২০২২-০৮-২৯
আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিগত তিন বছর ধরে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-সিজিএসের ‘কোথায় আছেন তাঁরা’ প্রতিবেদনটি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে বাংলাদেশে ২২ জন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদসহ মোট ৭১ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার প্রায় ৫২টিতেই রাষ্ট্রীয় নানান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটির গবেষণায় কোন সংস্থার বিরুদ্ধে কতগুলো ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা আছে, তাও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহের ওয়েবসাইট, জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার তথ্য যাচাই ও পর্যালোচনা এবং ভুক্তভোগী বা ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য অথবা পরিচিতজনের সাথে আলাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনটিতে প্রধান গবেষকের ভূমিকা পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইসড অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে গুমের শিকার ৭১ জনের মধ্যে ১১ জন করে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং আট জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া ২৩ জন গুমের শিকার ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন, পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এবং ১৬ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
৭১ টি ঘটনার মধ্যে ২১টি ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং ১৬ টি ঘটনায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ভৌগোলিকভাবে মোট ১৮টি জেলাতে ঘটনাগুলো ঘটেছে যার মধ্যে ২৬টি ঘটনা ঢাকায় এবং ৮টি ঘটনা চট্টগ্রামে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। বছরের হিসাবে, ২০১৯ সালে মোট ৩১টি গুমের ঘটনা ঘটেছে; যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ৫২২ টি বলপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সাল নাগাদ আরও ৭১ টি মামলা যোগ হওয়ায় মোট গুমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯৩ টি।
প্রতিবেদনটিতে গুমের সংজ্ঞা হিসেবে ২০০৬ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদের সংজ্ঞাটি গ্রহণ করা হয়। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, ‘গুম হচ্ছে রাষ্ট্রের কোন প্রতিনিধি কিংবা রাষ্ট্রের অনুমোদনে, সমর্থনে বা সম্মতিতে কোন ব্যক্তিবর্গ বা গোষ্ঠী কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা অন্য কোনোভাবে স্বাধীনতা হরণ এবং পরবর্তীতে নিখোঁজ ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করার বিষয়টি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানো এবং তার ভাগ্য ও অবস্থান গোপন রাখা, যেন তিনি আইনের সুরক্ষা থেকে বাইরে থাকেন’।
জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, ‘গুম হচ্ছে রাষ্ট্রের কোন প্রতিনিধি কিংবা রাষ্ট্রের অনুমোদনে, সমর্থনে বা সম্মতিতে কোন ব্যক্তিবর্গ বা গোষ্ঠী কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা অন্য কোনোভাবে স্বাধীনতা হরণ এবং পরবর্তীতে নিখোঁজ ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করার বিষয়টি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানো এবং তার ভাগ্য ও অবস্থান গোপন রাখা, যেন তিনি আইনের সুরক্ষা থেকে বাইরে থাকেন’।
জাতিসংঘের গুম হওয়া থেকে সমস্ত ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে গুম করাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গুম হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের গুম হওয়া থেকে সকল ব্যক্তিকে সুরক্ষার জন্য সনদে স্বাক্ষর করাসহ সাতটি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকার গুম হওয়ার বিষয়টি আমলে না নিয়ে অপরাধীদের দায়মুক্তি প্রদান করছে বলেও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে তৈরিকৃত এই গবেষণায় সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দীপাঞ্জলি রায়, সুমাইয়া জাহিদ ও আরমান মিয়া।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়তে পারেন এখানে – https://cgs-bd.com/article/9360/কোথায়-আছেন-তাঁরা
আরো পড়ুন