করোনাভাইরাস: মহামারি হয়তো একদিন যাবে, কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতির ভাইরাস কোন ওষুধে দূর হবে?

ছবির কপিরাইট কাজী জেসিন

 

BBC Bangla     23 April 2020

খাটের নিচে চকচক করছে তেল, সোনার মত। জগতে কখনও কাউকে এভাবে খাটের নিচে রান্নার তেল লুকিয়ে রাখতে দেখা যায় নি। এ এক অত্যাশ্চর্য দৃশ্য।

বোতলে বোতলে ভর্তি খাটের নিচ। আর তার উপরে ঘুমিয়ে থাকতো কেউ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তেলগুলো পাহারা দিত।

স্টিফেন ব্লুমবার্গ নামে এক সৃষ্টিশীল চোর ছিলেন যিনি প্রতিটা লাইব্রেরি থেকে বই চুরি করতে করতে তার মোট বইয়ের মূল্য হয়েছিল ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। এইসব বই তিনি বিক্রি করার জন্য চুরি করতেন না।

বই চুরির পেছনে তার যুক্তি ছিল দুর্লভ বই ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেন সাধারণ জনগণ হস্তগত করতে না পারে।

তেল চুরি অবশ্য এরকম অভিনব, অদ্ভুত চিন্তা থেকে হয়নি। এর পেছনে আছে নিজের জন্য সম্পদ মজুদ করার হীন প্রয়াস।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত তেল এবং চাল চুরি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মানুষের মন্তব্য দেখে মনে হয় চুরি কখন করা যায়, কখন করা যায় না এই নৈতিক জ্ঞানটা চোরের থাকতে হবে।

রংপুরে একজন ব্যবসায়ীর বক্স খাটের ভেতরে রাখা টিসিবি পণ্য ১,২৩৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে পুলিশ, ১৫-০৪-২০২০।

Image caption রংপুরে একজন ব্যবসায়ীর বক্স খাটের ভেতরে রাখা টিসিবি পণ্য ১,২৩৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে পুলিশ (ছবি: রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ)

আলোর নিচে অন্ধকার

কেউ মানুষকে সরাসরি মারছে, আর কেউ ঘুরিয়ে মারছে এর মধ্যে নিশ্চয়ই তফাৎ আছে! মানুষের কেন রিলিফের দরকার পড়ে, বাংলাদেশে এতো মানুষ কেন দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে এই প্রশ্ন উত্থাপন করলে অনেকগুলো অঙ্ক সামনে এসে দাঁড়ায়।

বিশ্বব্যাংক আমাদের জানাচ্ছে, ২০০৫-২০১০ সময়ে যেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর এক দশমিক সাত শতাংশ হারে দারিদ্র কমেছে, সেখানে ২০১০-২০১৬ সময়ে দেশে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে বছরে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে। অর্থাৎ দেশে দারিদ্র কমার হার কমেছে।

অথচ আমরা প্রতিবছর অনেক বড় অঙ্কের ঘাটতি বাজেট দেখেছি। বড় বড় ব্রিজ, কার্ল ভাট, শহর জুড়ে উৎসব হলেই ঝকঝকে আলো দেখেছি। আলোর নিচে কেন এত অন্ধকার তবে?

কারো ঘরে ১০০ শত টাকা নেই চাল-ডাল কেনার, আবার কারো ঘরে কোটি কোটি টাকা লুকানো থাকে। এই লুকানো অর্থের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে গরীব মানুষের ভাগ্য। প্রতিবছর পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের সাথেই পাচার হয়ে যায় দরিদ্র মানুষের নিয়তি।

বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'ঝাড়ু মিছিল' ২০-০৯-২০১৯।

ছবির কপিরাইট Barcroft Media
Image caption বাংলাদেশে দুর্নীতি ঝাড়ু দিয়ে তাড়ানো যাচ্ছে না।

দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে চুরি এবং অর্থ পাচারের দৃশ্যের দিকে তাকালে এক ধরনের দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়। সর্বনিম্ন স্কোর, অর্থাৎ দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি, এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৪তম, যা ২০১৮-তে ছিল ১৩তম।

দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। যদিও মনে রাখা দরকার এটা একটা তুলনামূলক চিত্র যা অন্যান্য দেশগুলোর দুর্নীতির পরিমাণের সাথে সম্পর্কিত।

আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশে দুর্নীতির এক ভয়াবহ চিত্র দেখলাম। দুর্নীতির মাত্রা এবং নানারকম পন্থা রীতিমত বিস্ময়কর।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে, ২০১৫ সালে পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করে টাকা পাচার ও পণ্য রপ্তানি করার সময় কাগজপত্রে কম দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে ছয় বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫০,০০০ কোটি টাকার সম পরিমাণ।

জিএফআই ২০২০ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে, ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশে এভাবে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর প্রাক্তন গভর্নর আতিউর রহমান: রিজার্ভ চুরি কেলেঙ্কারির জের ধরে পদত্যাগ করেন ২০১৬ সালের ১৫ই মার্চ।

ছবির কপিরাইট Anadolu Agency
Image caption বাংলাদেশ ব্যাংক-এর প্রাক্তন গভর্নর আতিউর রহমান: রিজার্ভ চুরি কেলেঙ্কারির জের ধরে পদত্যাগ করেন ২০১৬ সালের ১৫ই মার্চ।

ব্যাংক জালিয়াতি

ছোট দেশ, বাংলাদেশের চুরি নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিউ ইয়র্ক শাখায় জমা রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যায় ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। দুই কোটি ডলার ফিরে আসলেও বাকি অর্থের হদিস আর মেলে না। তদন্তের নামে আড়াল হয়ে যায় সবকিছু।

হলমার্ক গ্রুপের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির কথা মানুষের ভোলার কথা না। জনতা ব্যাংকের এনন টেক্স গ্রুপ, থারমাক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের উধাও হয়ে যাওয়া সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা, ফারমার্স ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকা এসব শুধুই সংখ্যা না। বাংলাদেশের দরিদ্র শ্রমিকের- কৃষকের ঘামে তিলে তিলে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক সম্পদ।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এইসব জালিয়াতির পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, ২০১৯ এ এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

আমরা জানি ব্যাংকগুলোতে যাতে বড় ধরণের জালিয়াতি না হয় তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের, সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক পর্ষদ নিয়োগ হয় সাধারণত রাজনৈতিক বিবেচনায় । তারপরও কিভাবে জালিয়াতি হচ্ছে এটা বুঝতে কারো বেশি ভাবতে হবে না।

ঢাকার ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, ২৫-০৩-২০২০।

ছবির কপিরাইট Barcroft Media
Image caption ঢাকার ব্যাংক পাড়া মতিঝিল: কেন্দ্রীয় ব্যাংক-এর দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতি বাড়ছে।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিস্তার

মনে পড়ে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর সাবেক অর্থমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ”চার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি বড় কোনো ঘটনা নয়।” এই জালিয়াতি তাকে আহত করেনি, অবাক করেনি। তিনি তার মন্তব্যের জন্য পরে ক্ষমা চাইলেও, সাধারণ মানুষ জেনে যায় এইসব জালিয়াতিতে আমাদের শাসকেরা অবাক হন না।

বলার অপেক্ষা রাখে না আজ যারা রিলিফের জন্য, কয়েক কেজি চালের জন্য, এক বোতল তেলের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে এই অর্থে তাদের হক আছে।

ফরাসী দার্শনিক আলথুসার এ বিষয়ে বলেন, একটি রাষ্ট্রে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়ন একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন মাত্রায় দুর্বৃত্তায়ন দেখি, পরস্পরের সাথে পরস্পর যেখানে সম্পর্কিত।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিস্তারে আমরা দেখি কীভাবে শাসকগোষ্ঠী মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করে, রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে টাকার বিনিময়ে নিজেদের দলের মনোনয়ন পত্র বিক্রি করে, দলের পদ বিক্রি করে।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলগুলোর বিরুদ্ধে বারবারই অভিযোগ এসেছে পেশিশক্তি ব্যবহারের। কিন্তু এই পেশিশক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তারা বারবার ক্ষমতায় আসীন হয়। বর্তমান সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভেতরে টেন্ডার বাণিজ্য, অর্থকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হত্যা এ সবকিছুই নিজেদের পেশিশক্তিকে প্রদর্শন করে।

বাংলাদেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ০৪-০৫-২০১১।

ছবির কপিরাইট HOANG DINH NAM
Image caption বাংলাদেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন।

গণমাধ্যম আর দুর্নীতি

লুণ্ঠনের আরেক স্তরে দেখা যায় দুর্নীতি ও চুরির মধ্য দিয়ে প্রাপ্য নানা সুবিধা থেকে কীভাবে বঞ্চিত হতে থাকে সাধারণ মানুষ। একই পরিক্রমায় লুণ্ঠন হয় দুর্যোগকালে তার বেঁচে থাকার জন্য অতি আবশ্যক রিলিফ।

এ্যালথুসার বলেন, রাষ্ট্রে কতগুলো মতাদর্শিক এপারেটাস থাকে যেমন, পরিবার, প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম যার মধ্য দিয়ে মতাদর্শ প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

যে বাবা একটি স্বল্পবেতনভুক্ত পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে না দিয়ে, একটি পুলিশ কর্মকর্তার হাতে তুলে দিতে চান, শুধু এজন্য যে পুলিশের অনেক টাকা, ঘুষের টাকা- সেই বাবা আজ এই রিলিফ চুরি দেখে কেন আঁতকে ওঠেন? তিনিই তো তার পরিবারে দুর্বৃত্তায়নকেই উস্কে দিয়েছেন।

যে গণমাধ্যম কর্পোরেট দুর্বৃত্তায়নকে রক্ষা করছে, পরিবেশ বিনষ্টকারীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে, সেই গণমাধ্যমই আবার এই রিলিফ চুরি নিয়ে বিস্তর রিপোর্ট করছে। কারণ অপেক্ষাকৃত ছোট দুর্নীতি নিয়ে নির্ভয়ে বলা যায়, আর এইসব তথ্যে সরাসরি অমানবিকতা ফুটে থাকে বলে খবর হিসেবে তা ভাল ভোগ্যপণ্য।

নতুন করোনার ভয় একদিন চলে যাবে। হয়তো ওষুধ আসবে নয়তো ভ্যাকসিন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি পরতে বিরাজমান চুরি বা দুর্বৃত্তায়ন কিভাবে যাবে? কোন ওষুধে?

বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন এমন ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, যে দুর্বৃত্তায়নের এই চক্র থেকে বের হতে হলে আমাদের দরকার নতুন গণতান্ত্রিক রাজনীতি যা অল্প কিছু মানুষের না, নিশ্চিত করবে দেশের অধিকাংশ মানুষের উন্নয়ন। কিন্তু তা কোন সহজ বিষয় না।

ক্ষমতার পালা বদল হলেও মানুষের মুক্তি মেলে না।

ছবির কপিরাইট Leonardo Cendamo
Image caption সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবি: ক্ষমতার পালা বদল হলেও মানুষের মুক্তি মেলে না।

কঙ্গনের স্বৈরশাসক

দেশে দেশে এই সংকট নিয়ে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবি লিখেছেন ”Anthills of the Savannah”। উপন্যাসে স্যাম, ক্রিস ও ইকেম ছোটবেলার তিন বন্ধু। কঙ্গনের স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে স্যাম ক্ষমতা গ্রহণ করলে, ক্রিস হলেন তথ্য কমিশনার ও ইকেম হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকার সম্পাদক।

স্যাম একজন দুর্বৃত্ত পরায়ণ শাসক হয়ে ওঠেন, বঞ্চিত করতে থাকেন জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। এদিকে বন্ধু ইকেম একজন নীতিবান বুদ্ধিজীবী, স্যামের কাজের ঘোরতর সমালোচনা করতে থাকেন। স্যাম ক্ষুব্ধ হয়ে ইকেমকে ক্রিসের অসম্মতি সত্ত্বেও বরখাস্ত করে।

