কোন চাবিতে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি হবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কোন চাবিতে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি হবে বাংলাদেশ?

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশ এশিয়ার শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে ওঠার আদর্শ অবস্থানে রয়েছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে এই সুবিধার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশী ভারতের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু সময় বদলাচ্ছে, পরিস্থিতি নতুন মোড় নিচ্ছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভূকৌশলগত সুবিধা হচ্ছে বিশ্বের প্রধান নৌবাণিজ্য রুটের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকা—বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমা। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথের পূর্ব-পশ্চিম শিপিং রুটের সাথে যুক্ত। অথচ বিশ্বের ৪৪টি দেশ কোন সমুদ্রসীমা ছাড়াই অন্য দেশের বন্দর ব্যবহার করে তাদের আমদানি রপ্তানি সম্পন্ন করে। বাংলাদেশের ১ লাখ ১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল সমুদ্রসীমা শুধু একটি জাতীয় সম্পদ নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান সড়ক।

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের তথ্যমতে, বিশ্ববাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয় জলপথে এবং এর মধ্যে ৬০ শতাংশ পণ্য বঙ্গোপসাগরের আশেপাশের রুট ব্যবহার করে। এই বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে এক নতুন অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য।

২০১২ সালে চীনের সহায়তায় কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কিন্তু ২০২০ সালে সেই প্রকল্প বাতিল করা হয়, অনেকের মতে ভারতের চাপে। অথচ এই বন্দর তৈরি হলে চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় ৭৪ গুণ বেশি কন্টেইনার পরিবহন করা সম্ভব হতো। পরবর্তীতে, জাপানের সহায়তায় মাতারবাড়িতে আরেকটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের মাধ্যমেই বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। সিঙ্গাপুর তার মোট জিডিপির ৭ শতাংশ আয় করে বন্দরের মাধ্যমে। একই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার ট্রান্স শিপমেন্ট হাব।

বাংলাদেশের ভূকৌশলগত গুরুত্ব শুধু সমুদ্রপথেই সীমাবদ্ধ নয়। নেপাল ও ভুটান, যাদের কোনো সমুদ্রবন্দর নেই, তাদের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে সুবিধাজনক প্রবেশদ্বার। কিন্তু ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের কারণে এই সুযোগ এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ভারত এখনও বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করেনি। তবে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশ যদি নিয়ন্ত্রিত শর্তে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য তার বন্দর সুবিধা উন্মুক্ত করে, তাহলে পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে বাংলাদেশও তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে।

একইভাবে, নেপাল বাংলাদেশের সাথে জলবিদ্যুৎ রপ্তানি করতে চায়, কিন্তু এই ক্ষেত্রেও বাঁধা সেই শিলিগুড়ি করিডর। মাত্র ৩০ মাইল দীর্ঘ এই করিডরের অনুমতি পেলেই বাংলাদেশ সরাসরি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সুযোগ।

বিশ্ব মানচিত্রে তাকালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ভূকৌশলগত অবস্থান। সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন শুধু সঠিক নীতি ও কূটনৈতিক দক্ষতা প্রয়োগ করে সম্ভাবনাকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার সময় এসেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here