স্টাফ রিপোর্টার
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
৭ই ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, রুহুল কবীর রিজভীসহ দলের কয়েকশ নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। তাদের অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। কারাবন্দি এসব জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন দপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, কারাবন্দি বিএনপি’র শীর্ষনেতাসহ কয়েক শতাধিক নেতাদের প্রায় ২৪ ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ শীর্ষ নেতাদের মানসিক নির্যাতনে রাখা হচ্ছে। এটা মানবাধিকার ও সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এমরান সালেহ বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালামসহ শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। গায়েবি মামলায় বয়োজ্যেষ্ঠ এই নেতাদের কারাবন্দি করায় তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে। কারাগারে তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।
তিনি বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী অনেক নেতা ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু অনেককে এখনো ডিভিশন দেয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তাদের জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বারবার তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। তারা গুরুতর অসুস্থ। তারা বয়োজ্যেষ্ঠ। তা সত্ত্বেও সরকারের নির্দেশে তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। আমি তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী সেলের তালা দিনের বেলা খুলে দেয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাদের তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হচ্ছে। ভেতরে তাদের মানসিক নির্যাতনে রাখা হচ্ছে বলে আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে তারা জানতে পারছেন। বিএনপি’র নেতাদের আত্মীয়-স্বজনেরা যখন কারাগারে দেখা করতে যান, কল দেন, তখন দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না।
প্রিন্স অভিযোগ করে বলেন, সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। গাজীপুরে মিথ্যা গায়েবি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি নেতা আলী আজম খান তার মায়ের মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে জানাজার নামাজে অংশ নিতে গেলে তাকে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো হয়। সে এজাহারভূক্ত আসামি নন, এমনকি মামলার বাদী আল্লাহর কছম খেয়ে বলেছেন যে ওই ঘটনার সে কিছুই জানে না। এমনকি এই মামলার বাদীও তিনি নন। পুলিশ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গায়েবি মামলাটি দায়ের করেছেন। প্রিন্স আরও বলেন, তিনি কোনো দুর্ধর্ষ খুন বা জঙ্গি মামলার আসামিও নন। বিচারাধীন এ ধরনের একটি গায়েবি মামলার আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানোর ঘটনা বেআইনি, নজিরবিহীন, সংবিধান বিরোধী ও মানবাধিকার পরিপন্থি। এটি সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রিন্স বলেন, গোটা জাতি জানে ১/১১ ছিল শেখ হাসিনা ও দেশি- বিদেশি চক্রান্তের একটা ফসল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনদের সুক্ষ কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন। সে সরকার ছিল ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনদের এক্সটেনশন মাত্র। সে থেকে এখন পর্যন্ত জোর করে ও দাপট দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারি ১৫৪টি আসনে কোনো ভোট হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনাসহ ১৫৪ এমপি। বাকি আসনে শতকরা ৫ভাগ ভোট পড়েনি। ভোটকেন্দ্রে চতুষ্পদ প্রাণীদের বিচরণ ছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা। দেশি-বিদেশিসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেসব নির্বাচনের খবর প্রকাশিত হয়েছে হেডলাইন হয়ে। দেশে তো নয়ই, বিশ্বের কোথাও সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বরং দাতাসংস্থাসহ বিদেশি রাষ্ট্রদূতগণ বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে আগের রাতের ভোটের কথা তারা শুনেননি। তিনি আরো বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নামে তারা লুটের রাজ্য কায়েম করেছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে, বাকস্বাধীনতা ফিরে পেতে, ন্যায়বিচার পেতে, ফ্যাসিবাদ থেকে বাঁচতে প্রকাশ্য রাজপথে লড়াই করছে।