কী চলছে ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে?

কী চলছে ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে?

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে শতাধিক ড্রোন দিয়ে হামলা শুরু করেছে ইরান। ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সে দেশের গণমাধ্যম।

কী কারণে হামলা করেছে ইরান
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা। ‘ট্রু প্রমিজ’ নামে অভিযানের আওতায় এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান, ইরাক ও ইয়েমেন থেকে তাদের দিকে তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করা হয়েছে। তবে এর বেশিরভাগই থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা।

১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনসুলেটে বিমান হামলা চালিয়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের দুই শীর্ষ কমান্ডারসহ মোট সাতজনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এরপর থেকেই ইসরায়েলে ইরান হামলা করবে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

ইসরায়েলে হামলার পর ইরান জানিয়েছে, সিরিয়ার ওই কনস্যুলেটে হামলার বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়েছে বলে তারা মনে করে।  ইসরায়েল যদি পাল্টা হামলা না করে, তাহলে ইরানের হামলার সমাপ্তি এখানেই, বলেছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি। খবর- আল জাজিরা

ইসরায়েল আক্রমণে ইরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ইরানপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এবং হুথি বিদ্রোহীরা।

কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েল
ইসরায়েল দাবি করেছে, হামলার প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। হামলায় আহত হয়েছেন কয়েকজন, এর মাঝে রয়েছে সাত বছর বয়সী এক বেদুইন শিশু। এছাড়া ইসরায়েলের বিমান ঘাঁটি নেভাটিমে অন্তত ১৫টি ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত করেছে।

এদিকে ইরান জানিয়েছে, এখনো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। তবে তারা যা আশা করেছিল, ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি তার চেয়েও বেশি হয়েছে।

ইসরায়েলের পক্ষে এবং বিপক্ষে যারা
এই হামলাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মিশর, জর্ডান, লেবানন, ইরাকসহ সবগুলো দেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরব বলেছে, তারা আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। তবে হামলার জন্য ইরানের নিন্দা করেনি রিয়াদ।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইরানের এসব ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র থামিয়ে দিতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী থেকে জানানো হয়েছে, এ সময়ে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য মিত্র দেশের পাশাপাশি ফ্রান্সের সহায়তাও পেয়েছে তারা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জর্ডান ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানায়। দেশটি বলেছিল, তাদের আকাশ সীমানায় কোনো ক্ষেপনাস্ত্র বা ড্রোন প্রবেশ করলে ইসরায়েল পর্যন্ত যাওয়ার আগেই তা ধ্বংস করে দেবে তারা।

পাল্টা আক্রমনে সায় নেই যুক্তরাষ্ট্রের
ইরানের হামলার পর ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফোনালাপে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এটাও বলা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত করতে চাইলে ইসরায়েলের পাশে থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র।

সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল আকাশপথ
হামলার পর দ্রুত আকাশপথ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। একইসাথে ইরাক, জর্ডার, এবং লেবানন তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে এমনটাও জানা যায়। এমিরেটস এয়ারলাইনস কিছু ফ্লাইট ক্যান্সেল করে, কিছু ফ্লাইট ঘুরিয়ে দেয়।

তবে ইতিমধ্যেই আবার আকাশপথ খুলে দিয়েছে ইসরায়েল, জর্ডান এবং ইরাক।

ইরান ও ইসরায়েলের বৈরিতা বহুদিনের। তবে এবারই প্রথম সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করল ইরান। এমন অবস্থায় ইসরায়েল এবার ইরানে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। সম্ভাব্য সেই হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইরান।

samakal