সর্বশেষ আপডেট: মঙ্গলবার আগস্ট ২৯, ২০২৩ ০৯:১৭ অপরাহ্ন
‘বিএনপি আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে, ক্ষমতায় এলে এক রাতের মধ্যে শেষ করে দেবে’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যটি অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি কেন এরকম একটি কথা বললেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানারকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১ দারুস সালাম বালুর মাঠে জাতীয় শোক দিবস ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা হারলে বাংলাদেশ হেরে যাবে, গরিব মানুষ হেরে যাবে, স্বাধীনতা হেরে যাবে। তাই তাকে বিজয়ী করতে হবে। তিনি হেরে গেলে বাংলাদেশর উন্নয়ন হেরে যাবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা খালি হাতে লড়ব। তবে আগুন হাতে আসলে আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিহত করব।’
এর ঠিক পরদিনই রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও মোটামুটি একই কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
এর দুদিন আগে ২৫ আগস্ট আরেকটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের শেষ চিহ্ন ধ্বংস করে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়।’
ক্ষমতাসীন দলের এই তিন নেতার বক্তব্যের সারাংশ মোটামুটি এক। তা হলো, ক্ষমতা হারালে তারা বড় ধরনের বিপদে পড়বেন।
নির্বাচন হবে, জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে। যদি তারা মনে করে নতুন কাউকে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার দেবে, তাহলে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। আর যদি জনগণের অধিকাংশ মনে করে যে, যেহেতু আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আওয়ামী লীগের থাকা উচিত, তাহলে তারা নৌকায় ভোট দেবে এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করবে। একটি দল টানা চার-পাঁচ মেয়াদ দেশ পরিচালনা করতে পারবে না—এমন কোনো বিধান নেই।
প্রশ্ন হলো, ক্ষমতা না থাকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ভর করবে কেন? রাজনীতির নিয়মই তো এই যে, কেউ ক্ষমতায় থাকবে, কেউ বিরোধী পক্ষে। এখানে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রশ্নটি কেন আসে? আমাদের দেশে ক্ষমতায় আরোহনের ব্যাপারটি কেন বাঘের পিঠে সওয়ারের মতো হয়ে গেলো যে, যতক্ষণ বাঘের পিঠে থাকতে পারা যায় ততক্ষণ নিরাপদ। পিঠ থেকে নামলেই বাঘের আক্রমণে মৃত্যু। আমাদের রাজনীতিবিদরা কেন ক্ষমতা-কাঠামোকে বাঘে পরিণত করলেন?
এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে আসছে তা হলো, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, আওয়ামী লীগের গত দিন মেয়াদে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ দেশের অবকাঠামো খাতে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে; করোনা মহামারি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি এখনো যে একটা মোটামুটি শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে—তার কৃতিত্ব তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই।
নানা সমালোচনার পরেও এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, আওয়ামী লীগ এখনো দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল। বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থন তার পেছনে রয়েছে। উপরন্তু গত তিন মেয়াদে ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের যেসব ক্ষমতাবান গোষ্ঠী নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে, তাদেরও সমর্থন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। তাহলে আওয়ামী লীগ কেন মনে করছে যে তারা ক্ষমতায় না থাকলে বিএনপি এক রাতেই তাদের ধ্বংস করে দেবে?
যে দলটি ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে; যে দলটির শীর্ষ দুই নেতার একজন বিদেশে, আরেকজন শারীরিকভাবে অসুস্থ; যে দলটির ভেতরে নেতৃত্বের কোন্দলের কথা মোটামুটি সবার জানা—সেই দলের হাতে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, এই ধরনের কথার কী অর্থ দাঁড়ায়?
একটি দল টানা ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে কীভাবে এতটা শক্তি অর্জন করলো যে তারা আওয়ামী লীগের মতো একটি দলকে এক রাতেই নিশ্চিহ্ন করে দেবে? এই ক্ষমতা তারা অর্জন করলো কীভাবে? ওবায়দুল কাদের যে বলেছেন, বিএনপি তাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে—এটাই বা কী করে সম্ভব? বিএনপির মতো একটি দল কীভাবে আওয়ামী লীগকে নিঃস্ব করে দিলো? যে দলটি টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় আছে, তারা কী করে নিঃস্ব হয়?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) একটি জরিপের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজকে সমর্থন দিয়েছেন দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ। খবরে বলা হয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণেই ৭০ ভাগ মানুষ মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো কাজ করছেন। সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, প্রথমত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাফল্য। এরপর রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তৃতকরণ।
এই জরিপের ফলাফল যদি সঠিক হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে দেশের ৭০ শতাংশ না হলেও অন্তত অর্ধেক মানুষ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পক্ষে আছেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে এই দলটিকে বিএনপি কীভাবে এক রাতের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দেবে?
