- অসীম আল ইমরান, বগুড়া থেকে
- ১৯ জুন ২০২৩, ১৯:০২, আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩, ১৯:৫১
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ লড়াই নয়। তোমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছো তাদেরকে রাজপথে নামতে হবে। তাহলে এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে স্লোগান ধরেন,‘এক দফা, এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ’।
সোমবার (১৯ জুন) বগুড়া সেন্ট্রাল স্কুল মাঠে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকেও জাগ্রত করতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার তারুণদের নিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়াতাবাদী যুবদল, স্বেচ্চাসেবক ও ছাত্রদল।
আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন, কোনো মানবাধিকার নেই, সেই স্বাধীনতা আজ তোমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছো তাদেরকেই উদ্ধার করতে হবে এমন আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ছিল না, সেই গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আজ আবার সেই গণতন্ত্রকে খেয়ে ফেলেছে এই আওয়ামী লীগ। আজ ফের তোমাদের দায়িত্ব নিতে হবে এই গণতন্ত্রকে উদ্ধারে। যেমন নেতৃত্ব দিয়ে উদ্ধার করেছিলেন দুলু সাহেবরা।
সমাবেশে আসা এক মেয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলে, তারা আমার মেয়ে, ছেলের মতো। তাদেরকে এই সরকার চাকরি দেয়নি। কারণ তারা আওয়ামী লীগ করে না বলে। পরিবার বিএনপি হওয়ার কারণে। যে সরকার রাজনৈতিক কারনে চাকরি দেয় না। যে সরকার বেকারদের চাকরি দিতে পারে না। দেশের মেধাবীদের একটা কর্মসংস্থান করে দিতে পারে না। এরা আবার উন্নয়নের কথা বলে।
‘আওয়ামী লীগ বলে উন্নয়ন নাকি দেখতেই পারি না আমরা, এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক-দু’টি উড়াল সেতু করাই কি উন্নয়ন। যে দেশের মানুষ দু’মুঠো ভাত খেতে পারে না। তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো ভাবে পড়াতে পারে না। এটাকে কি উন্নয়ন বলা যায়?
আওয়ামী লীগের প্রশংসা পত্র না থাকলে চাকরি হয় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, তাদের লোক বলেছে, দেশটা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, গিলে খেয়েছে এই আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের কথা তুলে ধরেন তিনি। উনি তো তাদের লোক।
হীরক রাজার কথা বলে তিনি বলেন, ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’। এই সরকার এত কাপুরুষ, এত ভীতু, তারা এ সমাবেশের কারণে গাড়ি চলতে দেয়নি। গাড়ি চললে বগুড়াতে এত লোক হতো যাদের জায়গা দেয়া সম্ভব হতো না।
‘আমরা লুট বন্ধ করতে চাই, মানুষের অধিকার ফিরে দিতে চাই। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন,‘অনেক করছেন দেশের মানুষের জন্য’। কী করেছেন? তিস্তার পানি বণ্টন আনতে পারেন নাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারেন নাই। কি করলেন তাহলে!’
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু দিন আগে বললেন বিদ্যুৎ ফেরি করে বিক্রি করবেন, কিন্তু এখন সেই বিদ্যুৎ কই গেল? সব লুট করে, পাচার করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। এরা সব খেয়ে শেষ করে দিয়েছে।
আমরা মানুষের অধিকার, ভাতের, ভোটের লড়াই করছি। এটা আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ লড়াই নয় জানিয়ে তিনি বলেন, তোমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছো তাদেরকে রাজপথে নামতে হবে। তাহলে এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এ সময় মির্জা ফখরুল স্লোগান ধরেন, ‘দফা এক, দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ’।
‘আজ পরিষ্কার কথা, নির্বাচন অবশ্যই এ দেশে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের সব মামলা থেকে মুক্তি দিতে হবে। তারপর নির্বাচন হবে এ দেশে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে মোবাইলে ১০০ টাকা ভরলে ৩০ টাকা আওয়ামী লীগের পকেটে চলে যায়। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে ৩০০ টাকা কেটে নেয়।
তিনি বলেন, আজকে সরকার বিদ্যুৎ নাকি তারা খুবই উত্পাদন করেছে। তাহলে বিদ্যুৎ গেল কোথায়? আসলে এরা পুরো দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। তাই বলবো আজকে সময় হলো তরুণদের। তরুণ প্রজন্মকে আবারো ভোটাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভাতের অধিকার আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এর ফয়সালা হবে রাজপথে। আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে এবং ওই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আব্দুল খালেক, শাহিন শওকত, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল মতিন, আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান খোকনসহ স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মী ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদারের পক্ষ থেকে দু’শতাধিক মানুষের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত হন।
উল্লেখ্য, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা থাকায় সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা দুপুর আড়াইটা থেকে মাঠে প্রবেশ করেন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার প্রায় সব জেলার নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
তরুণ সমাবেশের আয়োজকেরা জানান, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার বেশকিছু উপজেলা থেকে রিজার্ভ করা গাড়ি সমাবেশে আসতে দেয়া হয়নি। বগুড়ায় এই তারুণ্যের সমাবেশের জন্য প্রথমে বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে আয়োজনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। একইদিনে জেলা যুবলীগ শহরের সাতমাথায় শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যুবলীগ আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারুণ্যের সমাবেশ সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়। যুবলীগও সোমবারের বদলে রোববার শান্তি সমাবেশ করেছে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ না করার কারণে অনেক মেধাবীদের চাকরি হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে গুম-খুন করা হচ্ছে। জামালপুরে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের সত্য ঘটনা প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতেই করে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করান টুকু।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, আমাদের তরুণ সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো বাধা বিপত্তি তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটাবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের এই ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হয়। তরুণ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান, জেলা যুবদলের সাবেক নেতা মাহফুজুর রহমান রিটন, জাহাঙ্গীর হোসেন, রাকিবুল ইসলাম শুভ প্রমুখ। এছাড়াও তরুণ সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি তথা চাকরি থেকে বঞ্চিত ছাত্র মওদুদ আহমেদ, এইচ এম ফজলে রাব্বি, জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাকসুদুল আলম, গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা ফারজানা ইয়াসমিন তুলি, নির্বাচন কমিশন থেকে চাকরি হারানো উপজেলা নির্বাচনী অফিসার নাজমুল ইসলাম সুমন, বক্তব্য রাখেন।