সরকারের প্রক্ষেপণ অনুসারেই আরো প্রায় তিন যুগ লেগে যেতে পারে
শামীম রাহমান
আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় মেট্রোরেল এমআরটি-৫-এর নর্দান রুটের গ্রাউন্ড ব্রেকিং তথা নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এ মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশ পাতালপথে (আন্ডারগ্রাউন্ড), আর সাড়ে ছয় কিলোমিটার অংশ নির্মাণ করা হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য যে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দিয়েছে সরকার, তাতে এ মেট্রোর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০২৮ সালে।
এর আগে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতেই ঢাকার প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এমআরটি লাইন-১ নামে অভিহিত মেট্রোটির পাতালপথ অংশ গড়ে তোলা হবে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। আর নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ হবে উড়ালপথ অংশ। বর্তমানে ঢাকার পূর্বাচলে এ মেট্রোর জন্য ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে মেট্রোর মূল অংশের নির্মাণকাজ এখনো শুরু করতে পারেনি ডিএমটিসিএল। এরই মধ্যে বাড্ডা, নতুন বাজার, কমলাপুরসহ ১২টি স্টেশনে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ নির্মাণের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে হাতিরঝিল এলাকায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, এমআরটি লাইন-৫, সাউদার্ন রুটের জন্য সংযোগ করিডোর, ট্রান্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড হাব নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজন আরো জমির, যেগুলো অধিগ্রহণের জন্য এখনো পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমতিই পায়নি ডিএমটিসিএল। এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা, যা আরো বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এমআরটি লাইন-১-এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁইয়া। প্রকল্পটির কাজ ২০২৮ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
চলমান ও নির্মাণকাজ শুরুর অপেক্ষায় থাকা এ তিনটি ছাড়াও ঢাকায় আরো তিনটি মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমটিসিএল। আশুলিয়া-সাভার-গাবতলী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কমলাপুরে পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এমআরটি-২। কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে নির্মাণ করা হবে এমআরটি-৪। আর হেমায়েতপুর থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এমআরটি-৫-এর সাউদার্ন রুট। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবক’টি মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। যদিও বাকি তিন মেট্রোরেলের জন্য এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারী বা উন্নয়ন সহযোগীই চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার।
তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলছেন, তারা প্রকল্পগুলোর জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এমআরটি লাইন-৫, সাউদার্ন রুটের কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু হবে। আমরা ডোনার পেয়ে গেছি। এডিবি আসছে, প্রায় চূড়ান্ত। দ্রুত আমরা কাজ শুরু করব, টেন্ডারে যাব। এমআরটি-৪-এর জন্য কোরিয়া আগ্রহ দেখিয়েছে। ইনশা আল্লাহ এটাও হয়ে যাবে। আর এমআরটি-২-এর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন সংস্থা আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি, কোরিয়া আগ্রহ দেখাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য ফিট হবে সেটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করব।’
২০৩০ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোনো দৈবদুর্বিপাক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ইনশা আল্লাহ আমরা সময়মতো কাজ শেষ করতে পারব।’
ঢাকার ছয় মেট্রোরেলের বাইরে সাবওয়ে নাম দিয়ে সমজাতীয় আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সংস্থাটি ঢাকায় সাবওয়ে নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করেছে। সংস্থাটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০২ কিলোমিটার, ২০৪০ সালের মধ্যে আরো ৮৫ কিলোমিটার এবং শেষ ধাপে ২০৫০ সালের মধ্যে ৭১ কিলোমিটার সাবওয়ে লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার ‘ধীরে এগোনো’র নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। সে হিসেবে এটি বাস্তবায়ন করতে আরো প্রায় তিন যুগও লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে (পিপিপি) নির্মাণাধীন এ এক্সপ্রেসওয়ে গড়ে তোলা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। ২০২৪ সালে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যেভাবে ধীরগতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে সময় লাগতে পারে আরো বেশি। তবে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে প্রকল্পটির কাজ।
অন্যদিকে গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়ে যাবে। যদিও এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণকাজ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। বারবার দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এবং নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পটি সমালোচনার মুখে পড়েছে। প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরেই শেষ করার কথা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম। ২০২৭ সালের মধ্যে গুলিস্তানের মধ্যে আরেকটি বিআরটি লেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে তিনটি রিং রোড বা বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো আউটার রিং রোড, মিডেল রিং রোড ও ইনার রিং রোড। এরই মধ্যে আউটার ও ইনার রিং রোড নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, মদনপুর, ভুলতা হয়ে গাজীপুরের কড্ডা থেকে ঢাকা-ইপিজেড বাইপাইল দিয়ে হেমায়েতপুর পর্যন্ত।
