মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও সংস্থাটির সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্তের জন্য দায়ী বা জড়িতদের বিষয়ে চলতি বছরের মে মাসে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে দেশটি। যদিও এ নীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয়া হয় গত মাসে। তারও আগের মাস আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়কের ঢাকা সফরকালে সামনে আসে দুর্নীতিতে জড়িত বাংলাদেশীদের সম্পদ জব্দের বিষয়টি। তবে এমন সব কঠোর পদক্ষেপের মধ্যেও বাংলাদেশীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ইস্যু বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স প্রতি মাসেই দেশভিত্তিক ভিসা ইস্যুর তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নন-ইমিগ্র্যান্ট বা অন-অভিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ২০ হাজার ২৩৫ ভিসা ইস্যু করেছে। চলতি বছরের একই সময়ে ভিসা ইস্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৯১টি। এ হিসাবে আট মাসে ভিসার হার বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
কূটনীতিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ বাড়ছে বাংলাদেশের। বছরে প্রায় ৬০ হাজার লোক এদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের নজির রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ভ্রমণ কিংবা ব্যবসার কারণ দেখিয়ে ভিসা পেয়েছেন। আবার অনেকে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতেও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। সাধারণ বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রেও দেশটির সঙ্গে যোগাযোগের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। প্রতি বছর শুধু শিক্ষার্থীই যাচ্ছেন ১০ হাজারের মতো। তাদের সঙ্গে অনেক সময় পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনরাও যাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও যাতায়াত রয়েছে। কাজেই ঊর্ধ্বগতিটা স্বাভাবিক।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতিসম্প্রতি ভিসানীতির যে ঘোষণা এসেছে সেটা সাধারণ মানুষের জন্য নয়। ভিসানীতির উদ্দেশ্য হলো শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও অন্য সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যেহেতু ভিসানীতি প্রযোজ্যের সুযোগ কম, ফলে স্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে ভিসা ইস্যুর সংখ্যায়। যারা নির্বাচনসংক্রান্ত নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন না, তাদের ক্ষেত্রে ভিসানীতি প্রয়োগের প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় কোনো সাধারণ মানুষ ভিসানীতির আওতার মধ্যেই পড়েন না। নীতিটি প্রকৃতপক্ষে খুব সিলেকটিভ। যুক্তরাষ্ট্র জানে কারা এ ধরনের কাজে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। আর সেই সংখ্যাটা খুব একটা বেশি হওয়ার কথা না। সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভিসা সংখ্যায় যে উল্লম্ফন সেটা খুব স্বাভাবিক।’
ব্যুরো অব কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে বাংলাদেশী অন-অভিবাসীদের ২৫ থেকে ২৮টি ক্লাস বা শ্রেণীতে ভিসা দেয়া হয়েছে। এসব শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে এ টু, বি ওয়ান, বি ওয়ান/বি টু, বি টু, সি ওয়ান, সি ওয়ান/ডি, সি টু, সি ডব্লিউ ওয়ান, সি ডব্লিউ টু, ই টু, এফ ওয়ান, এফ টু, জি ওয়ান, জি টু, জি ফোর, এইচ ওয়ান বি, এইচ ফোর, আই, জে ওয়ান, জে টু, কে ওয়ান, এল ওয়ান, এল টু, ও থ্রি, আর ওয়ান, টি টু, টি থ্রি, টি ডি। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালের আট মাসের মধ্যে প্রতি মাসেই ইস্যু হওয়া ভিসার সিংহভাগই বি ওয়ান/বি টু শ্রেণীর। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভিসা শ্রেণীর সংজ্ঞা অনুযায়ী ব্যবসা ও ভ্রমণকে উদ্দেশ্য দেখিয়ে সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন আবেদনকারী অন-অভিবাসী বাংলাদেশীরা।
এদিকে ২০২২ ও ২০২৩ সালের আট মাসের ভিসার পরিসংখ্যানে উল্লম্ফন দেখা গেলেও গত মে মাসে ভিসানীতি ঘোষণার ঠিক পরের মাসেই ভিসা ইস্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। মে মাসে ভিসা ইস্যুর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮২১, জুনে তা কমে গিয়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫৫৮টি। জুলাইয়ে আরো কমে হয় ৪ হাজার ৫০২টি। আগস্টে ইস্যু হওয়া ভিসার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩৪৮টি।
মে মাসের পর ভিসা ইস্যু হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মে মাসে ঘোষণার পর থেকে ভিসানীতি নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এমনটাও হতে পারে অনেকেই যারা বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা ভয়ের কারণে আবেদন করছেন না। যদি রিজেক্ট হন, সেই ভয় থেকে অনেকে আবেদন করছেন না হয়তো।’
বনিক বার্তা