রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ কর্ণফুলী নদী দখলের মহোৎসবে মেতেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নদীর বুকে অবৈধ মাছবাজার গড়ে তুলেছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কর্ণফুলী রক্ষার দায়িত্ব যে সংস্থার সেই বন্দর কর্তৃপক্ষও ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে ভরাট করে নদী ইজারা দিয়েছে প্রভাবশালীদের। এভাবে অপতৎপরতায় নদী হারিয়েছে প্রাণ।
শফিকুল ইসলাম মিনাস
সরেজমিনে দেখা যায়, অর্থনীতির চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ কর্ণফুলী নদীর অর্ধেক এখন ভূমিদস্যুদের কবলে। নদীর বুকে গড়ে উঠেছে মাছবাজারসহ অসংখ অবৈধ স্থাপনা।
এ কর্ণফুলী নদী বাঁচানোর দায়িত্ব যে বন্দর কর্তৃপক্ষের খোদ তারাই ২০১৬ সালে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে নদীর বুক ভরাট করে। পরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লিজ নিয়ে শাহ আমানত সেতুর পশ্চিমে অবৈধভাবে নদীর বুকে নতুন ফিশারিঘাট গড়ে তোলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এখানেই শেষ নয়। বন্দরের সহায়তায় রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেতুর পুর্বে গড়ে তোলেন বিশাল বালুর মহাল। সেতুর উভয় পাশে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে অবৈধ বসতি। শক্তিশালী একটি চক্রের ছত্রছায়ায় নদীতীরে চলতে থাকে বাঁশ, গাছসহ নানা ব্যবসা।
১৫ বছর ধরে এভাবেই চলছে নদী দখলের মহোৎসব। মাঝিরা বলছেন, দখলদাররা ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে এ নদী।
সাম্পান মাঝি রহিম উদ্দীন বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে সাম্পান চালাই কর্ণফুলীতে। আগে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে ছিল নদী। এখন ভূমিদস্যুরা গিলে খাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন বলছে, ১৯৮৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৩৬ বছরে নদীর প্রশস্ততা কমেছে ৫৪২ মিটার। তাদের করা এক জরিপ অনুযায়ী, এক যুগ আগেও শাহ আমানত সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীর প্রশস্ততা ছিল ৮৮৬ মিটার। এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৫১০ মিটারে। ভরে গেছে ২০ শতাংশ নদীর তলদেশ।
নদী গবেষক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, কর্ণফুলী বাঁচলে বাঁচবে দেশের অর্থনীতি। সবার আগে কর্ণফুলীকে গুরুত্ব দিতে হবে।
কর্ণফুলীর পাড়ে দুই হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা থাকলেও হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৯ সালে দুইশোর বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল জেলা প্রশাসন।
এখন সব সংস্থার সমন্বয়ে কর্ণফুলী দখলমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। নদী রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’
সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, চট্টগ্রাম শহরকে রক্ষা করতে হলে নদী ও খালগুলো রক্ষা করতে হবে। না হলে বন্দর অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। ৬০ বর্গমাইলের বন্দর নগরীকে বাঁচিয়ে রেখেছে যে ৫৭টি খাল; সেগুলোর অধিকাংশ সরু হয়ে গেছে। কিছু কিছু খাল এখনও দখলের কবলে পড়ে মৃতপ্রায়। যদিও জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় অধিকাংশের চলছে সংস্কার।