by Salman Samil 16 August 2023
এক).
❝…আমি কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলাম না। আমি শুধু লিখতাম এবং কথা বলতাম, সব সময়ে অসংকোচে কথা বলতাম। আমি রাতে থাকব কোথায়, পরের বেলা খাবার জোটাব কি করে তারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না। তবু বিপদে পড়ে গেলাম। কি করে যে প্রচার হয়ে গেছে যে আমি শিক্ষক-সাংবাদিকদের যোগ না দেয়ার জন্য প্রচার কার্য চালাচ্ছি। এই খবরটা শেখ সাহেবের বড় ছেলে শেখ কামালের কানে যথারীতি পৌঁছায়। শুনতে পেলাম তিনি আমাকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আমার অবস্থা হল ফাঁদে ধরা পশুর মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় গিয়ে একটা নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। একজন তো বলেই দিলেন, ভাই আমরা বউ ছেলে নিয়ে বসবাস করি। তোমাকে বাসায় বসতে দিতে পারব না। তোমার নামে নানা গুজব। তোমার সঙ্গে সম্পর্ক আছে জানলে বিপদে পড়তে পারি।
একজন ভগ্নিস্থানীয়া হাউজ টিউটরের বাসায় গিয়ে হাজির হই। আমার বিশ্বাস ছিল তাঁর কিছু উপকার করেছি। আমি খাইনি এবং কিনে খাওয়ার পয়সা নেই। লাজশরমের মাথা খেয়ে তাঁকে কিছু খাবার দিতে বলি। মহিলা পলিথিনের ব্যাগে কিছু মোয়া দিয়ে বললেন, ছফা ভাই, এগুলো পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনি খেয়ে নেবেন। আপনাকে বসতে দিতে পারব না।
উদ্দেশ্যহীনভাবে আমি বলাকা বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ওমা কিছু দূর যেতেই দেখি একখানা খোলা জিপে সাঙ্গপাঙ্গসহ শেখ কামাল। একজন দীর্ঘদেহী যুবক কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, দেখ কামাল ভাই, আহমদ ছফা যাচ্ছে। কামাল নির্দেশ দিলেন, হারামজাদাকে ধরে নিয়ে আয়। আমি প্রাণভয়ে দৌড়ে নিউ মার্কেটের ভেতর ঢুকে পড়ি। যদি কোনদিন স্মৃতিকথা লিখতে হয়, এই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিশদ করে বর্ণনা করব। ❞
– ছফামৃত, নুরুল আনোয়ার, পৃ: ১০০
দুই—
❝… শেখ মুজিবের বড় ছেলে শেখ কামাল ছিল অত্যন্ত বদ মেজাজী। বাবার মতো সেও বাংলাদেশকে তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করতো। তার পরিবার বা দলের সমালোচনা বা বিরুদ্ধাচরণকে কামাল রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে মনে করতো। শেখ মুজিব হয়তো তার ছেলের কিছু কিছু কান্ডকীর্তি পছন্দ করতেন না – কিন্তু তবুও তিনি তাকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে বাংলার আকাশে যথেচ্ছা ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন। ❞
— অ্যান্থনী মাসকারেণহাস, বাংলাদেশ : আ লেগ্যাসি অব ব্লাড, পৃ: ৪৩
তিন—
❝… আমি ড. কামালের বসার ঘরে ঢুকে শেখ সাহেবের পাশেই সোফায় বসলাম। তিনি আগে থেকেই অনেক কথা বলছিলেন। তাঁকে কিছুটা উত্তেজিতও মনে হচ্ছিলো। কালো গাউন পরা উকিলদের বিরুদ্ধে তিনি অনেক কিছু বলছিলেন। কারণ ঐ দিন ঢাকা হাইকোর্টের দেড়শো-দুশো উকিলের এক বিবৃতি শেখ সাহেবের জ্যোষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল কর্তৃক মাহমুদ আলীকে অপহরণ এবং আবাহনী ক্লাবে আটক রাখার বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। শেখ কামালের এই অপহরণের বিরুদ্ধে তখন শুধু উকিলরাই নয়, অনেক মহল থেকে জোর প্রতিবাদ ও সমালোচনা সমালোচনা হয়েছিল। ❞
— বদরুদ্দীন উমর, আমার জীবন (তৃতীয় খন্ড), পৃ: ৫১
চার—
❝… আবাহনী‘র সঙ্গে অন্য একটি টিমের খেলা চলছে। ‘আবাহনী‘ জিতবে। এগিয়েও আছে। ইউসুফ ভাই, আমি এবং শেখ কামাল একসঙ্গে বসে বাদাম খাচ্ছি এবং খেলা দেখছি। মধ্যমাঠে ‘আবাহনী‘র এক প্লেয়ার ফাউল করল। রেফারি ননী বসাক, পাকিস্তানের খ্যাতনাম্নী নায়িকা শবনমের পিতা, খেলা পরিচালনা করছিলেন। সে আবাহনীর বিপক্ষে ফাউল দিল। কিকও হয়ে গেল। এই ফাউল ধরাটা ঠিক, না বেঠিক বলা যাবে না। কিন্তু খেলার তাতে কোন লাভ-ক্ষতি হল না। কামাল কিন্তু গর্জে উঠল, দেখলেন, বেটা কিভাবে অন্যায় ফাউল দিল?
