কোটা আন্দোলনে না যেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। কর্মীসভার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে না যেতে বলা হচ্ছে। যদিও ছাত্রলীগ দাবি করছে, তারাও কোটা আন্দোলনের পক্ষেই অবস্থান করছে।
শুক্রবার (৫ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে কর্মী সভা করে ছাত্রলীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
কর্মীসভায় বক্তৃতাকালে দুই নেতা কোটা আন্দোলনে ‘যাওয়ার প্রয়োজন নেই’ বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, সাংগঠনিক নির্দেশনা হলো— তোমরা কেউ কোটা আন্দোলনে যাবা না। তোমাদের জন্য সরকার ভাবছে। সরকার কোটা আন্দোলনের পক্ষে নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, এই মুহূর্তে যে আন্দোলনটি চলছে সে আন্দোলন তো সরকারেরই পক্ষে, কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। তাহলে তারা সরকারের পক্ষের সিদ্ধান্তে শাহবাগ দখল করে কি আদায় করতে চায়? ছাত্রলীগ তোমরা যারা করো তাদের কাছে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হলো— তোমাদের এই কোটা আন্দোলনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, দেশের সুস্থ রাজনীতি নেই, একজন পানি ঘোলা করবে আরেকজন মাছ শিকার করবে। একটি দল সবসময় চায় দেশে অস্থিতিশীল রাজনীতি চলুক, মৌলবাদের উত্থান ঘটুক। চলমান আন্দোলনের নেতৃত্বে এরা আছে কিনা সেটা একটি ভাববার বিষয়। আমি চাই না শিক্ষার্থীরা এদের প্রতিহিংসার শিকার হোক, অপরাজনীতির বলি হোক।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সূর্যসেন হলে গেটে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আসতে বাধা দেওয়া হয়। একইদিন এফ রহমান হলে মাইকে প্রচারণা করতে গেলে সেখানেও বাধা দেওয়া হয়। আন্দোলনে আসতে চাওয়া জসীমউদ্দীন হলের চতুর্থ তলায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া কিংবা আন্দোলনে যেতে না বলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগও কোটা আন্দোলনের পক্ষেই অবস্থান করছে। এ সময় তিনি আন্দোলনের নেতৃত্বের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের ছাত্রলীগের যারা কর্মী আছে… সরকারের পক্ষ থেকেই আপিল করেছে। সরকারই চাচ্ছে, কোটা যেটা ২০১৮ সালের বিজ্ঞপ্তি সেটা পুনর্বহাল হোক। যেখানে সরকার চাচ্ছে, সে আমরা সংগঠন হিসেবে সরকারি দলের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন, যারা আন্দোলন করছে, তাদের চাওয়া আর সরকারের চাওয়া একই৷ তার মানে যারা আন্দোলন করছে, তারা সরকারের পক্ষে আন্দোলন করছে৷
তিনি বলেন, যারা আমাদের ছাত্রলীগের কর্মী, তাদেরকে বলেছি, যেটা আমাদের ছাত্রলীগের চেইন অব কমান্ড, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলোকে ফলো করে তাদের অ্যাকটিভ থাকতে৷
যেহেতু আপনি বলছেন, সরকার আন্দোলনের পক্ষে, তাহলে আন্দোলনে যদি কেউ যেতে চায়, তাহলে সেখানে ছাত্রলীগের আপত্তি কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, আমরা তো আপত্তির কথা বলিনি। আমরা বলেছি, যার যার ইচ্ছার ব্যাপার। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে আমরা আমাদের অবস্থানটা ক্লিয়ার করেছি।
চলমান আন্দোলনের নেতৃত্বে কারা দিচ্ছে, সেটিও দেখার বিষয় বলে মনে করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
তিনি বলেন, কিছু লোক তো ওখানে সরকার বিরোধী স্লোগানও দিচ্ছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখেছি ছবি আপলোড দিতে। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে কানেক্টেড তাদেরকে দেখেছি। আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তো অন্তত বিবেক-বুদ্ধি খরচ করে চলতে হবে।
.themirrorasia