উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এখন পর্যন্ত দলের ৬৩ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর জবাব আসাও শুরু হয়েছে। তবে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, নোটিশের জবাব যা–ই আসুক, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে যে ৬৩ নেতাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২৩ জন চেয়ারম্যান পদে, ২১ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৯ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁদের নোটিশ পাঠিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতজন নোটিশের জবাব দিয়েছেন বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নোটিশের জবাবে বলেন, তিনি কখনো মহিলা দল করেননি। তাঁকে মহিলা দলের নেতা সম্বোধন করে বিএনপির পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়ার যৌক্তিকতা কী, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। জবাবে আরও দু-একজন বলেন, তাঁরা বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই। দল তাঁদের মূল্যায়ন করেনি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা বলছেন, যেসব কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেনি, সেসব কারণ এখনো বহাল। বরং একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল আরও কর্তৃত্ববাদী ও বেপরোয়া হয়েছে। এখনো হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাবন্দী, সারা দেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মী আদালতে ঘুরছেন। এর বিরুদ্ধে বিএনপিসহ সব বিরোধী দল আন্দোলনে আছে। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে। এটি হবে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।
এসব কারণে এবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিএনপি আবার রাজপথে সরকারবিরোধী শক্ত আন্দোলন গড়ার চিন্তা করছে। এ অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত রাখার দিকে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ।
ইতিমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সবশেষ গত বুধবার নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি জলঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া বিরল উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাদেক আলী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ১২ নম্বর চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, সদস্য জহুরুল আলম এবং কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁ উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. হান্নান মিয়াকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু শেখ ফারুখ, পটুয়াখালী সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির রহমান ও কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে ‘অশুভ চক্রের সঙ্গে আঁতাত’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনকে মূল্য দেয় না। কারণ, এখানে ভোটের আগে ভোট হয়ে যায়। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, বুঝতে হবে সরকারি দলের কোনো টোপে পড়েছেন।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এই ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৩ জন নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে বিএনপির থানা-উপজেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতা রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৫ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর দলটির নেতৃত্বের চেষ্টা ছিল দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে ফেরানোর। এ লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত ও নেতাদের সব চেষ্টা-তদবির উপেক্ষা করেই প্রথম ধাপে ৬৩ জন নির্বাচন করছেন।
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কার করার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। এর মাধ্যমে দলটি তৃণমূলকেও সতর্ক করতে চাইছে, যাতে উপজেলা পরিষদের পরবর্তী ধাপে ভোটের মাঠে থাকা নেতারা সরে দাঁড়ান।
prothom alo