‘কিউই বধ’ করা হলো না বাংলাদেশের

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ২২:২৪, আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৩৩
আজও পারলো না বাংলাদেশ – সংগৃহীত

চেন্নাই থেকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কোনো রূপকথা লেখা হয়নি, কোনো ইতিহাসও গড়া হয়নি। আরো একটা পরাজয় টাইগারদের সঙ্গী। হার থেকেও লজ্জার হারের ধরণ। ব্যাটে কিংবা বলে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সাকিব বাহিনী। অনায়াসেই আসরে তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

শুক্রবার এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। টসে হেরে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ২৪৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। ৪৩ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পায় তারা।

অবশ্য মাত্র ১২ রানে নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেট তুলে লড়াইয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। রাচিন রবিন্দ্র ফেরেন ৯ রানে, মোস্তাফিজের শিকার হয়ে। এরপর মাঠে আসেন কেন উইলিয়ামসন। তার ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি ৮ মাস পর ওয়ানডে খেলতে এসেছেন।

কিউই অধিনায়কের শুরুটা ছিল ধীর গতির। শুরুতে দেখে-শুনে ব্যাট করলেও পরে বলের সাথে তাল মেলান তিনি। ডেভন কনওয়েকে নিয়ে বড় করে তুলেন দ্বিতীয় উইকেট জুটি। প্রায় শতরানে যখন দলের সংগ্রহ, তখন এই জুট ভাঙেন সাকিব আল হাসান।

২০.১ ওভারে ভাঙেন এই জুটি। এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন কনওয়ে। ফলে ৯২ রানে এসে দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয়। কনওয়ে ফেরেন ৫৯ বলে ৪৫ রান করে।

কনওয়ে ফিরলে উইলিয়ামসন সাথী হিসেবে পান ডেরিয়েল মিচেলকে। দু’জনের যুগলবন্দীতে আসে শতাধিক রান। এই জুটি আর ভাঙতে পারেনি সাকিব-তাসকিনরা। কেন উইলিয়ামসন ১০৭ বলে ৭৮ করে চোট পেয়ে সেচ্ছায় উঠে গেলে থামে তাদের জুটি।

বাকি কাজটা একাই সামলে নেন ডেরিয়েল মিচেল। দ্রুত গতিতে রান তুলে কমাতে থাকেন ব্যবধান। শেষ পর্যন্ত ৬৭ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংসেই নিশ্চিত হয় নিউজিল্যান্ডের জয় ও বাংলাদেশের হার। ১১ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন গ্লেন ফিলিপস।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাও উপহার দিতে ব্যর্থ ছিল দল। ব্যাটিং ছিল গড়পড়তা। মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ভর করে ৯ উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৪৫ রান করে মান বাঁচায় বাংলাদেশ।

ইনিংসের একদম প্রথম বল থেকেই বিপর্যয়ের শুরু। চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট বিলিয়ে আসেন লিটন দাস। কোনো রান যোগ হবার আগে ফেরেন গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে।

০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙায় শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন মেহেদী মিরাজ ও তানজিদ তামিম। অনেকটা সাচ্ছন্দ্যেই খেলতে থাকেন দুজনে। ৪০ রানের জুটি গড়ে দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস।

তবে বেশিদূর এগোয়নি তাদের চেষ্টা। ফার্গুনসনের জোড়া আঘাতে ফের পথ হারায় টাইগাররা। অষ্টম ওভারের শেষ বলে তামিমকে ফিরিয়ে ভাঙেন জুটি। আর ১১.৪ ওভারে ফেরান মিরাজকে। ১৭ বলে ১৬ রান করেন তামিম। মিরাজ আউট হন ৪৬ বলে ৩০ করে।

মিরাজ আউট হবার দুই বল পরই ফেরেন চারে নামা নাজমুল শান্ত। ১৩তম ওভারে প্রথম বলেই শান্তকে ৭ রানে ফেরান গ্লেন ফিলিপ। ৫৬ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শঙ্কা দেখা দেয় বড়সড় অঘটনের।

সেখান থেকে অধিনায়ক সাকিবকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন মুশফিক। মুশফিক সাচ্ছন্দ্যে খেললেও খুব একটা সাবলীল ছিলেন না সাকিব আল হাসান। শুরুর দিকে প্রতিটা রান নিতে তাকে বেশ কসরত করতে হয়েছে তাকে।

তবে ইনিংসের শেষদিকে এসে নিজেকে ফিরে পান, জোড়া ছক্কায় দারুণ কিছুর সম্ভাবনা জাগান। তবে তা সেই পর্যন্তই। ফার্গুনসনের তৃতীয় শিকার হয়ে থামে তার ইনিংস। আউট হবার আগে ৫১ বল থেকে করেন ৪০ রান। ৩০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ১৫২।

সাকিব আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। ভারত বিশ্বকাপে যা তার দ্বিতীয় ফিফটি। তবে ইনিংসটা শতকে রূপান্তর করতে পারেননি, আউট হন ৭৫ বলে ৬৬ রানে। দ্রুত ফেরেন তাওহীদ হৃদয়ও, সাতে নেমে আউট হন ১৩ রানে। ১৮০ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

আটে নেমে মাহমুদউল্লাহ তাসকিনকে নিয়ে চেষ্টা চালান লড়াইয়ের। তাসকিনও নিরাশ করেননি, দুই ছক্কায় ১৭ রান করেব তিনি। সেই সাথে দলকে পৌঁছে দেন দুই শ’র ঘরে। এরপর বলতে গেলে একাই ইনিংসটা আড়াই শ’র কাছাকাছি নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৪১ রানে।

এই নিয়ে টানা তিন জয়ে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। বিপরীতে টানা দুই হার বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন যেমন কঠিন করে তুলেছে, আত্মবিশ্বাসও নিয়ে গেছে তলানিতে।