কোনটা ফেলে কোনটার দিকে তাকাবেন ফারুক আহমেদ! সরকার পরিবর্তনের পর বিসিবির বেশির ভাগ পরিচালক আড়ালে। তাঁদের কমিটির কাজকর্ম ঠিকভাবে চলছে তো! স্থায়ী কমিটিগুলো পুনর্গঠনের তাড়া আছে তাই। পাকিস্তান সফরে দলের সঙ্গে থাকা সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে তো খেলাতে হবে! পূর্বাচল স্টেডিয়ামের দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে। প্রশ্নবিদ্ধ এই স্টেডিয়ামের কাজ কি এগোতে দেওয়া যাবে? ওদিকে অনেক দুর্বল ব্যাংকে গচ্ছিত আছে বিসিবির কোটি কোটি টাকার এফডিআর। সেগুলোরই–বা ভবিষ্যৎ কী? বিপিএলের পরের আসরেরই–বা কী হবে!
সব কটি কাজ একই গতিতে এগিয়ে নিতে হলে বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদকে হতে হতো দাবা খেলার ঘোড়ার মতো, যে কিনা একলাফে আড়াই ঘর চলে যেতে পারে। ফারুক চলছেনও অনেকটা সেভাবেই। তবে আশার কথা, কঠিন এই সময়ে কিছু পরিচালককে অন্তত সঙ্গে পাচ্ছেন তিনি।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ছাড়াও বিসিবিতে পরিচালক পদ ২৪টি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অনুরোধে এনএসসি মনোনীত দুই পরিচালকের একজন জালাল ইউনুস পদত্যাগ করেছেন। অন্যজন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম তা না করলেও পরে এনএসসিই তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নাজমুল হাসান দেশান্তরি হওয়ায় এনএসসি মনোনীত হয়ে আসা নতুন পরিচালক ফারুক নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছেন। সঙ্গে নতুন পরিচালক হিসেবে এসেছেন নাজমূল আবেদীনও।
তারপরও বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক শূন্যতা। আওয়ামী লীগের নেতা বা আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ পরিচালকেরা দৃশ্যপট থেকে উধাও। তাঁদের মধ্যে নাজমুল হাসান ছাড়াও আছেন আ জ ম নাসির, শেখ সোহেল, নজীব আহমেদ, শফিউল আলম চৌধুরী, গাজী গোলাম মোর্তজা, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, নাঈমুর রহমান, তানভীর আহমেদ ও আনোয়ারুল ইসলাম। এ ছাড়া আরেক পরিচালক মনজুর কাদের অসুস্থতার কারণে অনেক দিন থেকেই বিসিবির কর্মকাণ্ডে নেই। দেখা যাচ্ছে না চট্টগ্রামের মনজুর আলমকেও। এ ছাড়া আরও দুই পরিচালক এনায়েত হোসেন এবং ওবেদ রশিদ নিজাম পারিবারিক কারণে অনেক দিনই দেশের বাইরে।
বাকিদের মধ্যে ফারুক যখন যাঁকে চাইছেন, তাঁকেই পাচ্ছেন। তাঁদের সংখ্যা অবশ্য খুব বেশি নয়। নাম ধরে বললে মাহবুবুল আনাম, আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ, ইফতেখার আহমেদ, কাজী ইনাম আহমেদ, ফাহিম সিনহা, সাইফুল আলম চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন চৌধুরী। ফারুক সভাপতি হওয়ার আগে বিসিবির প্রতিনিধিদলের ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পরে বোর্ড সভায় তাঁদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এই যে হঠাৎ করে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে পড়ে গেলেন, সবকিছু কীভাবে সামলাচ্ছেন ফারুক? বিসিবির নতুন সভাপতি এর জবাবে গতকাল বলেছেন, ‘যে রকমই হোক বিসিবিতে একটা পেশাদার করপোরেট কাঠামো আছে। তাদের মাধ্যমেই আমরা কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আছেন, ক্রিকেট অপারেশনসে শাহরিয়ার নাফীস আছে। যে যার কাজটা করলে খুব যে সমস্যা হবে, তা নয়।’
২১ আগস্ট বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কয় দিনেই সহকর্মীদের মধ্যে গোছানো ও স্পষ্টবাদী সভাপতি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছেন ফারুক। জরুরি বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছেন। সাজ্জাদুল আলম না থাকায় টুর্নামেন্ট কমিটিতে চেয়ারম্যান নেই। অথচ সামনেই জাতীয় লিগ। সেটাকে যেমন অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, মাথায় রাখছেন বিসিবির গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের বিষয়টিও। প্রায় সব বিষয়েই সবার মত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অনেককে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে স্থায়ী কমিটিগুলোর শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছেন। অবশ্য আগামীকালের বোর্ড সভায় এসব দায়িত্ব নির্দিষ্টভাবে বণ্টন হয়ে যাওয়ার কথা। সক্রিয় সব পরিচালককেই দু–তিনটি করে কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বর্তমানে বিসিবির সক্রিয় পরিচালকদের একজন কাজী ইনাম আহমেদ বলছিলেন ফারুক আহমেদের সঙ্গে গত কয়েক দিন কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা, ‘বোর্ড সভাপতি নিয়মিতই আমাদের সঙ্গে বসছেন। যেহেতু এখন অনেক কমিটিতেই চেয়ারম্যান নেই, উনি আমাদের সবার মতামত নিচ্ছেন। সবাইকে সুযোগ দিচ্ছেন কথা বলার, যাতে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারি।’
ফারুক আহমেদ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন, পরে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বও। তবে ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে তাঁর খুব একটা পরিচিতি নেই। তাঁর সেই জীবন শুরুতেই কিনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে উত্তপ্ত আসনে! অবশ্য ফারুক যে চরিত্রের, তাতে এমন কিছুতেও তাঁর আনন্দ খুঁজে নেওয়ার কথা! তিনি নিজেও সেটাই বললেন গতকাল, ‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। এটা সে রকমই আরেকটা চ্যালেঞ্জ।’
prothom alo