- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২৯ মে ২০২৩, ১৮:৪৬, আপডেট: ২৯ মে ২০২৩, ১৯:০৯
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কয়েকদিন আগে সরকার খুব লাফালাফি করে ছিল। এখন কিন্তু থেমে গেছে। তারা এখন বলছে আমরা সংঘাত চাই না। আলোচনা বসতে চাই। এক ভিসা নীতিতেই সরকারের লাফালাফি থেমে গেছে গেছে।
সোমবার (২৯ মে) জিয়াউর রহমান ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিউটে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার ঘোষণায় আমরা একটি স্বাধীন দেশ ও পতাকা পেয়েছি। এই মহান ব্যক্তির শাহাদৎ বার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজার স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, যেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। গার্ড দেয়ার জন্য সেনা সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তার কফিন দেখে সেই সুশৃঙ্খল বাহিনী তার লাইন ভেঙে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। তার জানাজায় ইমাম সাহেব দোয়ায় বলেছিলেন, হে আল্লাহ বাংলাদেশকে হেফাজত করো। তারা একটি কথাই বলেছিল, এমন প্রেসিডেন্ট পাবো কিনা জানি না। যতই তাকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করুক না কেন, কিন্তু তাকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবে না। এটা ধ্রুব তারা মতো স্পষ্ট।
তিনি আরো বলেন, দেশের কঠিন সময়ে এই জাতির সামনে ত্রাণ কর্তা হাজির হয়েছেন জিয়াউর রহমান। যতই যা লেখেন না কেন, তাকে কারো মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না। যেখানে ভবিষ্যৎ নেই, সেখানে তিনি আশার আলো তৈরি করেছিলেন।
মহাসচিব বলেন, তিনি খাল কেটে কৃষিতে সেচ কাজ করে ছিলেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বিজ এনে ছিলেন জিয়াউর রহমান। বিদ্যুৎতের উন্নতি কে করে ছিলেন? জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করেছিল। আর জিয়াউর রহমান বাকশাল বাতিল করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা লড়াই করছি, আমরা সংগ্রাম করছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান নেতৃত্বে আমাদের সংগ্রাম সন্নিকটে নিয়ে গেছি। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, মানুষ তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়।
সরকার বলছে এখন নাকি আমেরিকা থেকে রেমিটেন্স বেশি আসছে। কি এমন যাদু পেল? আমেরিকা গেলে সবাই বাড়ি ভিটা বিক্রি করে যায়। তারা আবার টাকা কোথায় পাবে এমন মন্তব্য করে মহাসচিব বলেন, ওরা চোর, এই চোরেরা টাকা পাচার করে এখন সেই টাকা ফিরে আনছে এখন। কারণ সরকার বলছে এদের নাকি আবার আড়াই পার্সেন্ট ইন্টেন্সিপ দিবে।
নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আমাদেরকে সব সময় ট্র্যাপে ফেলতে চায়, তারই আমাদেরকে সব সময় সাবধান থাকতে হবে। এরা আগুন লাগিয়ে আমাদের দোষ দিবে। এরা আগেও দিয়েছিল। এখন দিবে। তাই কোনো ট্র্যাপে পা দেয়া যাবে না।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান জীবনে তিনটি সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন, এক সৈনিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে তিনি সফল।
তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুঠপাট হচ্ছিল, সেজন্য তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বাতিল করে মুক্ত অর্থনীতি চালু করেছিলেন। এই আওয়ামী লীগ সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল করেছিল। আর জিয়াউর রহমান সুযোগ পেয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। সে কারণে রাজনৈতিকবিদ হিসেবে সফল। এ কারণে বর্তমান সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভয় পায়। সরকার বলে জিয়াউর রহমান নাকি মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি নাকি যুদ্ধ করেননি। এরা জিয়াউর রহমানের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রজন্মের কাছে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তৎকালিন মুক্তিযুদ্ধের অনেক বই থেকে কোড তুলে ধরেন। বাংলাদেশ, ভারত সামরিক বাহিনীর সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা বইয়ের লেখনী তুলে ধরেন ড. মোশাররফ।
