নতুন নির্বাচনের জন্য বিএনপি আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এটা তো বিএনপি’র সিদ্ধান্ত নয়, দেশের জনগণের সিদ্ধান্ত। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি ভোটারহীন অবস্থায়, অধিকারহীন অবস্থায়, সমস্ত সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক অধিকারহীন অবস্থায় আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করবে, নাকি করবে না। এটা কি একদলীয় শাসন চলবে, না বাংলাদেশের জনগণের শাসন চলবে।
আমরা রাজনীতিবিদ হিসেবে জনগণের স্বার্থের জন্য, অধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাবো। এটা ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই না, এটা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াই।জনগণের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের লড়াই চলবে। গণতন্ত্রের এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হয়, বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই অব্যাহত থাকবে। এটা কোনো ব্যক্তির লড়াই নয়, এটা বিএনপি’র জেতা-হারার লড়াই নয়, এটা বাংলাদেশের মানুষের লড়াই। স্বাধীনতার লড়াইয়ে যেভাবে জিতেছি, এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে।
২৮শে অক্টোবর লাখ লাখ মানুষের গণতান্ত্রিক সমাবেশ পুলিশি হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এই সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে অধিকার আদায় করা সম্ভব হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, পুলিশ মারবে বলে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে এটা তো দুনিয়ার ইতিহাসে নেই। পুলিশ মেরেছে, হত্যা করেছে, গুম করেছে, খুন করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, জেলে নিয়েছে, নিপীড়ন হয়েছে। এর কারণে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক লড়াই বন্ধ হয়ে যাবে- এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এটা মানুষের অধিকারের প্রশ্ন। সেখানে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি’র ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। সরকার ভোটের হারের যে হিসাব দিচ্ছে সেটা মানুষ বিশ্বাস করে না। কেউ যদি বলে- কারও কাজ শেষ হয়ে গেছে, সফলতা লাভ করেছে, এটা তো আর সফলতা হতে পারে না। মানুষের রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে নিয়ে।
আমীর খসরু বলেন, দিনশেষে সব সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ নেবে। জনগণ তার অধিকার আদায়ের জন্য বদ্ধপরিকর। তারা গায়ের জোরে, নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন-হত্যা, মিথ্যা মামলা দিয়ে কতোক্ষণ রাখতে পারবে- তা সময়ই বলে দেবে। তবে কোনো দেশেই এটা দীর্ঘ সময় কাজ করেনি। একটা সময় পর্যন্ত কাজ করে, এরপর আর কাজ করে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে মৌলিক অধিকারের জন্য। এই স্বাধীনতা কি বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? তারা সেটার জন্য লড়ে যাবে। আমরা আজকে আছি, কাল থাকবো না। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন তো থেমে থাকবে না।
৭ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর পশ্চিমা বিশ্বের নীরব ভূমিকার বিষয়ে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির এই সভাপতি বলেন, আপনার রাজনীতি আপনাকে করতে হবে। কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে বাইরের থেকে কে কি করবে- এটাতে বিএনপি বিশ্বাস করে না। তারা হয়তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণকে উৎসাহিত করবে। কিন্তু এটা তো মূল রাজনীতি হতে পারে না। মূল রাজনীতি হলো- বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে আপনার রাজনীতি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে তাদের অবস্থান এখনো বদলায়নি। কোনো দেশের একটি দল যদি জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে থাকে তারা তো এখানে এসে যুদ্ধ করবে না। বর্তমান সরকারকে ভারত, চীন, রাশিয়ার সমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা বাংলাদেশের মানুষ বিবেচনা করবে। সম্পর্ক হচ্ছে একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের মানুষের। কোনো দেশ যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সত্যিকারের কোনো সম্পর্ক হতে পারে না। এটা এক ধরনের কৃত্রিম সম্পর্ক। এই সম্পর্ক দীর্ঘায়িত হতে পারে না।
manabzamin