ঢাকা
মাত্র ২২ দিনের ব্যবধানে দুই-দুইটি শিরোপা জিতল আবাহনী লিমিটেড। ডিসেম্বরে স্বাধীনতা কাপের পর আজকের সন্ধ্যাটা রাঙিয়েছে ফেডারেশন কাপ জিতে। রহমতগঞ্জকে ফাইনালে হারানোর পর আবাহনীর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উদ্যাপনটাও হলো দেখার মতো। কোচ মারিও লেমোসকে খেলা শেষে কাঁধের ওপর তুলে নাচিয়েছেন ফুটবলাররা। এরপর মাঠের মধ্যে বৃত্তাকার হয়ে নেচেছেন।
সোনায় মোড়ানো মৌসুম শুরুর পর এবার মারিও লেমোসের লক্ষ্য ‘ট্রেবল’ জয়। ২০১২-১৩ মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পর আর কোনো ক্লাব ঘরোয়া ফুটবলে এক মৌসুমে তিনটি ট্রফি জিততে পারেনি। আজ ম্যাচ শেষে লেমোস জানিয়ে দিলেন নিজের লক্ষ্যের কথা, ‘পরপর দুটি টুর্নামেন্ট জিততে পেরে আমি খুব খুশি। আর যখন সেটা হয় পরপর দুই মাসে, এটা তো অবশ্যই বিশেষ কিছু আমার জন্য। একজন কোচের লক্ষ্যই থাকে ক্লাবের জন্য শিরোপা জেতা। আমি সেটা পেরেছি। তবে আমার প্রধান লক্ষ্য লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ছেলেরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, এবার লিগটাও আমরা জিততে পারব।’
চোটজর্জর দল নিয়েও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর লেমোসের কণ্ঠে ছিল উচ্ছ্বাস, ‘চোটে পড়ে খেলতে পারেনি হৃদয়, সুশান্ত, দোরিয়েলতন, রাফায়েল। চারজনের মধ্যে দুজনই বিদেশি। এদের ছাড়া খেলাটা খুব কঠিন ছিল। তারপরও আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এ জন্যই বেশি ভালো লাগছে আমার। এই দলে একজন কলিনদ্রেস আছে। ও আসলে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। সে কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে।’
বসুন্ধরা কিংসের পর এবার আবাহনীতে এসেও শিরোপা উৎসবের মধ্যমণি কলিনদ্রেস। ম্যাচের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার তো জিতেছেনই, হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ম্যাচের পর উচ্ছ্বসিত কলিনদ্রেস বলছিলেন, ‘আমি আজ যেটুকু সুযোগ পেয়েছি, সেটাই কাজে লাগিয়েছি। আবাহনীতে এবং বাংলাদেশে সত্যিই সময়টা ভালো কাটছে আমার। (আবাহনী সমর্থকদের উদ্দেশে বলব) শাবাশ, শাবাশ!’
স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে গোল করেছিলেন রাকিব হোসেন। চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে আসা এই ফরোয়ার্ড আজ ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও গোল পেয়েছেন। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আবাহনীকে আরও শিরোপা উপহার দিতে চান তিনি, ‘আমি ট্রফি জেতার জন্যই এখানে এসেছি। যেকোনো ফাইনাল ম্যাচে গোল করাটা খুব কঠিন। আমি সেটা করতে পেরেছি। আমি এভাবেই গোল করতে চাই নিয়মিত।’
রাফায়েল আগুস্তো ও দোরিয়েলতন গোমেজের অনুপস্থিতিতে কোচ মারিও লেমোস আস্থা রেখেছিলেন রাকিবের ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে খুশি রাকিব, ‘আজ খেলতে নামার আগে কোচ বলেন, রাফায়েল নেই, দোরিয়েলতন নেই। একটু আলাদা করে আমাকে ডেকে নিয়ে কোচ বলেন, “তোমার ওপর অনেক দায়িত্ব।” গোল করার পর মনে হচ্ছিল, আমি কোচের কথা রাখতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে আমার।’
ফুটবল গোলের খেলা। ভাগ্যেরও খেলা। আমরা গোল দুটি ওদের উপহার দিয়েছি।
মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ পুরো ফিট ছিলেন না আজ। ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নামা ইমন জানালেন আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই সফল হয়েছেন তাঁরা, ‘আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড় নেই। তা ছাড়া টার্ফের মাঠে পরপর ম্যাচ খেলা কঠিন। কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে পারব। কোচ বলেছেন, আজ শতভাগের চেয়েও বেশি দিতে হবে তোমাদের। আমরাও সেটা পেরেছি বলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’
২০২০ সালের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেও ট্রফি নিয়ে উদ্যাপন করতে পারেনি রহমতগঞ্জ। সেবার বসুন্ধরা কিংসের কাছে ফাইনালে হেরেছিল পুরান ঢাকার ক্লাবটি। এবারও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে রহমতগঞ্জের। হারের পর হতাশ কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী ভাগ্যকেই দুষলেন, ‘ফুটবল গোলের খেলা। ভাগ্যেরও খেলা। আমরা গোল দুটি ওদের উপহার দিয়েছি। অথচ আমরাই আধিপত্য ধরে রেখেছি প্রথমার্ধে। কলিনদ্রেস একটা সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছে। সানডে চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। আসলে দিনটা আমাদের ছিল না।’