ঢাকা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্ভিক্ষ আসছে। তিনি নাকি দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। তাহলে এত দিন ধরে যে শোনালেন বাংলাদেশ নাকি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে কৃষকদের কোনো সমস্যা নেই। তাহলে দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন কেন?
অবশ্য এর একটা উত্তরও দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে লুটপাট করার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সামনে দুর্ভিক্ষ দেখতে পাচ্ছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সার, বীজ, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।
বেলা তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল নয়টা থেকে ঢাকার আশপাশের এলাকার নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে আসা শুরু করেন। বেলা তিনটার মধ্যে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সমাবেশে অংশ নেন। তাঁরা কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ের কাছাকাছি পল্টন মডেল থানা পর্যন্ত নয়াপল্টন এলাকার দক্ষিণ পাশের সড়কে অবস্থান নেন। দক্ষিণ পাশের সড়কে জায়গা না পেয়ে একপর্যায়ে উত্তর দিকের সড়কেও নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নয়াপল্টন এলাকা হয়ে যানবাহনের তেমন চাপ ছিল না। তবে সাড়ে তিনটার পর গাড়ির চাপ বাড়লে উত্তর পাশের সড়ক হয়ে দুই সারিতে গাড়ি চলাচল করে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের কোমরটা ভেঙে দিয়েছে। মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। কৃষকেরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। তিনি বলেন, সেচ দেবে কিভাবে, ডিজেলের দাম তো বেড়ে গেছে তিন থেকে চার গুন। বিদ্যুৎ দিয়ে যে পানি তুলবেন, দাম বেড়েছে ১০ গুণ। কৃষক যাবে কোথায়।
কৃষকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কি ধান বিক্রি করে ধানের দামটা পান? পান না। অনেক কৃষক ধানের চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন। অনেক প্রান্তিক কৃষক এখন রিকশা ও ভ্যান চালান। তাঁরা আর কৃষি কাজে থাকতে পারছেন না।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, শেয়ালের কাছে আর মুরগি দেবেন না। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনি একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণের পার্লামেন্টের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল তরঙ্গের ঢেউয়ে আপনাকে বিদায় নিতে হবে।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা আবারও বলছি এখনো সময় আছে সেফ এক্সিট নিন। চলে যান। এই মানুষগুলোকে রেহাই দিন।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা একটা সমাবেশের জন্য পুলিশকে লাগিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় মারামারি করতে। সিরাজগঞ্জে গুলি করেছেন। আমাদের ইকবাল হাসান মাহমুদ (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) সাহেবের স্ত্রীকে পর্যন্ত গুলি করেছেন। সিলেটে গুলি করেছে, গোলমাল করছে। হবিগঞ্জে গুলি করেছে। সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সমাবেশের জন্য এত ভয় পান কেন?
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হাসান জারিফের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমানউল্লাহ প্রমুখ।