কৌশলে এগোচ্ছেন বিএনপি’র মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা

২৮শে অক্টোবরের সংঘাত সংঘর্ষের পরবর্তী পরিস্থিতিতে কৌশলে এগোচ্ছেন বিএনপি’র মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মামলা, গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সরাসরি নির্দেশনা যাচ্ছে তাদের কাছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এ কারণে কেন্দ্রীয় অনেক নেতা গ্রেপ্তার হলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা-উপজেলার নেতাদের কেউ গ্রেপ্তার হলে তার জায়গায় দ্রুত ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে যাতে আন্দোলন কর্মসূচিতে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা না হয়।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে বিএনপি’র হাইকমান্ড ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। অনেকের সঙ্গে এককভাবে কথা বলছেন। বিএনপি’র হাইকমান্ডের বার্তা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পৌঁছে দিচ্ছেন। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাই মাঠে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, কারাগারের বাইরে থাকা সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা করে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

ইতিমধ্যে দলীয় ফোরামে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হরতালের পর অবরোধ কর্মসূচিও সারা দেশে সর্বাত্মকভাবে পালিত হওয়ায় সন্তুষ্ট দলটির হাইকমান্ড। তারা মনে করছেন- বিরোধী জোটের চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের নীরব সমর্থন রয়েছে। তাই হরতাল ও দু’দফা অবরোধ কর্মসূচির পর ফের বুধবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ঘোষণা আসতে পারে। মাঝখানে ৭ই নভেম্বর মঙ্গলবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে একদিনের বিরতি দেয়া হতে পারে।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি শরীফউদ্দিন জুয়েল মানবজমিনকে বলেন, সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলেও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। তৃণমূলের ওপর দলের হাইকমান্ডের আস্থা রয়েছে। আন্দোলন টেনে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার নির্মম জুলুম-অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার-আটকও নির্বিচারে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কিন্তু জনরোষ আরও তীব্র হচ্ছে। মানুষের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা আরও আকাশচুম্বী হয়েছে। কাজেই সরকার যেটা ভেবেছিল যে, এই আন্দোলন বলপ্রয়োগ করে স্তব্ধ করে দেবে এবং নেতাদের বন্দি করে ফেললেই সবাই চুপচাপ ঘরে ফিরে যাবে, সেটা ইতিমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিকামী মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলতেই থাকবে যতক্ষণ না আমাদের একদফা দাবি অর্জিত হয়।

 

গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত: এদিকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। জেলার শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সিনিয়র নেতাদের পাঠানো হচ্ছে রিমান্ডে। গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে। শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঝিকরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানা মুন্নিকে। এ ছাড়া শনিবার গভীর রাতে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীমের ধানমণ্ডির বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। গেট ভেঙে বাসায় ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে তারা।

এদিকে গতকাল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৬১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে এক হাজার ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। এ ছাড়া গত ২৮শে অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৭৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মোট ৫১৫টির অধিক মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬২০ জনের অধিক নেতাকর্মী। এ ছাড়া ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত ৫৭৯১ জনের অধিক নেতাকর্মী।

জেলায় জেলায় নতুন নেতৃত্ব: এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেপ্তার পরপরই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে আরেকজনকে।  ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান কারাগারে থাকায় বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, তানভীর আহমেদ রবিনকে গ্রেপ্তারের পর লিটন মাহমুদকে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব করা হয়েছে। মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হককে গ্রেপ্তারের পর যুগ্ম আহ্বায়ক এ জি এম শামসুল হককে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, বিএনপি’র মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে গ্রেপ্তার করার পর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়েছেন ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর। নরসিংদী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেপ্তারের পর সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহীকে গ্রেপ্তারের পর যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সালেহ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল গ্রেপ্তার হওয়ায় সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোকাররম হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, গাইবান্ধা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রথম যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াস হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সদস্য সচিব মাহফুজ উন-নবী ডন গ্রেপ্তার হওয়ায় সদস্য মো. আব্দুস সালামকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, নড়াইল জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, খুলনা জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আমির এজাজ খান গ্রেপ্তার হওয়ায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কারাগারে থাকায় সহ-সভাপতি কুতুব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

মানব জমিন