বঙ্গবন্ধু পুত্রের অভিমত! আমরা চুপ করেই রইলাম। খেলা শেষ হল। আমরা বিদায় নেব নেব করছি। ননী বসাক আমাদের দেখে মাঠ থেকে এদিকে উঠে এল। ক্রীড়ামন্ত্রী রয়েছেন, তাদের সভাপতি আমি রযেছি, শেখ কামাল রয়েছে। সে হাসিমুখে সবার সাথে হাত মিলাতে এগিয়ে এল।
কথা নেই, বার্তা নেই শেখ কামাল ননী বসাককে প্রচন্ড এক ঘুসি মেরে ফেলে দিল। তার মুখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগল। শেখ কামাল রাগতস্বরে তখন চিৎকার করছে, বেটা সবসময় এমনি করে ‘আবাহনী‘র বিরুদ্ধে বাঁশী বাজায়। ওকে আজ উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব।
তার রাগ তখনও কমেনি। আমরা দু‘জন হতভম্ব। আমাদের সামনে কামাল এ কী করল ! আমরা মুখ দেখাব কী করে? ননী বসাক বয়স্ক ব্যক্তি, সে তো কোন দোষ করেছে বলে জানি না। দোষ করলে আমাদেরকে বলা যেত। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হল। হাজার লোক ঘটনা স্বচক্ষে দেখল। বঙ্গবন্ধুর পুত্রের কাছে এ ব্যবহার যে কল্পনাও করা যায় না।
কামালকে হাত ধরে টেনে অফিসে নিয়ে এসে বললাম, কামাল তুমি এ কী কাজ করলে? নিজ হাতে রেফারিকে প্রহার করা তোমার সাজে? কামাল বলতে লাগল, আপনি জানেন না, ও বেটা সবসময় বদমায়েশী করে। ওকে আরও মারা উচিত।
অনেক কষ্টে তাকে নিবৃত্ত করলাম। পাশের ঘরে আহত ননী বসাককে কি বলে সান্ত্বনা দেব ভাষা খুঁজে পেলাম না। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে চলে এলাম। গাড়িতে গম্ভীর ইউসুফ ভাইকে বললাম, বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকে জানানো প্রয়োজন।
তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধু এ কথা শুনে আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন না। বললাম, এ ধরণের হঠকারিতায় বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে। আমরা তার কর্মী, তার মঙ্গল চাই। না বললে তিনি একসময় বলতেও পারেন, তোরা আমাকে জানাসনি কেন?
ইউসুফ ভাই বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করলেন এবং আমরা তখনই গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ঘটনা জানালাম। বললাম, আপনার পুত্রের পক্ষে এ কাজ একান্তই অনভিপ্রেত। তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন, আমি সব শুনেছি, ননী বসাককে এভাবে মারা কামালের ঠিক হয়নি। তবে ননী বসাকও ভালো করেনি! ❞
— শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (মুজিব সরকারের প্রথম চীফ হুইপ), বলেছি বলছি বলব, পৃ: ১৭৩-১৭৫
(আবহনীর মাঠ ছিল ঢাকা মিউনিসিপালিটির মাঠ। সরকারি মাঠ, সবার জন্য উন্মুক্ত। ৭১ এর পরে এই মাঠ দখল করে আবহনীর ক্লাবের মাঠ বানানো হয়).
