ঢাকা
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, দেশে উন্নয়নের নামে মুষ্টিমেয় মানুষ আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এই উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশকে যদি দেহ ধরা হয়, তাহলে বর্তমানে উন্নয়নের নামে রক্তশূন্য দেশে গয়না পরানো হচ্ছে। অথচ দেশের জীবনীশক্তি শুষে খাওয়া হচ্ছে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রচুর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয়ের প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইডিইবি) মিলনায়তনে জাপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৪তম জন্মদিনের এক আলোচনা সভায় জি এম কাদের এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বর্তমান উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছে না। প্রতিদিন দেশের মানুষ দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের ১০০ টাকা আয় হলে ধনিক শ্রেণির আয় হয় ২৮ টাকা। আর শতকরা ৫ ভাগ নিম্নশ্রেণির আয় হয় মাত্র ২৩ পয়সা। উন্নয়নের নামে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সব মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন। এটি শুধু পল্লিবন্ধুর দেশ পরিচালনার সময়ে হয়েছিল।
যমুনা বহুমুখী সেতুকে দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, এটি ছাড়া দেশে আর কোনো মেগা প্রকল্প প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়নি। তিনি বলেন, পদত্যাগের কারণে পল্লিবন্ধু যমুনা সেতু তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু সবকিছু প্রস্তুত করতে পেরেছেন। পরবর্তী সরকারগুলো এই পরিকল্পনায় যমুনা সেতু তৈরি করেছে।
জি এম কাদের বলেন, ‘সবাই বলেন, পল্লিবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, আসলে তিনি ছিলেন প্রকৃত নায়ক। আজীবন যুবক ছিলেন। কোনো ক্ষেত্রেই পরাজিত হননি তিনি। ৩২ বছর ক্ষমতা রাইরে থেকেও জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে টিকে আছে। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন পল্লিবন্ধু। তাই প্রতিপক্ষরা তাঁকে নানান অপবাদ দিয়েও সফল হয়নি।
জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জেলে অন্তরীণ অবস্থায় পাঁচটি করে আসনে যে নেতা বিজয়ী হন, তাঁকে স্বৈরাচার বলা হয় কোন মুখে? তিনি বলেন, পল্লিবন্ধুর সর্বশেষ বাজেট ছিল মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকার, যা বর্তমান সরকারের বাজেটের মাত্র দেড় শতাংশ। স্বল্প বাজেটে বেশি কাজ করার যে দৃষ্টান্ত পল্লিবন্ধু দেখিয়েছেন, তা বিস্ময় হয়ে আছে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘২০২১ সালে আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ছিল। এখন ২০ বিলিয়ন কেন? ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলো, কারও শাস্তি হলো না কেন?’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘যারা সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাড়া সবাইকে ঘৃণা করি। এরশাদ সাহেবকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি শুধু এই কারণে, তিনি জেলে থেকেও পাঁচটি করে আসনে এমপি হয়েছেন দুবার। পল্লিবন্ধু অত্যন্ত সুন্দর মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরেই আমি পল্লিবন্ধুকে ভালোবেসেছি।’
জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চরিত্রগত কোনো তফাত নেই। ক্ষমতায় গেলে তারা দুর্নীতি, দুঃশাসন, টেন্ডারবাজি ও দলবাজি করে। ৩৩ বছরে দল দুটি একমত হতে পারেনি কেমন করে একটি জাতীয় নির্বাচন হবে।
দেশের সব উন্নয়নের সঙ্গে পল্লিবন্ধুর ছোঁয়া জড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। পল্লিবন্ধু সব সময় গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করেছেন। কিন্তু এত দিনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে লুটপাটের রাজনীতি কায়েম করেছে। কম বাজেটে গণমানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে পল্লিবন্ধু যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেই রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কী হয়েছে, তা দেশের মানুষ দেখেছে। এখন কী হচ্ছে, তা–ও দেশের মানুষ দেখছেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, মীর আবদুস সবুর, সাইফুদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। সভায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।