ইনার রিং রোডের দৈর্ঘ্য হবে ৮৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার সড়ক আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী, সোয়ারিঘাট হয়ে পোস্তগোলা, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ গিয়ে শেষ হবে। আর ডেমরা থেকে বালু নদের তীর ঘেঁষে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার হবে আরেকটা অংশ। আর মিডেল রিং রোড হবে হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-মদনপুর-ভুলতা-বাইপাইল হয়ে হেমায়েতপুর পর্যন্ত। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অন্তত পাঁচ-সাত বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
ঢাকার চারপাশে ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ বৃত্তাকার একটি রেলপথ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মূল উদ্দেশ্য রাজধানীতে গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনের অংশ বৃদ্ধি এবং যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখা। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে এরই মধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে। রেলপথটির সিংহভাগ অংশ উড়ালপথে ও কিছু অংশ পাতালপথে নির্মাণ করতে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন না হলেও ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে এখন পর্যন্ত সরকারের যে পরিকল্পনা, তাতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলতে থাকবে। যদিও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সঠিকভাবে সমীক্ষা না হওয়া, নকশা ও পরিকল্পনার দুর্বলতা, রাজধানীতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত জমির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
ঢাকায় সড়ক কম, গাড়ি বেশি। স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতেই মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়। এর মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে দুটি মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে, একটির কাজ শুরু হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। চলমান রয়েছে দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। রামপুরা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরুর অপেক্ষায়। বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। চলমান এসব উন্নয়নকাজ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতেই মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়। এর মধ্যে একসঙ্গে অনেকগুলো সড়কের ওপর উন্নয়নকাজ চলার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। আমাদের উচিত ছিল বিক্ষিপ্তভাবে প্রকল্প না নিয়ে সমন্বিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। একটা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরেকটির কাজ শুরু করা। তা না করে আমরা একসঙ্গে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।’
ঢাকায় যোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে আরেকটি বড় সমস্যা হলো জমির স্বল্পতা। এ কারণে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। স্টেশনে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পথ নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ সময় লেগেছে। বিমানবন্দর-কমলাপুর মেট্রোরেলেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় পরিকল্পনাধীন অন্য প্রকল্পগুলোও জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা। ঢাকার জন্য একটি সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) রয়েছে সরকারের। এ পরিকল্পনার আলোকেই ঢাকায় মেট্রোরেল, বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রিং রোডের মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু আরএসটিপির বাইরে গিয়ে ঢাকায় বৃত্তাকার রেলপথ, সাবওয়ের মতো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে ও সেতু কর্তৃপক্ষ। আবার যোগাযোগ অবকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি সংস্থার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিযোগিতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সংস্থাগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে যথাযথভাবে সমীক্ষা না করা, যথাযথভাবে নকশা প্রণয়ন না করারও অভিযোগও উঠছে নিয়মিতভাবে। এগুলোর কারণেও উন্নয়ন প্রকল্পের গতি অনেক ধীর হতে দেখা গেছে। বাড়তি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয়ও।
সামগ্রিকভাবে ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো রাজধানীবাসীর কতটা কাজে লাগবে, জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে চলমান ও পরিকল্পনাধীন প্রকল্পগুলো আদতে ঢাকার যানজট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। ঢাকার যানজট নিরসনে বাস ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ফুটপাতের সংস্থান করা সবচেয়ে জরুরি। কারণ ঢাকার সিংহভাগ মানুষ হয় বাসে চড়ে, না হয় হেঁটে যাতায়াত করে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কথা চিন্তা করে এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন শুধু উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহী করে তুলবে। মেট্রোরেল বিআরটির মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ঢাকায় প্রতিদিন যত মানুষ চলাচল করে তার সামান্য অংশই এসব গণপরিবহন কভার করবে। ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়টি ভুল নীতিতে চলছে।’