এ মাসেই মুক্তি মিলতে পারে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের

জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের উত্তপ্ত রাজনীতি এখন অনেকটাই স্তিমিত। নেই রাজপথের কোনো আন্দোলন। সরকারবিরোধী শিবির ব্যস্ত সংগঠন গোছাতে। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ায় কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তির বিষয়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। সরকারের নমনীয় মনোভাবে জামিনে মুক্তি মিলছে একের পর এক নেতাকর্মীর। দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী কারাগারের বাইরে মুক্ত বাতাসে ফিরতে পারলেও অন্তরীণ রয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরও অনেকের জামিনের অপেক্ষায় আছেন তাদের আইনজীবীসহ পরিবারের স্বজনরা। খুব শিগগির তাদেরও মুক্তি মিলবে বলে আশাবাদী তারা।

তবে গত বছরের শেষের দিকে যেসব নেতার বিরুদ্ধে পুরোনো মামলায় সাজার রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের মুক্তি আরও বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা আইনজীবীদের। তারা বলছেন, রায়ের কপি সম্পন্ন না হওয়ায় এবং তা পেতে বিলম্ব হওয়ায় এ জটিলতা বাড়ছে। গত এক বছরে সারাদেশে শতাধিক মামলায় প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেছেন আদালত, যাদের মধ্যে অনেকে কারাবন্দি।
বিএনপির দাবি, গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুরু হয় সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান। ওই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সারাদেশে ১ হাজার ১৮৪ মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ সময়ে ২৭ হাজার ৫১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়, একজন সাংবাদিকসহ মৃত্যুবরণ করেন ২৮ জন। ৯ হাজার ৭০৪ জন আহত হন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দলটির আইনজীবীরা জানান, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর জামিনে মুক্তি না মিললেও এখন তা ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে। সরকারের নমনীয় মনোভাবে সম্প্রতি আইনি প্রক্রিয়ায় তা আরও গতিশীল হয়েছে। এ কারণে কারাগারে আটক বেশির ভাগ নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আবার এখনও অনেক নেতাকর্মী কারাবন্দি রয়েছেন। তাদের মুক্তির প্রক্রিয়াটিও দ্রুত

করা হচ্ছে।

তারা বলেন, জামিনে মুক্তি পাওয়া নেতাদের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ নেই। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজুর রহমান মুসাব্বিরসহ আরও অনেকে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলো ‘এক দফা’ আন্দোলন থেকে সরে এসেছে। শান্তিপূর্ণ আর নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে তারা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে দল গোছানোয় মনোনিবেশ করেছে। পাশাপাশি বিগত আড়াই মাসের আন্দোলনে সারাদেশে কারাবন্দি নেতাকর্মীকে মুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে।
অন্যদিকে নির্বাচন শেষে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান থেকে সরকার অনেকটা সরে আসে। সরকারের এমন মনোভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জামিনে বেরিয়ে আসতে পারছেন। এর মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান রুয়েল ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের অনেক নেতাকর্মী সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলায় জামিন হয়েছে অনেক আগেই। একটি মামলার জটিলতায় আটকে আছে এ নেতার মুক্তি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর ওই মামলার শুনানি রয়েছে। ওইদিন তিনি জামিন পেতে পারেন বলে আশাবাদী আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল।

বিএনপি মহাসচিবের মতো একটি মামলা জটিলতায় কারাবাস দীর্ঘ হচ্ছে আরেক সিনিয়র নেতা আমীর খসরুর। ওই মামলার শুনানিও ১৪ ফেব্রুয়ারি রয়েছে বলে জানান তাঁর আইনজীবী। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৯টি মামলায় জামিন হয়েছে। বাকি দুটি মামলার শুনানির প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতে সরকার সারাদেশে ক্রাকডাউন শুরু করে। এখনও গ্রেপ্তার চলছে। দেশের আইন ও বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে যেসব মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেসব মামলায় শুরুতেই জামিন মিলত। দলের আইনজীবীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কারাবন্দি সবাই মুক্তি পাবেন।

দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী বের হতে পারলেও দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো নেতা জামিনে মুক্তি পাননি। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

samakal