জেলা পর্যায়ের ছাত্রনেতা যখন হাজার কোটি টাকা পাচার করে, তখন বিত্ত-বৈভবের মাত্রাটা বোঝা যায়। আসলে তারা বাংলা প্রবাদ ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বাক্যকে হার মানিয়েছে। এখন বলা উচিত- তারা আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। ওবায়দুল কাদেররা যেদিকেই তাকান সুখের রাজ্য দেখতে পান। জনগণ থেকে তারা এতটাই বিচ্ছিন্ন যে, তাদের নাড়ির খবর তাদের কাছে পৌঁছায় না। পাহাড়সম দুর্নীতির মধ্যে তাদের অবস্থান। ইংরেজি প্রবাদটি এরকম যে- ‘absolute power corrupts absolutely’। সার্বিক ক্ষমতা সার্বিকভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে।
আওয়ামী লীগের অধীনে বিগত ৫৩ বছরে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। ১৯৭৩ সালে যখন তাদের রাজত্বে জয়-জয়কার তখনো তারা বিরোধী ব্যক্তি ও শক্তিকে সামান্যতম জায়গা দেয়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয় লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ১১টি আসনে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে মোট ভোটারের ৫৪.৯ শতাংশ ভোট দান করে। এই নির্বাচনে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে ঢাকায় ব্যালট বাক্স এনে জেতানো হয়। মেজর হাফিজের বাবা ডাক্তার আজহার উদ্দীনকে হাইজ্যাক করা হয়- যাতে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন। মেজর জলিলের বিপরীতে হরনাথ বাইনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরকম আরো অনেক কেলেঙ্কারিতে ভরপুর এ নির্বাচন। বিরোধী মত, পথ ও আদর্শকে চিরতরে কবর দেয়ার জন্য পরবর্তীকালে এক নেতা, এক দেশ ও এক দল ঘোষিত হয়। এই হলো তাদের নির্বাচনের নমুনা।
২০২৪ সালের নির্বাচন তার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ। সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় যে নির্বাচনটি দেশে এবং বিদেশে নিন্দিত হয়েছে সে নির্বাচনকে সর্বোচ্চ বিশেষণে নন্দিত করা। এই নির্বাচনটি নাকি দেশের সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। এই আত্মসুখ ও আত্মপ্রতারণা দেখে হয়তো ‘ঘোড়াও হাসছে’। সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেব কোন দুঃখে নির্বাচন দেবেন? নির্বাচন দিলেই তো পরাজয় ও পদচ্যুতি। একবার এক বিশ্লেষক বলেছিলেন, তারা বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন। নেমে গেলে বাঘে খাবে নয়তো বা জনগণ ঘাড় মটকাবে। তাই যতদিন পারে তারা অন্যায়-অনাচার করে জনগণের রক্ত ঝরিয়ে ক্ষমতায় থাকবে।
এ নির্বাচন ডামি না হয়ে রিয়াল হলে কী পরিণতি হতো শাসক দলের? ওবায়দুল কাদের নিজেও জানেন, সত্যি ঘটনাটি কী। ক. এই নির্বাচনটি কোনো নির্বাচনই নয়; খ. নির্বাচন কমিশন আদেশ পালন করেছে মাত্র। এজেন্সির লোকেরা যখন কমিশনে যায় তখন বুঝতে ভুল হয় না যে, কারা নির্বাচনটি পরিচালনা করেছে। গ. ডামি শব্দটি নির্বাচন যে বোগাস হয়েছে তা প্রমাণ করার জন্য কি যথেষ্ট নয়? ঘ. সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ভোটে অংশগ্রহণকারীদের সরকারি পরিসংখ্যান প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কমিশন বলেছে ৪০ শতাংশ ভোট দিয়েছে। তাহলে বাকি ৬০ শতাংশ যে বিরোধী ছিল বা অনুপস্থিত ছিল তা কি প্রমাণ হয় না। এই সেদিন কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন হয়ে গেল। সেখানে ৬০ শতাংশ নাকি ভোট দিয়েছে। তাহলে জাতীয় পর্যায়ে অনুরূপ ভোটার আনতে আওয়ামী ব্যর্থতা কি প্রমাণিত হয় না? তারা পরিসংখ্যান দেয় যে আওয়ামী লীগের ভোটার সংখ্যা ৩৫ শতাংশের মতো। জাতীয় নির্বাচনে কি আওয়ামী লীগের লোকেরাও ভোট দেয়নি? ঙ. ওবায়দুল কাদের তার স্বরে ঘোষণা করেছিলেন ‘খেলা হবে খেলা’। সেই খেলার ফাইনাল ও সেমি-ফাইনালও তিনি ঘোষণা করেছিলেন। যথার্থই প্রশ্ন করা যায়, খেলার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোকে তারা কি খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন? নাকি হাত-পা বেঁধে নির্বাচনী খেলায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রেখেছিলেন। চ. ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিশ্চয়ই পরিসংখ্যান আছে যে, কত হাজার মামলা তারা করেছিলেন বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে। সবাই জানে, আজগুবি গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লাখ লাখ কর্মীকে আটক করা হয়েছে নয়তো ঘর ছাড়া করা হয়েছে।
