বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকার পরও মানুষজন পরীক্ষা করাতে পারছেন না -এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
পরীক্ষা করানোর জন্য অনেককে সরকারের উঁচু মহলে গিয়ে তদবির করতে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার সদস্য দেশগুলোকে যত বেশি সম্ভব করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পরীক্ষা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে সরকারী তথ্য অনুযায়ী এপর্যন্ত মাত্র ৯২০জনের পরীক্ষা হয়েছে যে সংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে নেহাতই অপ্রতুল।
১২দিন ধরে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ঢাকায় কুর্মিটোলা হাসপাতালে এবং আইইডিসিআর এ ধর্ণা দিয়েও করোনার পরীক্ষা করাতে পারেননি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী আতিকা রমা।
সেই অসহায় পরিস্থিতি নিয়ে তার ভিডিও বক্তব্য এবং লেখা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তবে তিনি একা নন, আরও অনেকে এমন অভিযোগ করেছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সিনিয়র নার্স আজিজা সুলতানা অনেক কঠিন সময় পার করে এখন কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, ১০ দিন ধরে অনেক চেষ্টা তদ্বিরের পর পরীক্ষার জন্য তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
“অনেক জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যাথা নিয়ে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। তারা আমাকে বলে এখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না। তারা আইডি হাসপাতালে রেফার করে। সেই হাসপাতাল বলে যে, আমাদের কাছে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা করানোর কোনো সরঞ্জাম নাই। তারা আমাকে হোম কোয়ারন্টিনে পাঠায়।কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি”
এরপর অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের পরিচালক আজিজাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
“এখানেও অনেক চেষ্টা তদ্বির করে ভর্তি হই। এখানেও করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বা কোনো চিকিৎসা হচ্ছিল না। তারপর অনেক চেষ্টা, ফোন এবং অনেক হাই লেভেল থেকে তদ্বির করার পর বুধবার পরীক্ষার জন্য আমার নমুনা নিয়েছে।”
ঢাকার মিরপুর এলাকায় একজন বয়স্ক ব্যক্তি করোনার সব উপসর্গ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘোরার পর তার মৃত্যু হওয়ার আগ মুহুর্তে পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়েছিল – তার পরিবার এমন অভিযোগ করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকায় চাকরিজীবী একজন নারী এবং একজন যুবক জানিয়েছেন, তারা অসুস্থতা নিয়ে করোনাভাইরাস সন্দেহে আইইডিসিআর এর হটলাইনে যোগাযোগ করে পরীক্ষার করানোর প্রশ্নে কোনো সদুত্তর পাননি।
বৃহস্পতিবারে তারা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও পরীক্ষা করাতে পারেননি।
রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলছিলেন, পরীক্ষা বাড়ানো না হলে পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা সম্ভব হবে না।
“টেস্টিং না বাড়ালে সিদ্ধান্ত নেয়াও কঠিন হয়ে যাবে। কারণ আমরা বুঝতে পারবো না যে, কতটুকু এটা ছড়িয়েছে। অথবা এটা বাড়ছে নাকি কমছে।”
সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে
সমালোচনা-অভিযোগের মুখে শেষপর্যন্ত এই পরীক্ষা এবং নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রমের পরিসর কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এই ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকায় ৩টি জায়গায় এবং চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী এপর্যন্ত ৯২০জনে পরীক্ষা করা হয়েছে।
এই সংখ্যা এখন অনেক কম বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তারা মনে করছেন, কমিউনিটি সংক্রমণের বিষয়ে সঠিক চিত্র পাওয়ার জন্য পরীক্ষা কয়েকগুণ বাড়ানো প্রয়োজন।
তবে স্বাস্থ্য অধিদ্পতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমাদের যাদের পরীক্ষা করতে হবে, তাদের সংখ্যা আগে কম ছিল। এখন আমরা মনে করছি যে পরিস্থিতি বোঝার জন্য আমাদের টেস্ট বাড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, “ঢাকার বাইরে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে একটু সময় লেগে যাচ্ছে। বরিশাল ছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহরে এই পরীক্ষা শুরু করার ব্যবস্থা আমরা করছি।”