এক গুপ্তহত্যায় প্রাণ হারান ইকেম। স্যাম আজীবন রাষ্ট্রপ্রধান হবার নেশায় নানারকম দুর্বৃত্ত চালাতে থাকলে, এবার ক্রিসও স্যামের বিরুদ্ধে চলে যায়। একসময় ক্রিস ও স্যাম উভয়কে হত্যা করে ক্ষমতায় আসে তাদের বিরোধীরা।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চার হলে, তাদেরকে দমনের সব পন্থা অবলম্বন করে রাষ্ট্রযন্ত্র। এই উপন্যাসে আমরা দেখি ক্ষমতার পালা বদল হলেও মানুষের মুক্তি মেলে না। সমাজে যখন রোগের বিশাল উপসর্গের মত ফুটে থাকে দুর্বৃত্তায়ন, তখন বিবেকবান বুদ্ধিজীবীদের জন্য নৈতিক দায়িত্ব হয়ে ওঠে সেসব নিয়ে সমালোচনা করা।

ঢাকায় রিলিফের অপেক্ষায়, ২০-০৪-২০২০।

ছবির কপিরাইট SOPA Images
Image caption ঢাকায় রিলিফের অপেক্ষায়: ”যদি মরতে হয় না খেয়ে, করোনা দিয়ে কি হবে?”

‘রাজনীতি বিমুখ বুদ্ধিজীবী’

তবে, দুর্নীতিতে ছেয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশে আমরা দেখি কিভাবে বুদ্ধিজীবীরাও এই দুর্নীতির সুবিধাভোগী হয়ে ওঠেন এবং শেষপর্যন্ত এই দুর্নীতিকে বেড়ে উঠতেই সহায়তা করে থাকেন।

কবি ওতো রেনে কাস্তিও এরকম বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে লিখেছেন, ”রাজনীতি বিমুখ বুদ্ধিজীবীর পাল”।

”একদিন

জনতার মধ্যে সবচেয়ে সহজ-সরল মানুষ

আমার দেশের রাজনীতি বিমুখ বুদ্ধিজীবীদের

দাঁড় করাবেন

প্রশ্নের মুখোমুখি। তাদের জিজ্ঞেস করা হবে

কি করেছিল তারা

যখন তাদের জাতি মারা যাচ্ছিল ধীরে ধীরে ধুঁকে ধুঁকে-

ক্ষুদ্র ও একাকী

আগুনের এক মোলায়েম শিখার মতো।”

দেশের মানুষ আজ খাবারের জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। তারা বলছে,”যদি মরতে হয় না খেয়ে, করোনা দিয়ে কী হবে?” বৈশ্বিক দুর্যোগের এই নির্মম, করুণ পরিস্থিতিতেও আজ নেতাকর্মীরা আধপেট খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষের রিলিফ চুরি করছে।

এই অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এই রিলিফ চুরি অন্যান্য চুরির সাথে স্তরে স্তরে সম্পর্কিত। পাতি চুরি থেকে বৃহৎ চুরি আমরা দেখছি আর দেখছি। আর এই চুরি দেখতে দেখতে সমাজের যে নিরীহ, বঞ্চিত, অভুক্ত মানুষ সেও একসময় পড়ে যায় দুর্নীতির অন্ধকার চক্রে।

আরব্য রজনীর গল্প আলি বাবা চল্লিশ চোরে আমরা পড়ি, ডাকাতদের বিশাল মণি মুক্তার ভাণ্ডার পেয়ে কীভাবে, সহজে ধনী হবার পন্থা বেছে নেয় আলি বাবা। বাংলাদেশের নিরীহ আলি বাবাদের জন্য সামনে কোনো মণিমুক্তার ভাণ্ডারের স্বপ্ন নেই, আছে রিলিফ চুরি হবার, অনাহারে মারা যাবার দু:স্বপ্ন।