- মীযানুল করীম
- ২৬ জুন ২০২০
রবিঠাকুরের কনিষ্ঠ আত্মীয় হয়েও অনেক ক্ষেত্রে তার তীক্ষè সমালোচক ছিলেন প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬)। বাংলা ভাষায় কথ্যরীতির প্রবর্তকরূপে পরিচিত এবং পাবনার সন্তান, এই যশস্বী লেখক সাহিত্যিক ‘রায় পিথৌরা’ ছদ্মনামেও লিখেছেন। সেই ‘পিথৌরা’ কথাটা এবার শোনা গেল বৃহৎ ভারতের সাথে ক্ষুদ্র নেপালের সীমান্তবিরোধ সূত্রে।
গত ৮ মার্চ উত্তর ভারতীয় প্রদেশ উত্তরাখণ্ডের (উত্তর প্রদেশের পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে কয়েক বছর আগে গঠিত আলাদা ‘রাজ্য’) পিথৌরা গড় ও লিপুলেখের সংযোগকারী একটি সড়ক উদ্বোধন করেন ভারতের প্রবল প্রতাপশালী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন শীর্ষ নেতা রাজনাথ সিং। কিন্তু এর পর থেকেই ভারত-নেপাল সীমান্তবিরোধ নয়া মাত্রা পেল। কারণ নেপালের দাবি, ‘এ ভূখণ্ড নেপালের, ভারতের নয়। অন্য দিকে, ভারত মনে করে পিচ্চি পড়শির ‘ছোট মুখে বড় কথা’ এটা। সড়কটির উদ্বোধনকালেই নেপালে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে নিজেদের আপত্তি জানিয়ে দিয়েছিল নেপাল সরকার। তখন ভারতকে নেপাল কূটনৈতিক পত্রও দিয়েছে; কিন্তু ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতর সাফ জবাব দিয়েছে, ‘ওই ভূখণ্ড নেপালের ছিল না কোনো সময়েই। তাই সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা ভারতের অধিকার।’
অবশ্য যে কারণেই হোক, নেপাল আর মুখ বুজে না থেকে সাহস দেখাতে শুরু করেছে। এর প্রমাণ হলো, কালাপানি, লিপুলেখ ও লিমপিয়াধুরাকে নেপাল রাষ্ট্রের ম্যাপে শামিল করে দেখানো। কাঠমাণ্ডুতে কেবিনেট মিটিং শেষে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে অর্থমন্ত্রী যুবরাজ খাটিওয়াদা জানান, ‘অচিরেই এই মানচিত্র হবে কার্যকর।’
নেপাল ও ভারতের মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১৬ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। বিহার, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড- এই তিন ভারতীয় প্রদেশের সীমান্তে নেপালি ভূখণ্ডের অবস্থান। নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর অবস্থান বিহারের রাজধানী পাটনা বরাবর উত্তরে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী উদ্যান এবং তার জীবনের প্রথম দিকের দীর্ঘ দিনের বাসস্থান কপিলাবস্তুও বিহার সীমান্তের অদূরে, নেপালের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
ক্ষুদ্র নেপাল ইদানীং বিশাল ভারতের কোনো চাপ কিংবা ‘বৈরী পদক্ষেপ’ মেনে নিতে চাইছে না। অনেকের মতে এর কারণ ভারতের প্রতিপক্ষ চীনের সাথে তার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা এবং বেইজিংয়ের ওপর নেপালের নির্ভরতা বেড়ে চলা। আর নয়াদিল্লির দৃষ্টিতে, তা চৈনিক আগ্রাসনের কম কিছু নয়। আঞ্চলিক বা মহাদেশীয় পর্যায়ে ভারত-চীন দ্বন্দ্বের সমান্তরালে বহমান রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতা ও দ্বন্দ্ব। তদুপরি, যুক্তরাষ্ট্র চায় এশিয়াতে তার নিজের নিছক প্রতিনিধিত্ব নয়, প্রক্সি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত যেন চীনের ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তি ও হস্তক্ষেপ রুখে দাঁড়ায়।