বরং এই ধরনের বক্তব্য কি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল—সর্বত্রই দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া, তাদের আত্মবিশ্বাসের চিড় ধরানো এবং বিরোধী পক্ষকে আরও বেশি উজ্জীবিত করে না? নেতারা কি এই ধরনের কথা বুঝেশুনে বলছেন? একটি প্রবাদ আছে, ‘ভয় পেলে মানুষ বেশি কথা বলে।’ আওয়ামী লীগের নেতারা কি ভয় পাচ্ছেন? কেন তাদের ভয় পেতে হবে? এই ভয়ের কারণ কি বাংলাদেশে বিরোধী মত দমনের রাজনৈতিক ইতিহাস?
বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসা এবং বিরোধী মতের অনুসারী তথা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাওয়ারই ইতিহাস—যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন নানারকম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। যে মানুষটির ডাকে সাত কোটি মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো; যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে দেশকে স্বাধীন করলো—সেই মানুষটিই কি না নৃশংসভাবে নিহত হলেন এই দেশেরই কিছু মানুষের হাতে! গবেষণা বলছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বা তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটি শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীনই। দুর্বৃত্তরা শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিল। পৃথিবীতে আর কোনো জাতি তাদের জাতির পিতাকে এভাবে নৃশংসভাবে খুন করেছে?
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সমূলে ধ্বংস তথা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার আরেকটি বড় ঘটনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীতে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। কারা ওই হামলা করেছিল; তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখন পরিষ্কার। এই মামলার রায়ও হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের নৃশংসতা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল।
বিরোধী মত ও অনুসারীদের দমনে ১৯৭৫ ও ২০০৪ সালের মধ্যবর্তী সময় এবং ২০০৪ থেকে এ পর্যন্ত আরও নানারকম ঘটনা ঘটেছে। ব্যাপ্তি ও নৃশংসতায় সেগুলো এত বড় না হলেও প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। যেমন: কেউ গ্রেনেড মেরে তার প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে; কেউ হাজারো মামলা দিয়ে; সাদা পোশাকে দলের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গুম করে; ক্রসফায়ারে দিয়ে; ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে; আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিয়ে; বছরের পর বছর ধরে জেলে পুরে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বাইরে ধর্মীয় ও আদর্শিকভাবে ভিন্ন মত প্রকাশের কারণেও অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। অনেককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে পরমতসহিষ্ণু, ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যের মতামতকে বিবেচনায় নেওয়া, একটি লেখার বিপরীতে আরেকটি লেখার মতো বুদ্ধিবৃদ্ধিক চর্চার সংস্কৃতিটাই গড়ে তোলা যায়নি। যায়নি বলেই এক পক্ষ সুযোগ পেলেই আরেক পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়।
অথচ হত্যা ও খুন না করে, গ্রেনেড না মেরে, হাজারো মামলা না দিয়ে, কথিত ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে প্রতিপক্ষের লোকজনকে হত্যা না করে, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীকে দিয়ে সাদা পোশাকে ভিন্ন মতের অনুসারীদের ধরে নিয়ে গুম না করেও যে রাজনীতি করা যায়; এসব না করেও যে একাডেমিক তরিকায় ভিন্ন মত মোকাবিলা করা যায়; প্রতিপক্ষকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে না দিয়েও যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করা যায়—সেই সংস্কৃতিটাই গড়ে তোলা যায়নি।
যায়নি বলেই এখন ক্ষমতাসীনদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে যে, তারা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এক রাতের মধ্যেই বিরোধী পক্ষের দ্বারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন।
এই পরিস্থিতিটা তৈরি হলো কেন? এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য কোনো একটি দল বা ব্যক্তি কি এককভাবে দায়ী? কোনো রাজনৈতিক দল কি এই দায় এড়াতে পারে? দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, গণমাধ্যম, প্রশাসন, পুলিশসহ রাষ্ট্রের সকল বাহিনী এমনকি বিচার বিভাগও কি এই পরিস্থিতি তৈরির দায় এড়াতে পারে?
এও ঠিক যে পারস্পরিক দায় চাপিয়েও এই সমস্যার সুরাহা হবে না। বরং দেশ ও জনগণের স্বার্থনির্ভর একটি মানবিক ও সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাইলে এই দোষারোপের সংস্কৃতি থেকেও বের হতে হবে। রাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যদি হয় শুধু ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতায় গিয়ে বিরোধী পক্ষ নির্মূল করে আজীবনের জন্য চেয়ারে বসে থাকা; দেশ ও জনগণের স্বার্থের চেয়ে যদি ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ নিশ্চিত করাই রাজনীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সেই রাজনীতির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকে না।
জনগণের সঙ্গে যে রাজনীতির সম্পর্ক নেই, সেই রাজনীতি দেশের কোনো কাজে আসে না। বরং সেই জনগণ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক যুদ্ধ দেখে শুধু আহা উহু করে। আর এই বলে সান্ত্বনা খোঁজে যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দেশের পরিবর্তন হবে না। কিন্তু সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে যাদের, সেই রাজনীতিবিদদের নিয়তের মধ্যেই যখন গণ্ডগোল—তখন সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো কঠিন। কারণ সে কার পেছনে দাঁড়াবে? সে কাকে বিশ্বাস করবে?
আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)