একটা বিশেষ কারণে বিগত কয়েকদিন ভগ্নহৃদয় বিভোরে ছিলাম। তাই কিছুদিন লেখালিখির বাইরে ছিলাম। গতকাল থেকে সেই পরিস্থিতিতে থেকে উঠে এসেছি। এখন অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। অযথা কথা না বলে মূল কথায় চলে যাই। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব! দেশীয় রাজনীতিতে এক চিরচেনা রূপ। অনেক আগে থেকেই হাসিনা-রেহানার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-নেত্রী রেহানা মুখী। নেতাদের মূল্যায়ণ, বিশ্বাস, আস্থা। এসব হাসিনার মধ্যে নেই। হাসিনা রেহানাকে সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গেছে। তাই বোন রেহানাকে সবসময়ই মাইনাস ফর্মুলায় ফেলে রেখেছে। রেহানা আর পেড়ে উঠেনি হাসিনার কুটচালের সাথে। রেহানা পন্থী অনেক আওয়ামী নেতাকে কোনঠাসা করে রেখেছে হাসিনা। সর্বশেষ মন্ত্রীসভায় স্থান পায়নি রেহানা পন্থীরা। পায়নি ভালো পদ। রেহানা তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। হাসিনা রেহানাকে দলে সেভাবে আনতেই চায় নি। ভয় ছিল নিজের ক্ষমতা হারানোর। তাই আওয়ামী লীগের সাথে রেহানা সব সম্পর্ক চুকিয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে ভিনদেশেই রয়েছে। এই বিষয়ে কোনো একদিন কথা বলবো।
গত কয়েক একদিন আগে হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবার পূর্বে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে রেহানার ছেলে ববির সাথে দেখা করতে দুইদিন যাত্রা বিরতি করেছিলেন। সরাসরি ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা না করে ফিনল্যান্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট অবতরণ করাতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। দুইদিন এত বড় বিমান সেখানে থেকেছে এতেও অতিরিক্ত খরচ। এতিমের দুই কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের নিছক অভিযোগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। এখন কী এর জবাব দিবে হাসিনা? ববির রাগ ভাঙানোর জন্য হাসিনা সাথে নিয়ে গেছে ৩২টি কালো সুটকেস!
বাংলাদেশ বিমানের একটি ৭৭৭ এয়ারক্রাফটে হেলসিঙ্কি এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে বুয়া। স্যুটকেসগুলি ডিপ্লোমেটিক সুবিধা ব্যবহার করে খালাস করা হয়েছে। ৩২টি সুটকেসে কী ছিল? ইউরোপের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ থাকায় যেকোনো দেশেই স্যুটকেসগুলো নিয়ে যাওয়া সম্ভব। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ৭৭৭ এয়ারক্রাফটি ওখানে পার্ক করা থাকে। হেলসিঙ্কিতে হোটেল ক্যাম্প (Hotel KEMP) হোটেলে উঠেছিলেন। এটি ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে দামি হোটেল। এর সবচেয়ে ওপরের দু’টি তলার সবগুলো রুম (৬০টি) বুক করা হয়েছিল।
যদিও বলা হয়েছে ভাগ্নের বাসায় বেড়াতে এসেছেন, কিছুদিন আগে ববি রাগ করে এখানে চলে এসেছে কোনো রাজনৈতিক পদ না পেয়ে। দামি হোটেল, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৭৭৭ এয়ারক্রাফটের মতো এত বড় বিমানে মাত্র কিছু সফরসঙ্গী নিয়ে আসলেন। সেখানে ফিনল্যান্ড সরকার হাসিনাকে রিসিভ করার জন্য একজন প্রতিনিধিও পাঠায় নি। কথা একটাই সেই ৩২টি সুটকেসে কী ছিল? মানলাম জামা-কাপড় সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। আমি কোনো প্রমাণ ছাড়া এটা বলতে পারবোনা যে সেই সুটকেসগুলোতে হাজার কোটি টাকা ছিল। এটা বলা মানে নিজের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেওয়া। হাতে পোক্ত প্রমাণ আসলেই আমি সুটকেসের ভিতরে কী ছিল তা নিয়ে কথা বলবো।
এটা ছিল রাষ্ট্রীয় সফর। সেই রাষ্ট্রীয় সফরকে পারিবারিক সফর কেন বানানো হলো? জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অধিকার কে দিলো হাসিনাকে? মানলাম ৩২টি সুটকেসে টাকা ছিলনা। কিন্তু দেশের টাকা এভাবে নষ্ট করে বিদেশে যেয়ে পিকনিক করার অধিকার কী তার আছে? টাকাগুলো কী তার বাবার? এই টাকার উৎস কী? বিমানের এত টাকা খরচ? বিমান দুই দিন বসে থাকলো। সেই খরচ! দামি হোটেলে থাকার মতো ব্যয়বহুল খরচ! এসব নিয়ে কথা বলে না কেন মিডিয়া ও সুশীলরা? রাষ্ট্রের টাকা এভাবে নষ্ট করার জন্য হাসিনা কি জনগণের কাছে জবাবদিহিতা দিবে? রাষ্ট্রীয় কোষাগারে না কি টাকা নেই। সেই অযুহাতে অফিসের গাড়ি না কিনে ১৫ কোটি টাকা চিকিৎসা সেবায় দান করে নাটক করলো হাসিনা। কেমন ভাঁওতাবাজি! তাহলে এখন টাকা আসলো কোথা থেকে? কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাগিনার সাথে সাক্ষাৎ! অতঃপর পিকনিক!
কি এমন ঘটলো যার জন্য ববি ও রেহানাকে হাসিনা এখন টাকার ভাগ দিচ্ছে? তাহলে ক্ষমতার শেষ সময় চলে এসেছে? সমন্বয় করে কি নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে চাচ্ছে? আওয়ামী লীগের ভিতরে-বাইরে দ্বন্দ্ব চরমপর্যায়ে। ক্ষমতার মসনদ নড়বড়ে। বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। ১৪ দলে ভাঙানোর গুঞ্জন। হাসিনা বিমুখ দলীয় নেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে গ্রুপিং। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির আসন্ন আন্দোলন কীভাবে মোকাবেলা করবে? কীভাবে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়া যাবে? কীভাবে আবারো ক্ষমতার মছনদ ধরে রাখা যাবে! সেই চিন্তাতেই বিভোর হাসিনা। দেশ থেকে পালানোর ছকও কোষে রেখেছে। এমতো অবস্থায় বিএনপির প্রয়োজন হলো একটা শক্ত আন্দোলনের ডাক দেওয়া। এখন সরকারের অবস্থা খুবই দুর্বল। সবাই মিলে একটা ধাক্কা দিলেই আওয়ামী লীগ পড়ে যাবে। অতএব বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হলো অতিসত্বর একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। যা হতে পারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যু নিয়ে। অতঃপর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন। জানি না বিএনপি কী চাচ্ছে। যাই চাক বিএনপি। বিএনপির অবশ্যই দেশ ও জনগণের পক্ষে থেকে এই আন্দোলন সম্পূর্ণ করতে হবে। পরিশেষে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের অপেক্ষায় রইলাম।
117
54 Comments
312 Shares
Like
Comment
Share