদের গুলি না চালানোর অনুরোধ করেন তিনি।
বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিল করে উল্লেখ করে আবদুস সালাম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের যে পুলিশ গুলি করেছে, তার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই হবে। কেউ তাঁকে রক্ষা করতে পারবে না। আর ভোলাতে যে খুন করেছেন, তারও কিন্তু রক্ষা নাই।’
গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে বলেও দাবি করেন আবদুস সালাম। তিনি বলেন, কেউ আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে পারবে না।
একই অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ বলেন, যাঁরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুলি করেছেন, তাঁদের বিচার এই বাংলাদেশেই হবে। প্রয়োজনে রাজপথে শহীদ হবেন, এরপরও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে দেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন এই নেতা।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তিন নেতা-কর্মী নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীর ১৬টি জায়গায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তৃতীয় দিনের মতো সমাবেশ করেছে দলটি। গত শনিবার পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর অঞ্চলে বিএনপির সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গতকাল সমাবেশ হয়েছে উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরা পূর্ব থানার আয়োজনে। আজ সমাবেশ হয়েছে রমনা ও শাহবাগ থানার নেতা-কর্মীদের নিয়ে।
বেলা তিনটায় এই সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন ইউনিটের নেতা–কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।