এই প্রেক্ষাপটে নেপালকে কেন্দ্র করে চীনের ভারতবিরোধী ‘আগ্রাসন’ রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদির দিল্লিকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক অ্যালিস ওয়েলসের বক্তব্য মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাবের প্রতিফলন। ওয়াশিংটনের থিংকট্যাংক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’কে তিনি বলেন, ‘যারা ভ্রান্তির ঘোরে রয়েছেন, তাদের কাছেই চীনা আগ্রাসন নিছক কাগজে কলমে। বরং ভারতকে এ বিষয়ে জানানো দরকার। আসলে ভারত এ সম্পর্কে সব কিছুই জানে।’ তবে চীনের সাথে এঁটে ওঠার ব্যাপার আছে। বিশেষত ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীনের কাছে কাশ্মিরসংলগ্ন বিরাট অঞ্চল হারানোর স্মৃতি আজো ভারতের দুঃসহ। অঞ্চলটি এখন ‘আকসাই চীন’ নামে অভিহিত। যা হোক, ওয়েলস বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অভিযানের একটা পদ্ধতি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অবিরাম এই আগ্রাসনের লক্ষ্য হচ্ছে স্থিতিশীলতায় পরিবর্তন আনা এবং আদর্শের রদবদল ঘটানো। এটা প্রতিরোধ করতে হবে।’
এএফপি এবং রয়টার্স পরিবেশিত খবরে একই সাথে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে হিমালয় সীমান্তে ভারতের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে চায় চীন। অতীতে হিমালয়ে সীমান্তবিরোধ ইস্যুতে চীন-ভারত যুদ্ধ ও সংঘর্ষ ঘটেছে একাধিক দফায়। ভারতের উত্তরে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে ‘বিচ্ছিন্ন সঙ্ঘাত’ বৃদ্ধি পাওয়া এবং দক্ষিণ চীন সাগরে কয়েক বছর ধরে চীনের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার মাঝে যোগসূত্র স্থাপনের প্রয়াস পাচ্ছেন ওয়েলসের মতো কেউ কেউ। চীন ব্রিটিশ আমলের ‘ম্যাকমোহন লাইন’ আজো মানে না। তাই চীন সরকার ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে নিজের মানচিত্রে শামিল করে দেখায়। নেপাল সরকার ১৮ মে তিনটি এলাকাকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে দেখিয়েছে। এগুলো নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের সাথে বিরোধ রয়েছে নেপালের। এটাকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মাঝে বেড়েছে উত্তেজনা। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে দিল্লির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়ে বলেছেন, ‘চীন নেপালকে উসকিয়ে দিচ্ছে ভারতের বিরুদ্ধে।’
সীমান্তে চীন বনাম ভারত বিরোধ কথার লড়াই ছাড়িয়ে মাঝে মাঝে অস্ত্রের লড়াইতে পর্যবসিত হচ্ছে। কেউ কারো কাছে হারতে রাজি নয়। বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ তারা। চীন ইতোমধ্যে বৃহৎ শক্তি হয়ে উঠেছে এবং ভারতও সে পর্যায়ে অচিরেই উন্নীত হতে আকাক্সক্ষী। উভয়ের মধ্যে দীর্ঘকালীন সীমান্তবিরোধের ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিককালে, চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বত এবং ভারতের সিকিম রাজ্যের মধ্যবর্তী সীমান্তে সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রও উপলব্ধি করছে, সঙ্ঘাত নয়, সংলাপেই তাদের সীমান্তবিরোধ মিটতে পারে। তাই কূটনীতিক অ্যালিস ওয়েলস সীমান্তে ভারতের দাবিকে সমর্থন জানালেও বলেছেন, ‘বিবাদের কূটনৈতিক সমাধানই উত্তম।’ অপর দিকে, দক্ষিণ এশিয়াতে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় একসময়ের রুশমিত্র ভারতের সাথে অন্তত দু’দশক ধরে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলেছে আমেরিকা। এরই অংশ হিসেবে ভারতে মোদির পূর্ববর্তী, মনোমহন সিং সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু চুক্তি করেছিল দেশের বামপন্থী মিত্রদের দূরে সরে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এক প্রকার স্বঘোষিত মুরব্বির ভূমিকা পালন করছে।
