গণসমাবেশকে বানচাল করতে বিএনপি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ : রিজভী

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:২৩, আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:২৮
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে রিজভী কথা বলছেন। – ছবি : নয়া দিগন্ত

১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশকে বানচাল করতেই সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘তবে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে যতই নীলনকশা করা হোক, বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে নয়াপল্টনের গণসমাবেশ সাফল্যমণ্ডিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘আজ মাগরিবের পরপরই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুস্কৃতিকারীরা। এটি আওয়ামী সরকারের নির্দেশিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যৌথ প্রযোজনা। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিতব্য গণসমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশের একটা মাস্টারপ্ল্যান।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নয়াপল্টনে যারা জমায়েত করবে, তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। সুতরাং এই গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট তৈরি করার জন্যই এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন সন্ত্রাসের সূত্রপাত করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার টিকে থাকার জন্য মরণকামড় দিতে চাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মানুষের মনের কথা উপলব্ধি করতে পারছে না। জনগণ এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, রক্ষা পাবে বাংলাদেশ’।

রিজভী বলেন, ‘পুলিশের আইজি বলেছেন, বিএনপিকে যেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে, সেখানেই সমাবেশ করতে হবে। অর্থাৎ পুলিশ প্রধান আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই কথাবার্তা বলছেন। তিনি কোনো ন্যায় নীতির পরোয়া করছেন না। নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী দুঃশাসনের সেবক হিসেবে তিনি কাজ করছেন। সেজন্য নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে পরিকল্পিত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গণগ্রেফতারের অভিযান চালানো হচ্ছে। দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী নিরপেক্ষতা হারিয়ে বিরোধী দল দমনের এক ভয়ঙ্কর নিপীড়নযন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস আর মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘ করেছে শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কারণেই দেশব্যাপী জনমানসে এক শূন্যতাবোধ তৈরী হয়েছে। এরা গুম-খুনের কর্মসূচিকে নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়ন করে মানুষের স্বাধীন কণ্ঠকে স্তব্ধ করে যাচ্ছে। এদের দ্বারাই শেখ হাসিনা দেশের ওপর দখলদারি বজায় রেখেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিকে পণ্ড করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে দমননীতি প্রয়োগ করে যাচ্ছে, তাতে তারা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রবঞ্চনা ও কপটতার আশ্রয় নিয়ে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে তার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করা যায় না। প্রতিনিয়ত আগুন সন্ত্রাসের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ ধরণের ঘটনা যে সরকারি গোয়েন্দা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল, সেটি ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল গৌরবোজ্জল অর্জনকে ম্লান করে শেখ হাসিনা দেশকে অন্তহীন শূন্যতার পথে চালিত করছে। অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা আর ছলনার আশ্রয় নিয়ে গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করে ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার স্বপ্ন নিয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাজিয়েছেন। কয়েক দিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আপনি তো জনগণকেই ক্ষমতাচ্যুত করেছেন তাদের নাগরিক অধিকার ও ভোট কেড়ে নিয়ে। বাকশালের মরণরোগের পুনর্মুদ্রণ করে আপনি জনগণকেই লোহার শিকলে বন্দী করে রেখেছেন। আর এজন্যই ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি’র গণসমাবেশকে নিয়ে নানামুখী চক্রান্তে মেতে উঠেছেন।

দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও লালবাগের সাবেক কমিশনার মোশারফ হোসেন খোকনকে আজ সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে।

গত তিন দিনে ৭৮৩ জনের অধিক দেশব্যাপী গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।