মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। কারন উগ্রবাদ আজ বিশ্বজুড়ে জাকিয়ে বসেছে। পপুলার ভোট এবং ইলেকটোরাল ভোট উভয় দিক থেকে জয়ী হবার পরও ট্রাম্প কিছুতেই জো বাইডেনকে স্বীকার করতে প্রস্তুত নন। অথচ,এই লোকটি যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেখানে শুধু ইলেকটোরাল ভোটের মাধ্যমেই জিতেছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন ত্রিশ লাখ পপুলার ভোটে। এর কারন একটাই ব্যবসায়ী যখন রাজনীতিবিদ হন,তখন কিছুতেই সে রাজনীতি বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিজের পরাজয় মেনে নিতে চায় না। নির্বাচনে জেতার জন্য নিজ দেশে দাঙ্গা এবং করোনাকালীন সময়ে আশ্চর্যজনক ভুমিকা নিয়েছেন যাতে করে আজো সেই ধাক্কা আমেরিকা সামলাতে পারে নি। প্রতিনিয়তই কমছে ডলারের দাম। এমনকি নির্বাচনে জেতার জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদের মুখপাত্র অথবা প্রধান আকর্ষন নরেন্দ্র মোদিকেও ব্যবহার করতে কুন্ঠাবোধ করে নি। তবুও আমেরিকার জনগনকে অভিনন্দন জানাই অনেক দিন পর হলেও উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিকদের বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য।
এদিকে আবার ভারতের পশ্চিম বাংলায় ২০২১ এ বিধান সভার নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হবার জন্য যেকোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে কুন্ঠাবোধ করছে না। সে হোক দল ভাঙ্গানো, জোট ভাঙ্গানো বা উগ্রবাদের বিষবাস্প ছড়ানো। এখন পর্যন্ত অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিজেপি সত্যিই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার কাছাকাছি। যদি না মমতা ব্যানার্জী তার নির্বাচনী কৌশল সঠিকভাবে গ্রহন করতে না পারেন। আমি পুর্বেও বহুবার লিখেছি বিজেপি মানে বাঙালী নয়, বিজেপি মানে হিন্দি সংস্কৃতির শাষকদের সারা ভারতবর্ষ শাসন করার একটা মঞ্চ। আবার অন্যদিক দিয়ে দেখলে ভারতের কংগ্রেস তার দলের ভিতরে গনতন্ত্রহীনতার কারনে দলটি নিজের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য থেকে যেমনি ভাবে ভুলন্ঠিত ঠিক তেমনি ভাবে অন্যান্য বিরোধী দলগুলো কোন ধরনের ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা নিতে পারছে না। সে হোক বাঙালী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন অথবা নাগরিক সংশোধনী আইন কিংবা কোন রাজ্যের উপরে সংসদে সংখ্যাগরিষ্টতার দোহাই দিয়ে ন্যায়হীন,নীতিহীন সিদ্বান্ত চাপিয়ে দেয়া। বিশ্ববাজারে রাজনৈতিক ডামাডোলে ভারত কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউ থেকে সমর্থন পাচ্ছে চীনের সাথে তার সীমানা দখল ইস্যু নিয়ে। যদিও চীন আজ অনেক শক্তিশালী। সে হোক সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি বা ব্যাপ্তির ক্ষেত্রে। আঞ্চলিকভাবেও তারা ভারত থেকে এগিয়ে থাকা একটি দেশ,যা চীনকে কিছুটা হলেও ভারতের চেয়ে এগিয়ে রাখবে যে কোন পরিস্থিতিতে। তাই ভারতের বাঙালীর কাছে আমার অনুরোধ,তারা যেন তাদের জাতিসত্বার হিসেবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সঠিক সিদ্বান্ত নিতে পারে। একই সাথে মমতা ব্যানার্জীর কাছে আমার অনুরোধ,যদি সম্ভব হয়,পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং সিপিআইএম সহ প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনী জোট তৈরী করুন,অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।
অনেক বার অনেক মন্ত্রী অনেক সচিব কথা দিয়েছিলেন আমার দেশের সীমান্তে আর কোন গুলি হবে না। কিন্তু, ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস আজো আমার দেশের সীমান্তে আমার দেশের নাগরিকদের হত্যা করা হয় কোন রকম আর্ন্তজাতিক আইনের তোয়াক্কা না করেই। একদিকে দেশের ভেতরে হতে হয় খুন অথবা গুম,যদি আমি প্রতিবাদ করি,লুটেরাদের বিরুদ্ধে। অথবা আমার দেশের ভেতরে কাজ করতে গিয়ে খুন হতে হয় অন্য দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে। স্বাধীনতা তুমি এতই কি কঠিন,একবার দেখা দিয়ে চলে গেছো বহু দুরে, কবে আসবে তুমি?
আবার এরই মধ্যে দেখলাম বার্মার বাহিনীও সীমান্তে গুলি করতে শুরু করেছে। গুলি করে হত্যা করেছে বাংলাদেশীকে। অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে কারণ খোজার চেষ্টা করেছি, সেখানে দেখতে পাই আমার দেশের সবকিছু সুন্দরভাবে চললেও রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটা সবকিছু থামিয়ে দেয়। সে ধরা যাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনীতিবিদদের চেয়ে বাংলাদেশের আমলারা নাকি বিদেশে বেশি টাকা পাচার করেছেন। তাহলে স্বভাবতই আমার প্রশ্ন,যতগুলো স্পর্শকাতর বিষয় উঠে এসেছে এবং দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তাদের বিচার কবে হবে?
আর সামরিক বাহিনীর প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ,বর্তমান সময়ে আপনাদের জন্য বরাদ্দকৃত সুযোগ সুবিধা কোন অংশেই কম নয়। তাই এবার নিজেদেরকে প্রমান করুন,বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আছে। যার দিকে তাকিয়ে যে কোন পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশের সীমান্তে নতুন করে হত্যা,নিপীড়ন করতে দুঃসাহস দেখাবে না।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলায়তনের মধ্যে কিছুসংখ্যক তরুণ তুর্কি সপ্ন নিয়ে, বুকের ভেতর অদম্য শক্তি ও সাহস নিয়ে কথা বলছে,অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য। এমনকি তারা দেশের বাইরে বিদেশেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আর এ সমস্ত কার্যক্রমের মধ্যমনি হলেন ডকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। আমি তার আহব্বানে সাড়া দিয়ে কাজ করার চেষ্টাটুকু করছি,দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য। আমি আজ অনুরোধ করছি বাংলাদেশের প্রবাসীদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট,বিদেশে অবস্থানকালে যেকোন বাংলাদেশীর লাশ দেশে নেবার জন্য যে আইনটি তা কার্যকর করার জন্য। অন্যথায় হেরে যাবে বাংলাদেশ, হেরে যাবে মনুষত্ব। ভেঙ্গে যাবে প্রবাসীদের হৃদয়। তাই দল মত নির্বিশেষে করোনাকালীন দুর্যোগের সময়েও রেমিটেন্স যোদ্ধারা যে অবদান রাখছেন,অন্তত সেটার মূল্যায়ন করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার একটু সুনজরই পারে এ সমস্যার সমাধান করতে, যাতে সকল প্রবাসীর আনন্দ অশ্রু ঝরে পড়বে। প্রবাসীরা শাস্তিতে থাকুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।
লেখক-বিপ্লব কুমার পোদ্দার,লন্ডনে বসবাসরত আইনজীবী ও সমাজকর্মী।