এবার রাজধানীর পতন ঘটাতে হবে : ৬ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

 

আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশসহ সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে ওই সমাবেশ থেকে শেষ কর্মসূচি দেওয়া হবে। শেখ হাসিনাকে পরিষ্কার বলতে চাই– অনেক রোডমার্চ করেছি, সমাবেশ করেছি। এরপর রোডমার্চ নেই। সমাবেশও নেই। সব কর্মসূচি হবে রাজধানী ঢাকায়। এবার রাজধানীর পতন ঘটাতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের নূর আহমদ সড়কের নেভাল মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। চট্টগ্রাম বিভাগীয় রোডমার্চ শেষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে রাত ৯টার দিকে রোডমার্চ সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান। রোডমার্চ ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।

চট্টগ্রামের সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, অনেক মানুষকে গুম, খুন করেছেন। অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন। অনেক পিতাকে পুত্রহারা করেছেন। আর নয়। রাষ্ট্রের বাহিনীগুলোকে বলতে চাই। আর গুলি করবেন না। মামলা দেবেন না। শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করুন। এক দফা এক দাবি– আপনি পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।’

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ঘোষিত ১৫ দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে অনুষ্ঠিত এ রোডমার্চ কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে ১৫৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে চট্টগ্রাম গিয়ে শেষ হয়। রোডমার্চে পথে পথে মানুষের ঢল নামে এদিন। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালাকচুয়া খন্দকার ফুড গ্যালারি মাঠে প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রামের সমাবেশে নেতাকর্মীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে কষ্ট করেছেন, এই কষ্টের ফল পাবেন। আমরা টিকে আছি জনগণের শক্তিতে। জনগণ জেগে উঠেছে। কিন্তু ওরা টিকে আছে বন্দুকের নলের জোরে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। আজ লাখ লাখ মানুষ পথে পথে একটি কথাই বলেছে, শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি।’

সরকারের উদ্দেশে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৫ বছরে অনেক গুম-খুন করেছেন। ৪০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। এসব বানোয়াট মিথ্যা মামলা উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ বিশ্বের কাছে ভোট চোর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ জন্য ভিসা নীতি হয়েছে, স্যাংশন হয়েছে। ভোট চুরি করলে নিষেধাজ্ঞা আসবে। যারা পরোক্ষভাবে করবে তারাও নিষেধাজ্ঞায় পড়বে। শেখ হাসিনার দেশেও জায়গা নেই, বাইরেও নেই। ফ্যাসিস্ট কখনও জনগণের ম্যান্ডেট মানে না। তাই ভোট চোরকে পাহারা দিতে হবে।

মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।

দুপুর থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা ট্রাকে ও বাসে করে এসে সমাবেশে যোগ দেন। দুপুরের মধ্যেই লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। সমাবেশস্থল নগরের কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনসংলগ্ন নেভাল মোড়ে চারদিকে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বিকেল ৩টা থেকে নূর আহমদ সড়কসহ আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আলমাস সিনেমা থেকে লাভলেইন, সিআরবি, নেভাল রোডসহ আশপাশের অলিগলিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।

সকালে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালাকচুয়া খন্দকার ফুড গ্যালারি মাঠে প্রথম সমাবেশে মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘আমেরিকা থেকে ঘুরে এসেছেন খালি হাতে। বহু চেষ্টা করেছেন ভিসা নীতি বাতিলের। যুক্তরাষ্ট্র শোনেনি। বাংলাদেশের মানুষও শোনে না আপনার কথা। এ অবস্থায় আপনি পদত্যাগ করুন। একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।’

সকাল থেকেই বৃষ্টি হলেও রোডমার্চ ঘিরে নেতাকর্মীরা মূল সড়কের দু’পাশ ছাড়াও বিভিন্ন পথসভার স্থানে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় সমাবেশস্থলে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। নেতাকর্মীরা হাজার হাজার গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামগামী সড়কে অবস্থান নেন। হাজার হাজার মোটরসাইকেল, জিপ, মাইক্রোবাস ও খোলা ট্রাক মিলে ৭-৮ কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়িবহর দেখা গেছে। এতে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

কুমিল্লা থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে জেলার পদুয়ার বাজার এলাকায় পৌঁছালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানান। তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে মাঠে থাকতে হবে। তিনি আদি বিএনপি। তাই এসেছেন।

মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে রোডমার্চের বহর বিকেল পৌনে ৩টায় ফেনীর মহিপালের পথসভায় এসে পৌঁছায়। সেখানে মির্জা ফখরুল বলেন, ফেনীর মেয়ে খালেদা গর্ব মোদের আলাদা। তিনি আজ হাসাপাতালে। তাঁকে এই সরকার মেরে ফেলতে চাইছে।

বিকেলে মিরসরাই সদরে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত পথসভা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৪২ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে রোডমার্চ। উপজেলার সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ইউনিয়নসহ সীতাকুণ্ড পৌরসভার নেতাকর্মীরা রোডমার্চকে স্বাগত জানাতে সমবেত হন সীতাকুণ্ড পৌরসভার দক্ষিণ বাইপাস সড়কের পাশে।

বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর

রোডমার্চকে কেন্দ্র করে বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীকে বাধা, হামলা, ভাঙচুর ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বান্দরবান জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে রওনা হলে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ৪০টির অধিক গাড়ি ভাঙচুর এবং বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৪০ থেকে ৪৫ নেতাকর্মীকে মারধর করে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা যুবদল নেতা ফরিদুল আলমকে চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া এলাকা থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অপহরণ করে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। রোডমার্চে যাওয়ার পথে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট নতুন বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদের গাড়িবহরে হামলায় ১০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময়ে পাঁচটি বাস, একটি পিকআপ ও ১৫-২০টি অটোরিকশা ভাঙচুর করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, ঘটনাটি শুনেছেন। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। এ ছাড়া রোডমার্চে অংশ নিতে যাওয়ার সময় মতলব দক্ষিণ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সমকাল