রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করে সেই অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা|। ১৩ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদটি পড়ে একই সাথে হতাশ ও হতবাক হলাম। প্রথমেই বলি হতাশ হওয়ার বিষয়টি। হতাশ হয়েছি এই ভেবে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর দেশ শাসন করছে। কত শত প্রকল্প তারা নিচ্ছে, কোনটি বাস্তবায়িত হয়, নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে, প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে দ্বিগুন-তিনগুণ ব্যয়ে। একটি প্রকল্প শেষ হয় আর উদ্বোধনের নামে মাস খানেক ধরে কতই না আয়োজন করে আওয়ামী লীগ সরকার। গত তিন/চার বছরে কত কর্মসূচিই না তারা পালন করেছে। এর কোনটি তো ছিল মেগাব্যয়ের মেগা কর্মসূচি। ‘জাতির জনক’ এর জন্মশতবর্ষ পালন করেছে ঘোর করোনাকালে। স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তী পালন করেছে খুবই ধুমধামের সাথে। ’শেখ মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ নামে একটি সিনেমার পেছনেই তারা খরচ করেছে শত কোটি টাকার মত। সেই আওয়ামী লীগের হঠাৎ করে এমন কৃচ্ছতা সাধনের নেপথ্য কারণ কী? দ্রুতবেগে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে নাকি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেখানে গরীব দু:খীর পাশে দাড়ানোর আহ্বান, তাও কি না ইফতার পার্টি না করে সেই টাকা বাঁচিয়ে? তা্ও একেবারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী নিজে আহ্বান জানালেন! হতাশ না হয়ে কি আর উপায় আছে? সরকারের তহবিলে তো টাকার অভাব থাকার কথা না। সে টাকা থেকে এক-আধটু দিলে তো দেশের গরীব মানুষের উপকার হয়, আর তাতে ইফতার মাহফিলের নামে ধর্মীয় আয়োজনের ওপরও কোপ দিতে হয় না!
খবর পড়তে পড়তে চোখ গেল, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘ডামি সরকার ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় নিয়ে কী কারণে বিতর্ক তৈরি করতে চায় ? আপনারা সুক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, ইফতার পার্টি নিষিদ্ধ অর্থাৎ বর্তমান ‘ডামি সরকার’ বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় সংস্কৃতি, বিশ্বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করছে।’
খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও যৌক্তিক প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। কৃচ্ছতা সাধনের জন্য তাদের কেন ইফতার আয়োজনের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করতে হলো? আওয়ামী লীগের সাথে ইসলামি সংস্কৃতি ও ভাবধারার যে একটি বৈপরীত্য তাই কি প্রমাণিত হয় না. ইফতারের ব্যাপারে সরকারের রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে।
সরকারের এমন অবস্থানের সমালোচনা করেছে এবি পার্টিও। দলটির আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, ‘পবিত্র রমজানে সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করা আমাদের ঐতিহ্য। এতে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি চর্চা হয়। কিন্তু এই সরকার ইফতার মাহফিলের বিষয়ে ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছে।’
সোলায়মান চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন ছুতোয় ইফতার ও ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করার প্রবণতা একটা ভয়ানক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। কিন্তু ইফতার ও ওয়াজ মাহফিলের প্রসঙ্গ এলে তারা ব্যয় সংকোচনের কথা ভাবে।
এবার আসি হতবাক হওয়ার ক্ষেত্রে। শেখ হাসিনা নিজেকে একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেন। শুধু তাই নয়, ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারে তার সরকার কি কি করেছে তা প্রায়ই দেশের মানুষকে মনে করিয়ে দেন। ইসলাম ধর্মের প্রতি তার এই যে এত ’অনুরাগ’ তা ইফতারে এসে বিরাগে পরিণত হলো কেন?
ইসলাম ধর্মের সুন্দর ও মহান একটি দৃশ্য হচ্ছে ইফতার। সারাদিন রোজা রাখা মানুষগুলো ইফতারের জন্য অপেক্ষমাণ, তাদের সামনে নানা ধরণের খাবার তারা খাচ্ছেন না, আযানের পর সবাই একযোগে খাচ্ছেন, এই যে ধর্মানুরাগ এটা মানুষকে আকৃষ্ট করে।
আর একটা বিষয় হচ্ছে- ইফতার মাহফিলে শুধু স্বচ্ছল আর সক্ষমরাই যোগ দেন না। সরকারিভাবে যে ইফতারের আয়োজন করা হয়, তার প্রথম দিনই থাকে এতিমদের সাথে নিয়ে সরকার প্রধানের ইফতার। এ আয়োজন উপলক্ষ্যে গণভবনে যা্ওয়ার সুযোগ হয় এতিম শিশুদের। এ সুযোগটি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে টাকা বাঁচানোর নামে ইফতার মাহফিল না করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
এ সরকারের ব্যাপারে মানুষের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। তারা জনবিচ্ছিন্ন একটি সরকার। ইফতার মাহফিলের মত মানুষের হৃদয়ের কিছু আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারের এমন আচরণ এ সরকারকে জনগণ থেকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
Bangla outlook