নতুন কৌশলে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : নুর

দ্রবমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, জনবিচ্ছিন্ন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহতের প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসকাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করে দলটি। প্রেসক্লাব থেকে তাদের মিছিল শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

গণবিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, প্রতি মাসে সীমান্তে ৫-৭ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়। সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমাদের কেন রাজপথে দাঁড়াতে হবে, এটা তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা দেয়া, সীমান্তে বিজিবির সদস্যদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বিজিবি হত্যাকে কিভাবে একজন মন্ত্রী বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেন। ২০০১ সালেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিজিবি তৎকালীন বিডিআর যখন বিএসএফকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলো, ১৬ জন বিএসএফ নিহত হয়েছিলো। তখন বিডিআরের মহাপরিচালককে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো। অর্থাৎ সীমান্তে ভারত দখল, হত্যাযজ্ঞ চালালেও আমরা কিচ্ছু বলতে পারবো না। এই হচ্ছে ভারতীয় তাবেদার সরকারের নতজানু নীতি।

তিনি বলেন, ক্ষমতার জন্য এরা ভারতের গোলামি করছে। আমাদের পরিস্কার কথা, আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতের গোলামি করলেও এদেশের মানুষও ভারতের গোলামি করবে না। ভারতের জনগণের সাথে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নাই। তবে আমাদের আপত্তি ভারতের শাসকদের পলিসি, নীতি নিয়ে। তাই দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষা করতে হবে।

নুর বলেন, তাই ভারতীয় আধিপত্য হঠাতে আমরা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছি। আপনারা কেউ ভারতীয় পণ্য কিনবেন না৷ এ দেশে কোনো ভারতীয় রেস্টুরেন্ট, শো-রুমে ঢুকবেন না। ভারতীয় পণ্যের বিকল্প আমাদের তৈরি করতে হবে, উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে স্বাবলম্বী করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে ভারতের কাছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে প্রশাসন, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সর্বমহলে ভারতীয় এজেন্ট রয়েছে। এদেশে সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগকেও বর্জন করুন, রাজপথে নামুন। ১০ ডিসেম্বর, ২৮ জুলাই, ২৮ অক্টোবরের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কৌশলে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, গণতন্ত্রের বিজয় অনিবার্য। আমরাই জয়ী হবো।

দেশে একসাথে দুটো সংসদ রয়েছে উল্লেখ করে নুর বলেন, এই অবৈধ সংসদের অধিবেশন ডাকা হলে আমরা সংসদ অভিমূখে কর্মসূচি দেবো। জনগণের গণআন্দোলনেই সরকারের পতন হবে, ইনশাআল্লাহ।

দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেন, একজন বিজিবি সদস্যকে গুলি করে বিএসএফ হত্যা করলো, কিন্তু সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, তিনি কোনো উত্তর দেননি। নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ মন্ত্রীদের এসব কথার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ ভারতের তাবেদার সরকার। আওয়ামী লীগের হাতে গোলামির জিঞ্জির, আর আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পিন্ডির জিঞ্জির ভেঙেছি, দিল্লির গোলামি করার জন্য নয়। ভারতকে বুঝতে হবে, এই দেশের জনগণ কেন তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। ভারতের সাথে আমরা সম্মান ও মর্যাদার সম্পর্ক চাই। গোলামির সম্পর্ক দেশের জনগণ অতীতেও মানেনি, এখনো মানবে না।

তিনি বলেন, ভারতের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে এই দেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক করুন। আমেরিকা, ইউরোপ, জাতিসঙ্ঘ গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বললেও লড়াই আমাদের করতে হবে, তারা এসে কিছু করে দেবে না৷ দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৯০-এর গণআন্দোলন সফল হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ১৫ বছর ধরে আন্দোলন হলেও, আন্দোলন সফল হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, কোথায় ব্যর্থতা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যোগ্য নেতৃত্ব, তরুণ নেতৃত্বকে আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রে সামনে আনতে হবে। তাহলে রাজপথের আন্দোলনে গতি আসবে, এবং সরকারের বিদায় নিশ্চিত হবে।

যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মুরশেদ মামুন বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, কিন্তু তাদের আধিপত্য, সাম্রাজ্যবাদী আচরণ আমরা মেনে নিতে পারি না। একেরপর এক লাশ সীমান্তে তারা আমাদের উপহার দিচ্ছে এটা বন্ধুর পরিচয় হতে পারে না।

যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান বলেন, আমাদের এই সংগ্রাম ভারতের জনগনের বিরুদ্ধে নয়, এই সংগ্রাম ভারত সরকারের সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে। ভারত সরকার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়েছে, একনায়কতন্ত্র, বাকশালী সরকার চেপে বসেছে।

যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলামের সঞ্চালায় আরো বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, ফাতিমা তাসনিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মশিউর রহমান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান, যুব অধিকার পরিষদের সহ সভাপতি ফয়সাল প্রমুখ।

nayadiganta