পাঁচ—
❝… তেহাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুজিববাদী ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে নির্বাচন করে। তাদের প্যানেলে ডাকসুর সহ-সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নূহ-উল-আলম লেনিন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ছাত্রলীগের ইসমত কাদির গামা। পক্ষান্তরে জাসদ-ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আ ফ ম মাহবুবুল হক ও জহুর হোসেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় ভোট গণনার সময় দেখা গেল, মাহবুব-জহুর পরিষদ বিপুল ভোটে এগিয়ে। তাদের জয় সুনিশ্চিত। হলগুলোতেও অবস্থা একই রকম। রাত আটটার দিকে লেনিন-গামার সমর্থকেরা ভোট গণনার কেন্দ্রগুলোতে হামলা করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে এক হল থেকে অন্য হলে যান। প্রতিপক্ষ দলের ছাত্ররা এবং ভোট গণনার কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা আতঙ্কিত হয়ে যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। এ প্রসঙ্গে ‘মুজিববাদী ছাত্রলীগে‘র একজন কর্মীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উদ্ধৃত করা যেতে পারে :
… সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে আমরা মিছিল নিয়ে বের হয়েছি। সেদিন আমাদের সাথে ৫০-৬০ জন নেতৃস্থানীয় নেতা-কর্মী ছিল। এদিকে নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমর্থিত পরিষদ জয়ী হতে পারে আর মুজিবপন্থী পরিষদ পরাজিত হতে চলেছে এমন খবর পেয়ে শেখ কামাল ডাকসুর বাক্স ছিনতাই করে। মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় আমরা দেখি শেখ কামাল বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে রযেছে। তার মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা, শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। তার পায়ের কাছে কয়েকটি ব্যালট বাক্স। শেখ কামালের আশপাশে কয়েকজন বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মিছিল নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমরা ধারণাও করিনি যে শেখ কামাল ইতিমধ্যে ডাকসুর বাক্স ছিনতাই করে ফেলেছে। (ইজাজ আহমেদ বিটু / হতভাগা জনগণ – প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, রাঢ়বঙ্গ, রাজশাহী)।”ল
… ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেটা ছিল একটা কলঙ্কজনক দিন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন জিতে যাবে, এটা মেনে নেওয়ার মতো উদারতা আওয়ামী লীগ সরকারের ছিল না। জাসদ থেকে অভিযোগ করা হয়, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেওয়া হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ জানালে তিনি কোনো রকমের ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে সরকারে যোগ দেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ❞
— মহিউদ্দিন আহমদ, জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের অস্থির সময়ের রাজনীতি, পৃ: ১০৫-১০৬
ছয়—
❝…৪ জুন ১৯৯২ সালে সিরাজ সিকদারকে হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও মোহাম্মদ নাসিমসহ সাতজনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। সিরাজ সিকদার পরিষদের সভাপতি শেখ মহিউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন: ১. সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ২. আবদুর রাজ্জাক এমপি, ৩. তোফায়েল আহমেদ এমপি, ৪. সাবেক আইজিপি ই এ চৌধুরী, ৫. সাবেক রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক কর্নেল (অব.) নূরুজ্জামান, ৭. মোহাম্মদ নাসিম এমপি গং। আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ১০৯ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর্জিতে বলা হয়, ” ……. সে সময় ১ নং আসামি মাহবুব উদ্দিন তাঁর রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সিরাজ সিকদার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেখ কামাল রাগের মাথায় গুলি করলে সিরাজ সিকদারের হাতে লাগে। ওই সময় সব আসামি শেখ মুজিবের উপস্থিতিতেই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে মারতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এর পর শেখ মুজিব, মনসুর আলী এবং ২ থেকে ৭ নং আসামি সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১ নং আসামিকে নির্দেশ দেন।❞
— জিবলু রহমান, ভাসানী মুজিব জিয়া : ১৯৭২-১৯৮১, পৃ: ১৮৯
সাত—
❝…Sheikh Kamal himself kidnapped two prominent pro-JSD student leaders, A.F.M. Mahbubul Haque and Aftabuddin Ahmed, in the morning of the election day physically abused them and kept them conf i ned to a house for the whole day, so that they would not be able to work for opposition candidates. Kamal released them on the condition of not publicizing the incident in the media. ❞
— Taj Hashmi, Fifty years of Bangladesh, P- 148
আট—
❝…Mujib’s only brother Sheikh Naser also became a very rich business-man, although he (like Mujib) came from a lower-middle-class family.
