এমন আলোচনার উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল পেছানো নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে একাধিক নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে কথা বলেছেন। পাশাপাশি গতকাল বুধবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও পুনঃতপশিলে তাঁর দলের অনাপত্তির কথা জানিয়েছেন।

ফলে দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। পর্দার আড়ালে নানা গুঞ্জন থাকলেও বিএনপির অধিকাংশ নেতা কারাগারে এবং যারা বাইরে আছেন, তারাও আত্মগোপনে।

এমন পরিস্থিতিতে তপশিল পেছানোর উদ্দেশ্য কী হতে পারে– এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, তপশিল পেছানোর বর্তমান আলোচনার উদ্দেশ্য তাঁর কাছেও পরিষ্কার নয়। শুধু বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এই আলোচনা চলছে– এটা হলফ করে বলা যাবে না। তবে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের প্রধান বড় তিন দলকে সংলাপের জন্য চিঠি দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। কিন্তু শ্রম অধিকার নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ্য হচ্ছে। ফলে পশ্চিমা বিশ্বের চাপ সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মাথাব্যথার কারণ না হলেও অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের। কারণ বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের একটা বড় অংশই পশ্চিমাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই এ-সংক্রান্ত ব্যবসায়ী এবং দেশের মানুষের জন্য এটি একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, রাজনৈতিক বিষয় না হলেও অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সরকারি দল একটা সুযোগ তৈরির অংশ হিসেবে তপশিল পেছানোর বিষয়ে অনাপত্তির অবস্থান নিতে পারে।

ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পর্দার আড়ালে কী ঘটছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কেউ হয়তো মন্তব্য করতে পারবে না। কিন্তু কোনো ধরনের সমঝোতার উদ্যোগ ছাড়া পুনঃতপশিলে লাভ নেই। তিনি বলেন, সরকার হয়তো তপশিল পিছিয়ে হাতে আরও কিছু সময় নিয়ে আরও অনেক দলকে নির্বাচনে আনতে পারবে; কিন্তু তাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বীকৃতি পাওয়া যাবে না।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তিনটি দলকে চিঠি দিয়েছে হয়তো এই বিবেচনায় যে, তারা অতীতে কোনো এক সময় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। দেশে অন্য অসংখ্য রাজনৈতিক দল থাকলেও কারও সামর্থ্য নেই ১০০ থেকে ১৫০ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া। এই ক্ষমতা শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে। অন্য দলগুলো বেশির ভাগ সময় নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো একটি দল নির্বাচনে না এলে এই দেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এই অঙ্ক আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নিজেরাও জানে। তাই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে ফলপ্রসূ উদ্যোগের বিকল্প নেই। সব আলোচনা প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হতে হবে– এমন বাধ্যবাধকতা নেই। পর্দার আড়ালেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যেতে পারে। অথবা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি মত পরিবর্তন করে নির্বাচনে যদি আসে, সে কারণেও তপশিল পেছানোর আলোচনা সামনে আসতে পারে।

সূত্র : সমকাল