ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার কোনো শক্তি দেশে নেই : তথ্যমন্ত্রী

ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার কোনো শক্তি দেশে নেই : তথ্যমন্ত্রী – ফাইল ছবি

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড: হাসান মাহমুদ এমপি বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার শক্তি দেশে নেই।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। যারা সত্যিকার অর্থে এই দল করেন, তারা নিজের পরিবারের চেয়েও দলকে বেশি ভালোবাসেন এবং দলকে বেশি সময় দেন। যারা রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়ে দল করেন, তাদের কাছে একজন কর্মীর চাওয়া-পাওয়া বা সমস্যা পরিবারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।’

ড: হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭৫-এর পর জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে ভাগ করেছেন এবং প্রচেষ্টা ছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার। তখন অনেকে দম্ভ করে বলতেন আওয়ামী লীগ আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি অনেক স্নেহে ও মায়ের মমতায় আমাদের দলকে লালন করেছেন। তিনি চারবার দলকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। তিনি দলকে আগলে রেখেছেন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মনে করতো আওয়ামী লীগ আর কোনো দিন ক্ষমতায় যাবে না এবং চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার, তারাই বরং রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। আজকে দল পর পর চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। ১২ বছর হয়ে গেল আমরা জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করেছি। আমাদের দল পর পর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে সবাই এখন আওয়ামী লীগের নৌকায় উঠতে চায় বা আওয়ামী লীগ সাজতে চায়। কিন্তু, সবাইকে আওয়ামী লীগে নেয়া যাবে না।’

ড: হাছান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণসংগঠন হওয়ায় যে কেউ দলকে সমর্থন করতে পারেন, কিন্তু যে কেউ নেতৃত্বের আসনে আসতে পারেন না। নেতৃত্বের আসনে তাদেরকেই বসাতে হবে যারা দলের জন্য পরীক্ষিত, নেত্রীর জন্য পরীক্ষিত এবং পোড় খাওয়া নেতাদেরকেই নেতৃত্বের আসনে বসাতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, রাজনীতি একটি ব্রত। জনসেবার জন্য, দেশ সেবার জন্য এবং সবার সেবার জন্য। এটি মাথায় রেখেই সবার রাজনীতি করা প্রয়োজন। যারা রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা লাভের সোপান হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বা প্রতিপত্তি লাভের সোপান হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তাদের স্থান আওয়ামী লীগে হওয়া উচিত নয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এবং মানুষের ভাগ্য পারিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। শেখ হাসিনা ওই লক্ষেই দিবা-নিশি কাজ করে যাচ্ছেন।’

এ সময় তিনি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘দলের মধ্যে যারা পোড় খাওয়া লোক, পরীক্ষিত লোক ও অনেক অভিমানী কর্মী আছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে নেতৃত্বে বসাতে হবে। অনেক জ্যেষ্ঠ্য নেতা আছেন যারা বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে গেছেন, তারা দলের জন্য রক্ত, ঘাম, শ্রম ও যৌবনের সোনালী দিনগুলো উৎসর্গ করেছেন, তাদেরও খোঁজ-খবর রাখা প্রয়োজন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বদলে গেছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ। উত্তরাঞ্চলে আগে মঙ্গা ছিল। মঙ্গা এখন খাতায় ও বই-পুস্তকে থাকলেও বাস্তবে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলে ইপিজেড স্থাপন করেছেন, অনেক শিল্প-কারখানা হয়েছে, রংপুরে বিভাগ বাস্তবায়ন ও সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

মন্ত্রী বলেন, আগে বিদ্যুৎ মাঝে-মধ্যে আসত, এখন আর বিদ্যুৎ যায় না। দেশে প্রায় শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছেন। এখন গ্রামের রাস্তা আর শহরের রাস্তার মধ্যে পার্থক্য বলতে গেলে নেই। প্রত্যেক ইউনিয়নে দেড় থেকে দু’হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রকারের ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই জানে না যে শেখ হাসিনার নৌকা মার্কার সরকারের কাছ থেকে তারা এসব ভাতা পান। তাদেরকে তা মনে করিয়ে দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামাতসহ যে ২২ দলীয় জোট এবং আর একটি জোট ছিল, তা ভেঙে গেছে। তারা প্রতিবছর বলে এ বছরই সরকারেকে টেনে নামাবো। তারা এখন রশি ছিঁড়ে নিজেরাই পড়ে গেছে। এতে আমাদের প্রশান্তিতে থাকলে হবে না, নানা ষড়যন্ত্র তারা করছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, শত্রু সদা সজাগ। এ জন্য দলের ঐক্য-সংহতি বজায় রাখতে হবে। যেখানে সেখানে একে অপরের সমালোচনা করা সমীচিন নয়। সমালোচনা হবে অভ্যন্তরীণভাবে দলীয় ফোরামে কিন্তু জনসন্মুখে নয়।

এর আগে মন্ত্রী বাংলাদেশ টেলিভিশনের রংপুর উপকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ বেতারের রংপুর কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কেন্দ্র দু’টির কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

তথ্যমন্ত্রী দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে করে রংপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছালে তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। পরে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন-রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মধুসুদন দত্ত, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শহিদুল্লাহ কাওছার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মন্ডল মাওলা, মহানগর সভাপতি সফিউর রহমান সাফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল প্রমুখ।

সূত্র : বাসস