গণতন্ত্র মঞ্চের মতবিনিময়: কোনো দল প্রমাণ করতে পারেনি, তাদের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে

মতবিনিময় সভায় বলা হয়, স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে যে সরকারই ক্ষমতায় যায়, তারা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এই স্বৈরাচারী সরকারের আওতায় মদদে কিছু মানুষ লুটের মাধ্যমে অতি ধনী হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্বৈরাচারী সরকারের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সুবিধাভোগী দেশি-বিদেশি অতি ধনীরা মরিয়া হয়ে ওঠে অগণতান্ত্রিক সরকারকে টিকিয়ে রাখতে।

স্বাধীনতার পরও গণতন্ত্রের লড়াই শেষ হচ্ছে না উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ৫০ বছরে একটা সূত্র দেখা যাচ্ছে, কোনো রাজনৈতিক দল প্রমাণ করতে পারেনি যে তারা ক্ষমতায় থাকলে তাদের অধীনে নির্বাচন হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হয়। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শুধু সেই কয়টা, যখন অন্য আরেকটা সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকার নির্বাচিত নয়, মনোনীত।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু চারদিকে আমরা অবনতি দেখতে পারছি। আমরা মহাসংকটের মধ্যে আছি। এই সংকট কারও একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। সম্মিলিতভাবে এর সমাধান করতে হবে। এ জন্য একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐক্য প্রয়োজন। যার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটবে। এ জন্য কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যথেষ্ট নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথের সূচনা হতে পারে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি না, তা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সুশাসন, অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর। তাই কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার করতে হবে। ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সনদ করতে হবে। যা ক্ষমতায় যাওয়ার পর ওই সরকার মেনে চলবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, যারা ক্ষমতায় যায়, তারাই স্বৈরাচারী হয়। কারণ, এখানে যে ক্ষমতাব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, সেটা স্বৈরাচারী ক্ষমতাকে বারবার জন্ম দেয়। এই ক্ষমতাকাঠামোতে ন্যূনতম জবাবদিহি নেই। সব ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে। যিনিই প্রধানমন্ত্রী হন, তাঁর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েছে যে রাষ্ট্র, ১৯৭২ সালে সংবিধানে এই ক্ষমতা রাখা হলো। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংবিধানের ক্ষমতাকাঠামো পরিষ্কারভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক প্রমুখ।