কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল, মেধা কোটা ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫%, অন্যান্য ২%

আপিল বিভাগের রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন আপিল আবেদনের পক্ষের আইনজীবী আহসানুল করিম।

কোটা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রোববার সরকারের লিভ টু আপিলের শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পর দুপুর দেড়টায় রায় দেয়া হয়।

কোটা পুর্নবহালের হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে আপিল বিভাগ বলেছে, এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি সাত শতাংশের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এক শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা আর এক শতাংশ প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গ কোটা হিসাবে থাকবে। তবে সরকার চাইলে এই কোটার হার কম-বেশি করতে পারবে। অনতিবিলম্বে সরকারকে এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশ জুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ চলেছে। পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করতে হয়েছে। সহিংসতায় সারা দেশে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

কারফিউয়ের মধ্যেই রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে কোটা নিয়ে শুনানি শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার জন্য পাঁচজন আইনজীবীকে অনুমতি দেন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে অংশ নেয়া নয়জন আইনজীবীর মধ্যে আটজনই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করার পক্ষে মত দেন। একজন আইনজীবী কোটা সংস্কারের পক্ষে মতামত দেন।

এর আগে ২০১৮ সালে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল সরকার।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিট করা হলে চলতি বছরের পাঁচই জুন ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা ও কোটা পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

পরদিন থেকে কোটা ব্যবস্থার বাতিল চেয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে অবশ্য তারা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। জুলাই মাস থেকে তারা জোরালো আন্দোলন শুরু করেছিল।

আপিল বিভাগের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সরকার: আইনমন্ত্রী

কোটা নিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে সরকার।

রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি আপিল বিভাগের এই রায়টি অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় হয়েছে।”

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান মি. হক।

“কাল তো সরকারি ছুটি। খুব শিগগির প্রজ্ঞাপন দিতে গেলেও মঙ্গলবার নাগাদ হয়তো সময় লাগবে,” বলেন আইনমন্ত্রী।

সরকারি চাকরিতে এখন থেকে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এছাড়া পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, এক শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাকি এক শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য কোটা রাখার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে এগুলো সংস্কার করতে পারবে বলে জানিয়েছে আপিল বিভাগ।

“ভবিষ্যতে এই রায়টি যেন সরকারের কোন সিদ্ধান্তে প্রতিবন্ধকতা না হয়, সেজন্যই আপিল বিভাগ এটি বলেছেন।”

রায়ের পর যা বললেন রিটের পক্ষের আইনজীবী

কোটার পক্ষে রিটকারীদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৮ সালে কোটার বিষয়ে দেয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলো সেটি বাতিল করে দিয়েছে।

“হাইকোর্টের রায় দীর্ঘ শুনানির পর আপিল বিভাগ রদ ও রহিত করেছে। অর্থাৎ হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় বাতিল বলে গণ্য করা হলো। একই সাথে আর্টিক্যাল ১০৪ অনুযায়ী কোটা প্রথার একটি চূড়ান্ত সমাধান দিয়েছেন,” সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেছেন, কোটা পুরোপুরি বাতিলের বিরুদ্ধে রিট করা হয়েছিল। তারাও সংস্কারের পক্ষে বলেছিল, আমরাও সংস্কারের পক্ষে বলেছিলাম। আদালত সেই আদেশ দিয়েছেন।

মি. হক বলেন আপিল বিভাগ মেধার জন্য ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের জন্য ৫ শতাংশ,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

“রায়ে বলা হয়েছে যেহেতু বিষয়টি পলিসি ম্যাটার তাই নির্বাহী বিভাগ পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংস্কার করতে পারবে। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে গেজেট জারি করে আপিল বিভাগকে জানাতে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন”।

শাহ মঞ্জুরুল হক বলেছেন, আদালত আশা প্রকাশ করেছেন যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এখন যেন ক্লাসে ফিরে যায় এবং আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে।একই সঙ্গে অভিভাবকদের বলা হয়েছে অভিভাবকরা যেন শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরে যেতে বলে।

“এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় যেন সবাই মেনে নেন। শিক্ষার্থীরা যেন ঘরে ফিরে যান। তৃতীয় পক্ষ যেন ঘোলা পানিতে আর মাছ শিকার না করেন,” ব্রিফিং এ বলছিলেন মি. হক।

তিনি জানান আদালত সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের ঘটনা তদন্তের কথা বলেছেন এবং বিচারপতির নেতৃত্বে যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তাকে সবাই সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

Source: BBC Bangla