ঢাকা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গুম হতো, পরে লাশ পাওয়া যেত। এখন কোনো যুদ্ধ নেই, শত্রুর সঙ্গে লড়াইও হচ্ছে না। অথচ তরুণ-যুবকদের তুলে নিয়ে গুম করে দেওয়া হচ্ছে। কী ভয়াবহ। তাদের একমাত্র অপরাধ যে তারা পরিবর্তন চায়, তারা তাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আজ সোমবার সকালে গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১০ বছর পূর্তিতে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যারা সত্তরোর্ধ্ব বা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, তারা ভাবতেই পারিনি যে বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যখন ছাত্র ছিলাম, সেই সময়ে আমরা দেখতাম লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে এ গুমের ঘটনা ঘটছে। স্বৈরাচার বা একনায়কতন্ত্রীরা জনগণের আন্দোলনকে দমন করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চাইছে। কিন্তু এই বাংলাদেশে গত ১২ বছরে আমরা দেখছি তার চেয়েও ভয়াবহ।’
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এ গুম সংস্কৃতির চালু বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকতে চায়। এটা তাদের পুরোনো অভিলাষ যে “ক্ষমতায় চিরদিন আমরাই থাকব যত দিন বাংলাদেশ থাকবে।” তখনো একইভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিল বাকশাল করে। কিন্তু টিকতে পারেনি। এখন কৌশলটা বদলে দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে আবারও একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা তারা করছে। এখানে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, তাদের তারা নিশ্চিহ্ন–নির্মূল করতে চায়।’
এ পরিস্থিতিকে ‘অক্টোপাসের মতো দম বন্ধ করা পরিবেশ’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা সে চেষ্টা করছি। সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে অবশ্যই সে ধরনের আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হব। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ ভয়াবহ দানব পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।’
বিরোধীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই কান্নার শেষ করতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। তা না হলে এ দেশে কারও কান্না থামবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আজ বেঁচে থাকার অধিকারই বড় হয়ে উঠেছে। মৌলিক অধিকার তো অনেক পরের কথা। গণতন্ত্রের মুখোশ পরে স্বৈরতন্ত্র চলছে, যা স্বৈরশাসনের চেয়ে অনেক নিকৃষ্ট।
ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামানকে ১৮টি গুলি করে হত্যার বিষয়ে স্ত্রী মুনিয়া আক্তারের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক গুলিতে মানুষ মারবে, এটাতে তারা (সরকার) নিশ্চিত হতে পারে না। ওরা মনে করে, এই শত্রুকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা দরকার। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওদের লক্ষ্য ছিল যে বিএনপি-জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।
‘ইলিয়াস আলীসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শিরোনামে বিএনপি এ আলোচনার করে। আলোচনা সভায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর, ছেলে আবরার ইলিয়াস, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বক্তব্য দেন।