তিনি বলেন, আজকে সারা বিশ্বে যে ব্লু অর্থনীতি নিয়ে কথা বার্তা হছে। অথচ সেই চিন্তা কিন্তু জিয়াউর রহমান ৪২ বছর আগে করেছিলেন। নীল অর্থনীতি ভাবনায় তিনি দেশের সুনামধন্য শিক্ষার্থী, বিজ্ঞানীদের কাছে উপস্থান করে গিয়েছিলেন। সরকার বলছে, এটা নাকি তার প্রমোদ করার জন্য করেছিলেন। এয়ার পোর্ট থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে, কিন্তু জনগণের মন থেকে তার নাম মুছে ফেলা যাবে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যারা বিএনপি করি। আমাদের লজ্জিত হওয়ার মতো কিছু নেই। গৌরব করার মতো ইতিহাস আছে। আমরা কোনো দিন জরুরি অবস্থা জারি করিনি। তারাই এ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। তাদের এক নেতা সামরিক শাসক এরশাদ জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। যারা ১/১১ সময়কে বলেছিল তাদের আন্দোলনের ফসল। আমরাই একমাত্র গণতন্ত্রকে রক্ষাকারী দল, গণতন্ত্রকে বুকে লালনকারী দল। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান আমলে দেশে শিল্পকারখানা হয়েছে। যে দেশটাকে বিশ্ব বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। তিনি একজন ব্যক্তি সাত কোটি বাঙালির মধ্যে প্রথম একজন পাকিস্তানি সেনার অস্ত্র কেড়ে নিতে তার সামনে বলেছিলেন, ‘উই আর রিভিল্ট’। যে শিল্পে কম সময় বেশি বেকার যুবকরা কাজ করবে সেজন্য তিনি গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন। এই একজন মানুষকে আমরা হারিয়েছি। তিনি মানুষের অন্তরে আছেন তিনি। কিন্তু স্বার্থবাদীরা তাকে ভুলে গেছে। যিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজ সেই দেশ গণতন্ত্র নেই। সব চুরি হয়ে গেছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান একজন শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি একজন সামরিক নেতাও ছিলেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ছিলেন। বিশ্বের বুকে তিনি বাংলাদেশের তুলে ধরেছিলেন। মুসলিম দেশগুলোকে আগামী বিশ্বের আধুনিকায়ণ করার জন্য তিনি শীর্ষ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশ্বে বাংলাদেশে পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে তিনি সম্মানের জায়গায় নিয়েছিলেন। তার আমলে জাপান কিন্তু বাংলাদেশের কাছে হেরে ছিল পররাষ্ট্র নীতির ভোটে। আমেরিকার ভিসা নীতি মালা আছে, কিন্তু বাংলাদেশকে কেন আবার ভিসা নীতি মালা দিল আমেরিকা। এটা প্রশ্ন আমার। তাও আবার নির্বাচনের সাত মাস আগে। এর মানে হলো গণতন্ত্র ফিরে আনতে হবে, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর কারণে আমেরিকা ভিসা নীতি মালা হয়েছে। এর কারণে কোনো সন্দেহ নেই। এখন আওয়ামী এমন সুবোধ বালক সেজেছে, যাতে আমরা ভোট যাবো। কিন্তু তার হবে না। আমরা তার অধীনে ভোটে যাবো না। আমরাও ভোট চোরদের ধরবো। তারপর যা হয় সেটা বুঝতে পারবে ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান আধুনিক রাষ্ট্রের রূপকার। তিনি আমাদের অহংকার, তার কথা বলতে গেলে শেষ করা যাবে না। তিনি আমাদের এই দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে দিয়েছিলেন। আজকের যে সরকার দেখছেন, সেই সময় কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। তারা ধর্ষণ, খুন, হত্যা করে ছিল। সেদিন এরাই দেশটাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছিল যেমন আজ খাচ্ছে। এরা ১৪ ও ১৮ সালের মতো নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু তা আর করতে পারবে না। এবার তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, জিয়াউর রহমান মরেনি। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে এই আওয়ামী লীগ। আর তারা এখন মায়া কান্না করেন। আওয়ামী লীগের গুণ হত্যা, লুণ্ঠন, গুম, ধর্ষণ, খুন। জিয়াউর রহমানের জানাজায় যত লোক হয়েছিল তা পৃথিবীর কোনো দেশে হয়েছে মনে হয় না। আমাদের কোকোর মৃত্যুর পর জানাজায় যত লোক হয়েছিল এতে প্রমাণ করে বিএনপি কত জনপ্রিয় দল। আওয়ামী লীগ খেকো, তারা বিচার বিভাগকেও খেয়ে ফেলেছে। সব খেয়ে ফেলেছে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।