শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর নিজ জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন ঢাকার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে ঘরে ফেরা যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী। দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতেও শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর নিজ জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন ঢাকার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে ঘরে ফেরা যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী। দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতেও শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আজ মঙ্গলবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর গতকাল বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা ঢাকা ছাড়েন। আজ সকাল থেকে বাড়ির পথ ধরেন আরও অনেক শিক্ষার্থী।
আজ দুপুর ১২টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারগুলোতে বেশ ভিড়। কলেজপড়ুয়া তিন বন্ধু রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজের শিক্ষকেরা বাড়ি চলে যেতে বলেছেন। আরামবাগের একটি মেসে ১২ জন থাকতাম। সবাই আজ চলে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজীম আহমেদ ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের ফাহিম খান রাজশাহীর ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে বসে আছেন। তানজীম বলেন, ‘এটা সাধারণ ছুটি না। জাতীয় সংকটের সময়। শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য বন্ধ করা হয়েছে। সবার উচিত বাড়িতে থাকা।’
রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় ২টা ৪৫ মিনিট। ট্রেন ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট লেট। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত উত্তরবঙ্গ এলাকায় অনেক শিক্ষার্থীই এই ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে বসে ছিলেন।
ডেমরার দারুন-নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থী স্টেশনের ভেতরে নামাজ পড়ার জায়গার সামনে বসে ছিলেন। তাদের একজন আল-কোরআন ও ইসলামিক স্টাডিজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান তাসলিম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকেরা বলেছেন, সব সময় ঘরে থাকতে। বাইরে গিয়ে মেলামেশা না করতে।’
করোনার কারণে কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হার কমে গিয়েছিল। করোনা আতঙ্কে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মত দিচ্ছিলেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে, সরকার আজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়।
ঘরে ফেরার অপেক্ষায় স্টেশনে বসে থাকা শিক্ষার্থীরা মনে করেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত তখনই কার্যকর হবে, যদি শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে সতর্ক থাকেন। অকারণে ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা না করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন পুরান ঢাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। আজ তিন বন্ধু মিলে পাবনায় ফিরছেন। ফাতেমা বললেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটা ছোট। কিন্তু শিক্ষার্থী ১৫ হাজারের বেশি। ফলে সবাই আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।
দূরপাল্লার বাসগুলোতেও ঘরে ফেরা শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল। আরামবাগের হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল থেকেই বাসগুলোতে বেশ ভিড়। কোনো সিট খালি ছিল না। আজ সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে সিট খালি ছিল না। অধিকাংশ যাত্রীই ছিলেন শিক্ষার্থী।
Source: Prothom-Alo