ছ. নির্বাচনের আগে সুপারসনিক গতিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষিত হয়েছিল। জ. বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাইকে বানোয়াট অভিযোগে নির্বাচনের আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের এক মন্ত্রী বলেছিল, আপস করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব নেতাকর্মী মুক্তি পেতে পারত- সেটি কি সত্য নয়? ঝ. নির্বাচনের আগে প্রশাসনকে দলীয় লোকদের দিয়ে কিভাবে শক্তপোক্ত করে সাজিয়ে ছিল তা কি জনগণ পর্যবেক্ষণ করেনি? নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত প্রশাসনের কোনো নরম আওয়ামী সমর্থককেও পদে রাখা হয়নি। বেছে বেছে কঠিন কঠোর ও বেপরোয়া লোকদের ওসি-ডিসি বানানো হয়েছিল তা সবাই জানে। ঞ. কোন সাহসে কী নিশ্চয়তায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরকারের ভাষায় কথা বলেছে, তা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। ট. ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করতে তারা যে কূটকৌশল ও বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগের আশ্রয় নিয়েছিল- জনগণ কি তা ভুলে গেছে?
২০০৯ সালে যখন তারা ক্ষমতাসীন হয় তখন নির্বাচন-পরবর্তী একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট। তাতে তারা বলেছিল যে, বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা ও কৌশলে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ২০১৮ সালে তাদের আরেক মহান বন্ধু দেশ নির্বাচনের যাবতীয় খরচ বহন করেছে বলে গণমাধ্যমে গুজব রটেছিল। সেখানে অর্থ বিতরণের মহড়ায় একজন পুলিং এজেন্টও ভাগ পেয়েছে। আনসাররাও সেই অর্থের প্লাবন থেকে বঞ্চিত হয়নি। আর এবারের নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ থেকেই বোঝা যায়, তারা কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা রাখে। তাদের ডামিরাও তাদেরই প্রার্থী ছিল। লুটপাটের অর্থ কিভাবে বিতরণ করা হয়েছে তা জনগণ দেখেছে। ঠ. কিভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এবং কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা প্রকল্প সহায়তার নামে অথবা অন্য কারসাজিতে ব্যয়িত হয়েছে তা ওয়াকিবহাল মহল জানে।
দেশী-বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও প্রতিষ্ঠানগুলো অবশেষে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রাজকীয় মেহমানরা ব্যতীত কেউই ভালো কথা বলেনি। গত ৮ মার্চ একই ধারায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও এ নির্বাচনে তা সীমিত ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ভোটাররা পুরোপুরিভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারচর্চার সুযোগ পাননি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিজস্ব প্রক্রিয়া অর্থাৎ ‘নিজেদের’ প্রার্থী ও দলের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভোটারদের সত্যিকার অর্থে পছন্দের প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল না। ইইউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৩৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সর্বশেষ সংসদ নির্বাচন মূল্যায়নের পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন নিশ্চিত করতে ২১ দফার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওই পরামর্শগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাজের প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন ইইউ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
সভা, সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন ও বক্তৃতাসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশের এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা সীমিত ছিল। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মতো পরিবেশ না থাকায় গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অধিকারচর্চার সহায়ক পরিবেশ ছিল না, যা নাগরিক পরিসরে সমালোচনা, বিতর্কের চর্চা ও জবাবদিহি সীমিত করে দেয়। ইইউ বলেছে, প্রাক-নির্বাচনকালে বিরোধী দলের ধারাবাহিক বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। যে সমাবেশ পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় সহিংসতায়। এর জের ধরে পরে বিএনপি ও জোটের নেতাদের গণগ্রেফতার ও আটকের ফলে দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চার পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটে। নির্বাচনের পুরো সময় বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশ, আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতার চর্চা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। গ্রেফতার এড়িয়ে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা বিএনপির পক্ষে অসম্ভব ছিল; কারণ, দলের প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বকে কারাবন্দী করা হয়। বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক আচরণের জন্য মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার অপরিহার্য, যা বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বলা আছে। কিন্তু এই অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করা হয় আইন দ্বারা।
বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ বেকায়দায় রয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে রফতানির পরিমাণ আরো কমে যেতে পারে। দেশের ব্যবসায়ী সমাজ প্রকাশ্যে সরকারের প্রশংসা করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পাশ্চাত্যের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সে ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে।
দেশজ প্রতিক্রিয়া ও বৈদেশিক এ ধরনের পর্যবেক্ষণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একটি স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দেয়। এটি সরকারের উপর একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে নিঃসন্দেহে। নির্বাচন-পরবর্তীকালে ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য কমিশন বাংলাদেশ সফর করে। তাদের সাথে বৈঠকে দেশের রাজনীতি, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদন ও মার্কিন পর্যবেক্ষণ একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে। এ ছাড়া চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট, আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য, দুঃসহ সিন্ডিকেট এবং রিজার্ভের করুণ দশা সরকারের ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। সামাল দিতে না পারলে এবং বিরোধী আন্দোলন যদি তীব্রতা অর্জন করে তাহলে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন রাজনৈতিক সমাধানের সূত্র হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চরম সঙ্কটে ভারত সহায়তা দিতে সক্ষম নয়। চীনা অর্থ ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর রাশিয়া নিজের খরচ মেটাতেই হিমশিম খায়। সুতরাং সরকার যদি পাশ্চাত্যমুখী হয়ে ওঠে তাহলে মধ্যবর্তী নির্বাচন আসন্ন হয়ে উঠবে। একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের চাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে না পারলেও নির্বাচন প্রশ্নে তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। বারবার তারা এটি প্রকাশও করেছে। দেশের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার নেতারাও মনে করেন, দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার একটি উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ওবায়দুল কাদের সাহেব নাক ছিটকালেও মধ্যবর্তী নির্বাচনব্যবস্থা নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মিডটার্ম ইলেকশন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখন কোনো সরকার নির্দিষ্ট সময় পরিপূর্ণ করার আগেই অনাস্থা, গরিষ্ঠতা সঙ্কট, আদালতের রায় ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আগাম নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয় তখন তাকে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলে। নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের সঙ্ঘাতও মধ্যবর্তী নির্বাচনের কারণ হতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোতে হরহামেশা এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কোনো ক্ষমতাসীন সরকার তার জনপ্রিয়তা যথেষ্ট মনে করলেও মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে পারে। ভারতসহ পৃথিবীর সর্বত্র এ ধরনের উদাহরণ রয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৯৮৬ সালে এরশাদ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে একটি নির্বাচন হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুই বছর পরে ১৯৮৮ সালে গণ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটিই মধ্যবর্তী নির্বাচন।
বিগত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি যেহেতু জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, কোনো বিরোধী দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি সেহেতু নৈতিকভাবে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। যথাযথ নির্বাচন হলে, কারণ ঘটলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রশ্ন আসে, আর এখানে যখন আদৌ নির্বাচনটি নিয়মমাফিক অনুষ্ঠিত হয়নি, সুতরাং অবিলম্বে আরেকটি নির্বাচন নৈতিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকভাবে অনিবার্য। সরকারের উচিত গণরোষ উত্থিত হওয়ার আগেই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে বহমান সঙ্কটের মোকাবেলা করা।
Nayadiganta