কার্গিলে নিহত সেনার মেয়ের মন্তব্যে ভারতে হৈচৈ

কার্গিলে নিহত সেনার মেয়ের মন্তব্যে ভারতে হৈচৈ

  • Image captionকারগিল যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণ

কার্গিল যুদ্ধে নিহত এক ভারতীয় সেনার মেয়ের সোশাল মিডিয়াতে করা মন্তব্যকে নিয়ে শুরু হয়েছে ‘দেশপ্রেম-বিতর্ক’ আর হুমকি – যাতে যোগ দিয়েছেন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বিজেপি নেতা এমনকি মন্ত্রী পর্যন্ত অনেকেই।

গুরমেহার কাউর নামে নিহত ভারতীয় সেনার মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছিলেন – ‘পাকিস্তানের হাতে নয়, আমার বাবা নিহত হয়েছিলেন যুদ্ধের হাতে’।

এর পরই কুড়ি বছর বয়সী গুরমেহার কাউরকে নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে চরম ব্যঙ্গবিদ্রূপ । ক্রিকেটার বীরেন্দর সেহওয়াগ থেকে শুরু করে বিজেপির এমপি-রা অনেকেই তাকে নিয়ে মশকরা করছেন, ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু পর্যন্ত বলেছেন – ‘কে তার মনটা বিষিয়ে দিচ্ছে তা দেখা দরকার।’

গুরমেহার অভিযোগ করেছেন, তাকে ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে – আর প্রকাশ্যে বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপি-র নিন্দা করার পর থেকেই তাকে এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

দিল্লি ইউনিভার্সিটির রামযশ কলেজে বিতর্কিত ছাত্র নেতা উমর খালিদকে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল রাজধানীর ছাত্র রাজনীতি – আর তাতে এখন নতুন মাত্রা যোগ করেছেন কার্গিল যুদ্ধে নিহত ক্যাপ্টেন মনদীপ সিংয়ের মেয়ে গুরমেহার কাউর।

ফেসবুকে এবিভিপি-র সমালোচনা করেছিলেন তিনি, আর বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাদের দেওয়া জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা তিনি মানেন না – কিন্তু এর পর থেকেই তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

কারগিল যুদ্ধছবির কপিরাইটARKO DATTA
Image captionকারগিল ১৯৯৯ : ভারতীয় একটি কামান

বিবিসিকে গুরমেহার বলছিলেন, “ফোন বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় আমাকে দেশদ্রোহী বলে গালিগালাজ করা হচ্ছে। আমি কারও কাছে দেশপ্রেমের প্রমাণ দেব না, কিন্তু যারা আমার মতো একজন ভারতীয় নাগরিককে ধর্ষণের হুমকি দেয় তাদের আগে দেশপ্রেমের পরীক্ষা হওয়া দরকার।”

পাকিস্তান নয় – বরং যুদ্ধকেই যে তিনি বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন, সে কথা প্ল্যাকার্ডে লিখে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছিলেন গুরমেহার।

তাকে বিদ্রূপ করে অবিকল একই ভঙ্গীতে নিজের ছবি এদিন পোস্ট করেন ক্রিকেটার বীরেন্দর সেহওয়াগ, যার প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘দুটো ট্রিপল সেঞ্চুরি আমি করিনি, করেছে আমার ব্যাট’!

আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজেপি এমপি প্রতাপ সিমহা দাউদ ইব্রাহিমের ছবি পোস্ট করেন, যার নিচে লেখা ছিল ‘মুম্বইয়ের বিস্ফোরণ আমি ঘটাইনি, ঘটিয়েছে আমার বোমা’!