Mujib’s eldest son Kamal was a partner of several business fi rms. He was also very inf l uential in the government and was notorious for his brash behaviour and abusive language. Several eyewitness accounts reveal his public assault on a football referee Nani Basak for conceding a foul against Kamal’s football team, Abahoni.24 This writer is an eyewitness to Mujib’s sons’ and nephews’ rude behaviour in public, and threatening people by brandishing handguns, by nephew Moni and younger son Jamal, who was hardly eighteen in 1973. ❞
— Taj Hashmi, Fifty years of Bangladesh, P- 120
নয়—
❝ স্পেশাল পুলিশের সাথে গুলী বিনিময়ঃ প্রধানমন্ত্রীর তনয়সহ ৫ জন আহত। ❞
মূল খবর: গত শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকার কমলাপুর স্পেশাল পুলিশের সাথে এক সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রী তনয় শেখ কামাল, তার ৫ জন সাঙ্গপাঙ্গ ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট গুলীবিদ্ধ হয়েছে। শেখ কামাল ও তার সঙ্গীদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নয়, দশ ও তেত্রিশনম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পুলিশ সার্জেন্ট জনাব শামীম কিবরিয়াকে ভর্তি করা হয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।
—দৈনিক গণকন্ঠ, ১৯/১২/৭৩
কেন এই গোলাগুলি তা নিয়ে ভিন্নমত আছে।
(I) বিবিসিসহ বিভিন্ন রেডিওতে রিপোর্ট হয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী-তনয় শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করে ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন।
— মহিউদ্দিন আহমদ, প্রতিনায়ক, পৃ: ৩০১
(II) ১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭২ সাল। রাত গভীর হয়ে আসছে। শেখ কামাল তার সঙ্গী সামন্ত নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে সিরাজ শিকদারের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে। হাতে তাদের স্টেনগান আর রাইফেল। ঢাকা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ পুলিশ সুপার মাহবুবের অধীনে একই কাজের জন্যে উপর থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছিলো। কামালেরা তা জানতো না। শিকার খোঁজের পালায় পথিমধ্যে দু‘দল সামনা-সামনি হয়ে গেলো। ঐ পুলিশের স্কোয়াডটি সার্জেন্ট কিবরিয়ার নেতৃত্বে একটা টয়োটা গাড়ীতে সিরাজ শিকদারের তল্লাশী চালাচ্ছিলো। মাইক্রোবাসে অস্ত্রধারী দল দেখতে পেয়ে পুলিশ কারটি তাদের অনুসরণ করতে লাগলো। কিবরিয়া ভাবলো সে শিকদার গ্যাং-এর সন্ধান পেয়েছে। অন্যদিকে মাইক্রোবাসের কামাল ভাবলো শিকদারের লোকেরা ঐ টয়োটাতে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এসে একদল অন্যদলের উপর চড়াও হলো। গুলি বিনিময়ের পালায় শেখ কামালের গলায় গুলি বিদ্ধ হলো। সামান্যের জন্যে তার শ্বাসনালী রক্ষা পেলো। গলার ক্ষতস্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলে কামাল মাইক্রোবাস থেকে লাফিয়ে পড়ে চিৎকার করে বলতে থাকলো, আর গুলি ছুঁড়োনা। আমি কামাল! আমি কামাল! তাদের ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ কামালকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
— অ্যান্থনী মাসকারেণহাস, বাংলাদেশ : রক্তের ঋণ, পৃ: ৪৩-৪৪