বিএনপি’র সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সমমনারা

যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি এবং কর্মকৌশল নির্ধারণে বৈঠক করলেও তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। কর্মসূচির বিষয়টি ঝুলে আছে বিএনপি’র সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত জানাতে সময় নিচ্ছে বিএনপি। এজন্য সমমনা দল ও জোটগুলো অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও বিএনপি কী করতে চায় তা এখনো সমমনা দল ও জোটগুলোর কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়টি বিএনপিও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার করেনি। তবে আগামী দুই থেকে তিন মাস দল গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করতে চায় বিএনপি। পাশাপাশি জনসম্পৃক্তামূলক ইস্যুতে কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশে সাধারণ জনগণসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায় দলটি।

ইতিমধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ২৮শে মে থেকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। চলবে ১১ই জুন পর্যন্ত।

এসব কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আবারো নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চায় দলটি। এরমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা নেই। তবে যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলো নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। এরই অংশ হিসেবে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের অন্য দল এবং জোটগুলোও তাদের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে।

একগুচ্ছ কর্মসূচি প্রস্তুত: যুগপৎ আন্দোলনের একগুচ্ছ কর্মসূচি প্রস্তুত রয়েছে। তবে এই কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু বিএনপি’র স্থায়ী কমিটিতে এখনো আলাপ হয়নি। এমনকি লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের আলোচনার বিষয়গুলোও এখনো লিখিত আকারে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তোলা হয়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির  বৈঠক আগে প্রতি সপ্তাহে একবার হতো। কিন্তু কয়েক মাস ধরে সেটা নিয়মিত হচ্ছে না। সে কারণে বিষয়গুলো এখনো স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উঠেনি। তবে ইতিমধ্যে একগুচ্ছ কর্মসূচি প্রস্তুত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এসব কর্মসূচি হবে চলমান ইস্যুতে এবং দ্রব্যমূল্যেসহ জনসম্পৃক্তমূলক ইস্যুতে। আর বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলো নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এখন সারা দেশে যাচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি জনমত গঠন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হবে যে, আমরা কোন দিকে অগ্রসর হবো।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরে আমরা বলতে পারবো যে, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে কখন যাবো। তবে আমরা যেকোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

গত ১২ই মে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করে বিএনপি। ১৮ই মে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)’র সঙ্গে বৈঠকের করে দলটি। এরমধ্যে দিয়ে প্রথম দফায় বৈঠক শেষ হয়। দ্বিতীয় দফায় আবারো যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠক কবে নাগাদ ডাকা হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। খুব শিগগিরই এই বৈঠক ডাকা হবে বলে জানা গেছে। এসব বৈঠকে আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, কর্মসূচির নতুনত্ব ও ভিন্নতার বিষয়ে চুলচেরা-বিশ্লেষণ করা হয়।

তবে এই আন্দোলন লম্বা সময়ের জন্য হবে নাকি শর্ট টাইমের জন্য হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট হতে চায় সমমনা দল ও জোটগুলো। তারা বলছেন, এখন বিএনপি যে আন্দোলনের কথা বলছে, এটা একদফা দাবিতে হবে নাকি ৫ বছরের জন্য হবে- তা আগামী বৈঠকে আমরা তাদের কাছে জানতে চাইবো। কারণ লম্বা সময়ের জন্য আন্দোলন হলে তা সমমনা দল ও জোটগুলো চালাতে পারবে না। তাদের কাছে সেই শক্তি ও সামর্থ্য নাই।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমরা একটু সময় নিয়ে কর্মসূচিতে যেতে চাচ্ছি। এর আগে দল গোছানোর কাজ করতে হবে। আর কর্মসূচি এখনো সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে রয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এবিষয়ে আলোচনা চলছে। সামনে আরও আলোচনা হবে। আর চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণের পরেই কর্মসূচির বিষয়ে বলা যাবে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা তো কর্মসূচি পালন করছি। যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলো যার যার অবস্থান থেকে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে সামনে আরও বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঠিক করা হবে। সেখানে আমরা বিএনপিরও মনোভাব জানতে চাইবো।

Manabzamin