এক বছরে ১ হাজার কোটি ডলার কমলো রিজার্ভ

Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper

টাকার মান কমেছে ১৪.২১ শতাংশ

  • আশরাফুল ইসলাম
  • ২৫ আগস্ট ২০২৩

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ প্রতি মাসেই কমছে। যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হচ্ছে, ব্যয় হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। আর এ কারণেই ফি মাসে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের ২৩ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল যেখানে ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার, চলতি মাসে একই সময়ে তা কমে নেমেছে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ডলার। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমেছে ১ হাজার ৩ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে প্রকৃত হিসাবের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক দিচ্ছে তাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুদ আরো কমে নেমেছে ২ হাজার ৩১৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে মজুদ কমেছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি ডলার। শুধু বৈদেশিক মুদ্রার মজুদই কমছে না, একই সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৪.২১ শতাংশ। গত বছরের ২৩ আগস্ট এক ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৯৫ টাকা, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তার জন্য ব্যয় হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এ হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাস্তবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হচ্ছে ১১২ টাকা থেকে ১১৩ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি দরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। রফতানি আয়েও তেমন গতি নেই। কিন্তু বিপরীতে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে তারও ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বকেয়া পণ্য আমদানির দায়ও পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়েই আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ বেশি। যার প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে রিজার্ভ।

এ দিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত হিসাব প্রণয়ন করা হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন তহবিল, বিমানের ঋণসহ ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে অংশ বিনিয়োগ হয়েছে তা মোট রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। অথচ, আইএমএফ বলেছিল প্রকৃত রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ২৩ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুদ ২ হাজার ৩১৬ কোটি ডলারে নেমে গেছে। যেখানে জুলাই শেষে ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ডলারে। এ হিসাবে ২৩ দিনে প্রকৃত মজুদ কমেছে ১৯ কোটি ডলার। আর গত বছরের ২৩ আগস্ট মোট রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার। তখন রিজার্ভের নিট হিসাব করা হতো না। এ হিসাবে এক বছরে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমেছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি ডলার।

এ দিকে, রিজার্ভ কমে যাওয়ার সাথে সাথে ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়নও হয়েছে। চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডলারের দাম বাড়তে থাকে। সেই সাথে আন্তঃব্যাংকেও ডলারের দাম বেড়ে যায়। এতে বেড়ে যায় পণ্যের আমদানি ব্যয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের ২৩ আগস্ট প্রতি ডলার পেতে যেখানে ব্যয় করতে হতো ৯৫ টাকা, গত ২৩ আগস্ট তার জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে, এ হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাস্তবে এরও বেশি দরে ডলার লেনদেন হচ্ছে। ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলার কেনা-বেচায় নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা মানছে না। ব্যাংকারদের সংগঠন যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ডলারে লেনদেন হচ্ছে তার চেয়েও বেশি দরে। রেমিট্যান্স আহরণ করচ্ছে ১১২ টাকা দরে। অথচ নিজেদের সিদ্ধান্ত ছিল ১০৮ টাকা। আর বেশি দরে ডলার আহরণ করায় আমদানির ক্ষেত্রে বেশি দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে।