দুটো বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত চিফ প্রসিকিউটর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম। গণহত্যার এভিডেন্স কালেক্ট ও দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। তিনি বলেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আবার কারও প্রতি জুলুমও করা হবে না। এটা হবে এমন একটা বিচার যে বিচারের পরে শহীদ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বাদীপক্ষসহ আসামিপক্ষও মনে করবে তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত সৎ, দক্ষ ও সাহসী বিচারক নিয়োগ দিয়ে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান নতুন এই চিফ প্রসিকিউটর। দুই চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় একটা কমন ইনস্ট্রাকশন ছিল গুলি করে সব মেরে ফেলা। এ অপরাধের যে আলামতগুলো সেগুলো সংগ্রহ করা, কম্পাইল করা এটা একটা চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আসামিরা এখনো পলাতক, বিশেষ করে প্রধান আসামি দেশত্যাগ করেছেন।
অনেকে এখনো দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
গণহত্যা চালানোর অভিযোগের প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কীভাবে বিচারের সম্মুখীন করবেন- এমন প্রশ্নে আইনজীবী তাজুল বলেন, আইনগতভাবেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সেটা আমরা শুরু করবো। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এ চুক্তিটি হয়েছিল। এই বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমেই তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যেহেতু অধিকাংশ মামলায় তাকে গণহত্যার প্রধান আসামি করা হয়েছে। সুতরাং এ প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে তাকে আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করবো।
গণহত্যার সাক্ষ্য প্রমাণ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেই গণহত্যা হয়েছে এর প্রমাণ বিভিন্নভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটিকে সংরক্ষণ করে আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে মামলাগুলো প্রমাণের যেই কাজ সেটি এখন আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে, যেহেতু ঘটনাগুলো তাজা, এ মামলায় যারা আসামি হবেন তারা এখনো বাংলাদেশে আছেন। অনেকে দায়িত্বেও আছেন। তারা এ আলামতগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করবেন। তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব এ আলামতগুলো দ্রুত সংরক্ষণ করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার হাতে নিয়ে আসা। যেন এ আলামতগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারি। তিনি সব ধরনের আলামত তদন্ত সংস্থা বা প্রসিকিউশনের কাছে পৌঁছানোর জন্য ছাত্র-জনতাসহ ভুক্তভোগীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তদন্তকালে আসামিদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, অপরাধগুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, তদন্তকালে আসামিদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন হবে। নিশ্চয়ই আমরা অপরাধীদের গ্রেপ্তার চাইবো। আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে যারা সম্ভাব্য অপরাধী তারা যাতে আদালতের জুরিসডিকশনে বাইরে চলে যেতে না পারেন। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা থাকবে।
আইন সংশোধনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সরকারের সঙ্গে বসে এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবো। তদন্ত সংস্থায় বেশকিছু সাংবাদিককে গণহত্যার অভিযোগে আসামি করে অভিযোগ করা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলো এখনো আমার কাছে আসেনি। বিষয়গুলো দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণহত্যার পর যখন একটি স্বৈরশাসকের পতন হয় তখন শহীদ ও নির্যাতিত পরিবার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে। আর এই প্রতিশোধ পরায়ণতার আগুন নেভানোর উত্তম পন্থা হচ্ছে একটা ন্যায়বিচার প্রদান করা। যারাই অন্যায় করেছে তাদের যদি বিচারের আওতায় এনে ন্যায়বিচার প্রদান করা যায়, তাদের যদি সাজা দেয়া হয় তখন তারা প্রতিশোধ পরায়ণতার পথ থেকে ফিরে আসবে। আর যারা ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের সন্তানদের খুন করেছে দ্রুততম সময়ে তাদের বিচার করা আমাদের প্রায়োরিটি ওয়ার্ক।
এদিকে, গতকাল দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পাওয়া চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট তাজুল ইসলামসহ চার প্রসিকিউটর যোগদান করেন। এরা হলেন- প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান।
সূত্র জানায়, গত ৫ই জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৩টি অভিযোগ কমপ্লেইন রেজিস্ট্রিভুক্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। অভিযোগগুলোর নথি-দালিলিক পর্যালোচনার কাজ চলছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সংস্থার উপ-পরিচালক মো. আতাউর রহমান।