- ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
- ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৪, আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২০
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় রাজপথেই ফয়সালা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি দলীয় নারী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) নয়া দিগন্তকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিএনপির সামনে তিনটি পথ। একটি হলো- আইনি পথে মোকাবেলা করা। আইনের দিকে তাকালে দেখা যায়, জামিনের সকল শর্ত পূরণ করলেও চেয়ারপারসনের জামিন হচ্ছে না। যে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছে এ ধরনের মামলায় হরদম জামিন হয়, কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি। সুতরাং বিচার বিভাগ যে সম্পূর্ণ নির্বাহী বিভাগের অধীনে চলে এটা প্রধান বিচারপতি সিনহার ঘটনা থেকে পরিষ্কার। আর বাকি থাকে ৪০১ ধারা কিংবা রাজপথ। ৪০১ ধারায় আবেদন করা হয়েছে এবং বারবার সরকারের কাছে বলা হয়েছে মানবিকভাবে বিষয়টি দেখার জন্য। এবং অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যেন দেশের বাইরে যেতে দেয়া হয়, সেটার জন্য বারবার বলা হয়েছে। সেটা সরকার কর্ণপাত করছে না। আমাদের হাতে এখন রাজপথ খোলা আছে এবং রাজপথেই বিষয়টা ফয়সালা হবে।’
সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে কেন বিদেশে যেতে দিচ্ছে না বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সরকার ভীতু, গত তিন বছর তিনি সরকারের হেফাজতে আছেন। যে মানুষটি হেঁটে গাড়িতে উঠল, কারাগারে গেল সেই মানুষটি এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। তার উপরে তিন বছরে কী নির্যাতন হয়েছে আমরা জানি না। সেটা সরকারকে জবাব দিতে হবে। এছাড়া ওনার ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসের সমস্যা ছিল, কিন্তু লিভারের সমস্যা কোনোদিন শোনা যায়নি। ওনার হঠাৎ করে লিভার সিরোসিসের মতো এত বড় একটা সমস্যা হয়ে গেল কি করে! এবং সে সময় হলো যখন তিনি সরকারের হেফাজতে। সুতরাং তিনি বাইরে গেলে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের হয়তো এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। আর জিয়া পরিবারের ব্যাপারে সরকার সবসময় ভীতু। সরকার দু’জনকে খুব ভয় করে- একজন বিএনপি চেয়ারপারসন আর অন্যজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাই বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না।’
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টকে কেন্দ্র করে নতুন করে লকডাউনের গুঞ্জনের বিষয় তুলে ধরে বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সরকারকে একটা কথাই আমি বলব, লকডাউন দেয়ার আগে আপনি প্রান্তিক মানুষের কথা মাথায় রাখবেন। করোনা আগে যেখানে আমাদের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল সেটা করোনার পরে এখন ৫০ শতাংশে গিয়ে উপনীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশের অর্ধেক মানুষ তথা আট থেকে সাড়ে আট কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এটা আমার কথা না, এটা গবেষণা সংস্থাগুলোর কথা।’
তিনি বলেন, ‘করোনাকালে প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ আমরা দেখি নাই। যে আড়াই হাজার টাকা সরকার দিয়েছে সেটা একেবারেই অপ্রতুল। দিনের পর দিন লকডাউন যদি চলে তাহলে তা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যারা তারা সাফার করে।’
এসময় তিনি আরো বলেন, রিকশাওয়ালা, ছুটা বুয়া, গার্মেন্টস শ্রমিক, ভ্যানে সবজি বিক্রেতারা তাদের নিয়ে সরকারকে কখনো খুব উদ্যোগী দেখি না আমরা। সরকার তেলে মাথায় তেল দেয়। সরকার বড় বড় ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালকে প্রণোদনা দেয়, একেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সরকারের কোনো সহযোগিতা থাকে না।
আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দেশ থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয় তুলে ধরে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি যে এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এই দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়। সরকার সবসময় এগুলো অস্বীকার করেছে। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে এসব প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র সম্মেলন হয় অথচ বাংলাদেশ সেখানে আমন্ত্রণ পায় না। বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছে মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ। আমরা যেটা বলছিলাম, মানুষের ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছে, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার নেই, আইনের শাসন নেই, সুবিচার নেই- এগুলো এখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত।’
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপির পালন করা কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমি বিশ্বাস করি বিএনপির হারানোর কিছু নেই। গত ১২ বছরে বিএনপির চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকার যেভাবে নির্যাতন চালিয়েছে এবং বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার যত রকমের ষড়যন্ত্র করেছে তার সবগুলো মোকাবেলা করে বিএনপি একটা শক্তিশালী অবস্থানে আসছে। এখন আর বিএনপির হারাবার কিছু নেই। এখন ডু ওর ডাই। আমরা এখন আর সরকারকে কোনো দিকে ওয়াকওভার দিবো না- ইনশাআল্লাহ।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে এখন বিএনপির কি করণীয়? – রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিএনপির এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমি বলব বিএনপি সেই লক্ষ্যে এগুচ্ছে। রাষ্ট্রপতির লোকদেখানো যে সংলাপ হচ্ছে সেটা বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক। একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থ করা, যাতে মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। আমরা এটা বলছি না যে, আপনারা ধানের শীষে ভোট দেন, আমরা বলছি আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।’