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সকালেই টুইট করেন, কারা গুরমেহারের মনকে দূষিত করে তুলেছে সেটা দেখা উচিত।

নিজের বক্তব্যের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে মি রিজিজু পরে বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চয় থাকবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি দেশকে টুকরো টুকরো করার শ্লোগান দেবেন বা আফজল গুরুকে সমর্থন করবেন।”

“ভারতে স্বাধীনতা আছে বলেই আশেপাশের সব দেশ থেকে নির্যাতিত হলে লোক ভারতেই আসতে চায়। এ দেশের নুন খেয়ে এ দেশকেই গালি দেবেন, তা চলবে না”, বলেন তিনি।

সরকার যখন এ কথা বলছে, তখন শাসক দলের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি দিল্লির রামযশ কলেজে আজ আয়োজন করেছে ভারতের বিশাল জাতীয় পতাকা নিয়ে বিরাট মিছিল – যার নাম দেওয়া হয়েছে তিরঙ্গা মার্চ।

দিল্লি ইউনিভার্সিটিকে দেশবিরোধীদের আখড়া হতে দেওয়া চলবে না, সেই দাবিতে মিছিল থেকে ঘন ঘন উঠেছে ‘ভারতমাতা কি জয়’ শ্লোগান।

দিল্লি ইউনিভার্সিটির প্রবীণ অধ্যাপক নির্মলাংশু মুখার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, আসলে জাতীয়তাবাদকে নতুন পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা থেকেই ক্যাম্পাসে এই সংঘাতের সূত্রপাত।

তার কথায়, “বিজেপি চাইছে জাতীয়তাবাদকে একটা সঙ্কীর্ণ সংজ্ঞায় বেঁধে ফেলতে – যাতে তাদের আধিপত্যবাদী বা কিছুটা ফ্যাসিবাদী শাসনকে মানুষের চোখে বৈধ করে ফেলা যায়। আর সেই জাতীয়তাবাদী ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলার সহজ রাস্তা হল সব কিছুতে কাশ্মীর আর মুসলিম ইস্যুকে টেনে আনা।”

অধ্যাপক মুখার্জি আরও বলছিলেন, “কাশ্মীরে জঙ্গী দমনের নামে আর বস্তারে মাওবাদী দমনের নামে যা হচ্ছে তাতে ভারতের গরিষ্ঠ অংশের মানুষের সমর্থন আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু সেই কাশ্মীর বা বস্তারকে কেন্দ্র করেই বিজেপি একটা নতুন জাতীয়তাবাদের ধারণাকে জনপ্রিয় করে তুলতে চাইছে – তাদের রাজনীতিও এটাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে।”

সেই সংঘাতেরই সবশেষ বলি হলেন গুরমেহার কাউর – যিনি আঠারো বছর বাবাকে যুদ্ধে হারিয়েছেন, আর এখন প্রকাশ্যে নিজের স্বাধীন চিন্তাভাবনার কথা বলে হারালেন নিজের নিরাপত্তা – গোটা ভারতের সামনে চেষ্টা হল তাকে দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়ার।

1 COMMENT

  1. Gur Meher Kaur is right to say that her father was killed by war and not Pakistan. There are reactions in the form of country wise debate on her patrotism and dissent from India nationalists,BJP leaders, MPS and even ministers. Eminent Cricketer Biredra Shebag, Home minister & many people are making fun with her, some are even threatening her. Some are even comparing the action as an intention dividing the country into smaller parts. In an argumentative india there are many people with many ideas, many opinions, many agreements and dis agreements. Basically root of all these are parties, politics and politicians and their greed for self aggrendiswment, power and wealth. The greatest political deception was initited by the British resulting division of one india into India,Pakistan & Bangladesh and war in kashmir also followed as a result. Now our politicians have also divided one nation into several caste, creed, religion, ethnicity etc for their political advantage. Greed for ledership created one state for each with India for Nehru-Mountbatten and Pakistan for Jinnah with Mahatma Gandhi as witness. Despite having homogenuinity in nation hood Bengal and Punjab were divided and Kashmiris are put to suffer a never ending war.Gur Meher Kaur’s father is fighting a war for 18 years. She lived so long deprived of love and care from her father and there are so many ill fated on both side of the fence.Modi, BJP MPs and politicians and for that matter Congress also will not themselves take part in this risky game of war except prolong its tenure as a bon-fire.Why can’t they think of confederating the zones and individual states with their own national identity and alolow them to live upto their choice under one umbrella of united India.If it sounds too idealistic why can’t you integrate under SAA$RC like ASEAN and European Union. Instead you will prefer wasting part of short life in this world abusing Gur Meher Kaur-this seems to me as a sadistic fun.

Comments are closed.