আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ মন্ত্রী ও এমপি এখন থেকেই আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ের কৌশল নিতে শুরু করেছেন। এ জন্য তাদের প্রথম টার্গেট উপজেলা নির্বাচন। তারা এই নির্বাচনে স্ত্রী, শ্যালক, সন্তান ও অনুগতদের প্রার্থী করাতে চাইছেন। আর পছন্দের প্রার্থী জয়ী হলে অনেকটাই নিরাপদ থাকবেন বলে মনে করছেন এমপিরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করেই দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও এমপি এমন কৌশল আঁটছেন বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নীতিনির্ধারক নেতা। তারা বলেছেন, গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১১ জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কমপক্ষে ২৯ জন নির্বাচনে জয় না পেলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন।
এ কারণেই অনেক মন্ত্রী ও এমপির মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ঘিরে এক ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক কাজ করছে। তাদের কেউ কেউ গত সংসদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না। তাই তাদের ধারণা, নিজের নির্বাচনী এলাকার উপজেলায় অপছন্দের কেউ নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন তাঁর আগামী দিনের প্রধান প্রতিপক্ষ।
এ জন্যই অনেক মন্ত্রী ও এমপি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, নিকটাত্মীয় এবং অনুগতদের প্রার্থী করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। কেউ কেউ পছন্দের প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশও করেছেন। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, হাতেগোনা কয়েকজন এমপি প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এই সংখ্যা খুব কম।
তবে ভেতরে ভেতরে অনেক উপজেলায় মন্ত্রী ও এমপির পছন্দের প্রার্থী থাকায় স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরোধ তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ফলে অনেক স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাঁকে দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির ছেলে সাদাত মান্নান অভি। তিনি তাঁর ছেলেকে এলাকার উন্নয়নে অংশীদার করার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নান সারিয়াকান্দি উপজেলায় তাঁর ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল ও সোনাতলা উপজেলায় ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটনকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিয়েছেন। তিনি তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের দল সমর্থিত চেয়ারম্যানদের তাগিদও দিয়েছেন।
নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী সমকালকে জানিয়েছেন, সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাঁর ছেলে আতাহার ইসরাক সাবাব চৌধুরী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি তাঁকে সমর্থন দেবেন।
নরসিংদী-৩ আসনের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকা শিবপুর উপজেলায় প্রার্থী হবেন তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম। তিনি তাঁকে সমর্থন জানাবেন। ফেরদৌসী ইসলাম শিবপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মহিউদ্দিন আহমেদ গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সিরাজদীখান উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রংপুর-১ আসনের আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-৫ আসনের জাকির হোসেন সরকার, গাইবান্ধা-২ আসনের শাহ সারোয়ার কবীর, কুষ্টিয়া-২ আসনের কামারুল আরেফিন, শেরপুর-১ আসনের ছানুয়ার হোসেন ছানু, ময়মনসিংহ-১ আসনের মাহমুদুল হক সায়েম, ময়মনসিংহ-৬ আসনের আব্দুল মালেক সরকার, ময়মনসিংহ-৮ আসনের মাহমুদ হাসান সুমন, কুমিল্লা-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ এবং কুমিল্লা-৫ আসনের এম এ জাহের। এ ছাড়া ২৯টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানরা।
samakal