৪ ডিসেম্বর ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধি
আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সহায়ক ও শেখ হাসিনার সহযোগী হিসাবে পরিচিত পাওয়া হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকরা এবার ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে লুটপাট নিয়ে তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে। জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হাইকোর্ট বিভাগের আওয়ামী বিচারকরা ইদানিং এরকম নানা নির্দেশনা ও চটকদার কথা-বার্তা বলছেন। অথচ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় মূল সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আওয়ামী বিচারকরা।
এই হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের আওয়ামী বিচারকরাই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনাকে জোর করে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বিরোধী দলের শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এই হাইকোর্ট বিভাগের আওয়ামী বিচারক (বাকশাল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইনায়েতুর রহিম) কথিত দণ্ডকে দ্বিগুণ করেছে। যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলা চলে। এভাবে প্রতিটি পদে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠাকে নির্বিঘ্ন করতে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের আওয়ামী বিচারকরা পদে পদে সহায়কের ভুমিকা পালন করে দেশের অর্থভাণ্ডারকে ফতুর করতে সহায়তা করেছে। আবার এখন তারা ব্যাংকের লুটপাটের ঘটনাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টার পাশাপাশি মানুষের ক্ষোভ থেকে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে ব্যবহারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক যখন দখলে তখন কি আওয়ামী বিচারকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন? দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম অবস্থায়ও মানুষের অধিকার রক্ষায় এই আওয়ামী বিচারকদের কোন শব্দ নেই। বরং ক্ষেত্রমত শেখ হাসিনার নিপীড়নকেই সাপোর্ট করেছেন এই অওয়ামী বিচারকরা। দেশের মানুষ যখন ফুঁসে উঠেছে তখন তারা লোক দেখানো নির্দেশনা দিয়ে নিজেদের গা বাঁচানোর অপচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের নির্দেশনায় দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউকে তদন্ত করে আগামী ৫ই এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে রোববার (৪ঠা ডিসেম্বর) আওয়ামী বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সেই প্রতিবেদনগুলো আমলে নিয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন।
ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউকে তদন্ত করে আগামী ৫ই এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, আদেশের সময় আদালত বলেছে, আমরা কোনো পক্ষ না। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মনে করছি, এটার সঠিকতা যাচাই করার জন্য অনুসন্ধান করা দরকার।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ঋণ পেয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, যদিও তাদের সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা।
গত কয়েক বছরে এই ব্যাংকটি ছাড়াও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মালিকানায় এসেছে।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্য, সিমেন্ট, ইস্পাত, পরিবহন, জাহাজ, আবাসন, ট্রেডিং, টেক্সটাইল, শিল্পপণ্য, গণমাধ্যমসহ নানা ব্যবসা আছে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক এস আলম গ্রুপের।
এস আলম ছাড়াও অবৈধভাবে ঋণ পেয়েছে নাবিল গ্রুপ নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক তাদেরকে পাইয়ে দিয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যদিও এই গ্রুপের খুব বড় ব্যবসা আছে এমন নয়।
এমনকি ২৪ বছর বয়সী একজনকে ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে কোম্পানি নিবন্ধনের এক মাসের মধ্যে। তার ব্যবসার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না।
গত ৩০শে নভেম্বর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী। তখন আদালত তাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় রিট করতে বলে।