২৭ মের খবর, ভারত-চীন সীমান্তবিরোধ নিয়ে কাশ্মিরসংলগ্ন লাদাখের দুই উপত্যকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকে। অন্য দিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন লাদেখে। ১৬ জুন চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষে একজন কর্নেলসহ ২৩ জন ভারতীয় সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন। চীনের ৪০ জন সেনার মৃত্যুর দাবি করছে ভারত।
যা হোক, আলোচিত কালাপানি, লিপুলেখ ও লিমপিয়াধুরা নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন নয়। তবে ইদানীং এ সঙ্ঘাতের কারণ হিসেবে নেপালের ওপর ‘চীনা ভূতের আসর’কে দায়ী করছে ভারতের নীতিনির্ধারক মহল। যেমন ভারতীয় চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল নারাভানের অভিমত, ‘লিপুলেখের লিংক রোড নিয়ে নেপাল সরকারের আপত্তির পেছনে নেপাল নয়, অন্য কোনো দেশ রয়েছে।’ তিনি কলকাঠি নাড়ানোর জন্য অভিযোগের আঙুল নেপালের আরেক পাশের প্রতিবেশী মহাচীনের দিকে তুলছেন, তা বলা নিষ্প্রয়োজন।
বলা হয়, ক্ষুদ্র নেপাল উত্তরে চীন আর দক্ষিণে ভারতের মাঝে ঝধহফরিঃপযবফ বা চিঁড়াচ্যাপ্টা হয়ে আছে। ‘হিমালয়দুহিতা’ দেশটা উত্তর-পশ্চিম থেকে ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্বে প্রলম্বিত। আয়তনে আমাদের বাংলাদেশের কাছাকাছি। নেপালের অধীনেই ছিল বর্তমান ভারতের দার্জিলিং। ১৮৪০ সালে এটা ব্রিটিশদের করায়ত্ত হওয়ার পর একপর্যায়ে ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানীতে পরিণত হয়। ছয় হাজার ফুট উঁচু এবং নেপালি গোর্খা সম্প্রদায় অধ্যুষিত দার্জিলিং এখন একটি বিখ্যাত শৈলাবাস ও পর্যটনস্থল এবং পশ্চিম বাংলা রাজ্যের একটি জেলা। নেপালের সাথে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমপ্রান্তের বাংলাবান্ধার দূরত্ব বেশি নয়। সেখান থেকে নেপালের কোনো কোনো গিরিশৃঙ্গ শীতকালে দেখা যায়। নেপালের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বেশ কিছু বাংলাভাষীর বসতি। স্মর্তব্য, বাংলাদেশ ও নেপাল নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান সহজ ও লাভজনক করার জন্য অনেক আগেই ট্রানজিট চুক্তি সম্পন্ন করেছিল। তবে ভারতের বাধার কারণে কয়েক বছর যাবৎ এই ট্রানজিট কার্যকর হতে পারেনি। এ দিকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক বছর ধরে বহু নেপালি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।
আবার মানচিত্রের বিষয়ে আসা যাক। গত বছর ভারত তার নতুন মানচিত্রে কালাপানি ও লিপুলেখ অন্তর্ভুক্ত করেছিল। জবাবে এবার সীমান্তের এসব এলাকা নেপাল নিজের শামিল করে দেখায়। ফলে দু’দেশের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। নতুন করে উত্তেজনার কারণ হয়ে উঠেছে গত ২০ মে নেপালি প্রধানমন্ত্রী কেপি. শর্মা অলির বক্তব্য। তিনি স্বদেশের ওই মানচিত্র প্রকাশের পরে পার্লামেন্টে ভারতকে কঠোরভাবে কটাক্ষ করেছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভাষণে বলেছেন, ‘ভারত থেকে আসা ভাইরাস চীন ও ইতালির ভাইরাসের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী।’ নেপালে ভয়াবহ করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য তিনি অভিযোগ এনেছেন ভারতের বিরুদ্ধে। তার ভাষায়, যারা ভারত থেকে অবৈধ পন্থায় আসছেন, তারাই নেপালে এ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন। যথার্থ টেস্ট ছাড়াই বেআইনিভাবে লোকজনকে নেপালে ভারত থেকে আনার পেছনে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও দলনেতা দায়ী বলে তার বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, বিখ্যাত ‘মানসসরোবর’ পর্যন্ত হিন্দুদের তীর্থযাত্রা সুগম করতে লিপুলেখ গিরিপথ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা বানিয়েছে ভারত। এটি ‘নেপালের সার্বভৌমত্বে আঘাত’ বলে কাঠমাণ্ডু মনে করছে। কয়েক দিন আগে নেপাল জানায়, ‘ভারতের সীমান্তে অতিরিক্ত রক্ষী মোতায়েন করা হবে।’ এতে পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে দাঁড়ায়।
নেপালের দাবি, নেপালের ভূমিতে সড়ক তৈরি করে ভারত অতীতের চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ১৮১৬ সালে, অর্থাৎ ২০০ বছরেরও বেশি আগে, ভারতের তৎকালীন শাসক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নেপালি রাজা সই করেছিলেন সুগাউলি চুক্তি। এতে বলা হয়েছে, মহাকালি নদীর পূর্ব অংশ নেপালের। নিকট অতীতে ১৯৮৮ সালের বৈঠকেও ভারত নেপালের সাথে স্থায়ী সীমান্ত মেনে চলতে সম্মত হয়েছে। এসব কারণে নেপাল মনে করে, ভারত ওই সড়ক নির্মাণ করে ঠিক করেনি মোটেও।
বলা দরকার, এবার করোনা মহামারীতে নেপালের দু’পাশের পড়শি দেশ চীন ও ভারত বিপর্যস্ত এবং নিকটবতী বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষতির শিকার। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার, নেপালে এর প্রভাব সামান্যই।
নেপাল পার্লামেন্টে শেষাবধি তিনটি বিতর্কিত এলাকা নেপালের অন্তর্ভুক্তি সংবলিত নয়া মানচিত্র বিল পেশ করা হয়েছে। এলাকা তিনটি হলো ভারত সীমান্তের লিমপিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ। বিরোধী দলের চাপে এ বিল উত্থাপনের কাজে কিঞ্চিৎ বিলম্ব ঘটলেও প্রধান বিরোধী দল ও ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে দীর্ঘ দিন পরিচিত, নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ বিলের প্রতি দলের সমর্থন ঘোষিত হয়। বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন, ‘ভারতবিরোধী ও চীনের ঘনিষ্ঠ’রূপে অভিহিত কমিউনিস্টরা। পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ, প্রতিনিধি পরিষদে আইনমন্ত্রী শিব মায়ার উত্থাপিত বিলটির প্রতি ব্যাপক সমর্থনের পর উচ্চকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিলটি গৃহীত হওয়া নিছক ‘সময়ের ব্যাপার’ বলা হয়েছে। সংবিধান মোতাবেক, মানচিত্র পরিবর্তনসহ যেকোনো বিষয়ে সংবিধান সংশোনের জন্য তিন ভাগের দু’ভাগ সংসদ সদস্যের সমর্থন লাগে।
দীর্ঘকাল ধরে নেপালের অর্থনীতির বাস্তব নিয়ন্তা ছিল ভারত। নেপালি রাজনীতিতেও ভারতীয় ‘ছায়া’ অস্বীকার করা কঠিন। সেই ভারতের সরকার নেপালের মানচিত্র বদলের সর্বশেষ পদক্ষেপকে ‘কৃত্রিমভাবে দেশের সীমান্ত বাড়িয়ে নেয়া’ বলে মত দিয়েছে। বলেছে, একপক্ষীয় এহেন কার্যক্রম ইতিহাসের অনুকূল এবং প্রামাণ্য নয়। কথা হলো ভারত বিষয়টিকে যতই গুরুত্ব দিক, ভারতের গুরুত্ব নেপালের কাছে কমে গেছে।
উত্তর সীমান্ত নিয়ে চীন ও নেপালের সাথে ভারতের বিরোধ দিল্লির জন্য ‘গলার কাঁটা’ হয়ে আছে। এটা না যায় গিলে ফেলা; না যায় উগরে দেয়া। কত দিনে এর অবসান ঘটে, দেখার বিষয়।